৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ২:৩১

ষষ্ঠ শ্রেণী : এক গণিতের সমাধান করতে লাগে

ষষ্ঠ শ্রেণীর গণিত বইয়ে ৩৭ পৃষ্ঠায় একটি অনুশীলনী রয়েছে, যা সমাধান করতে লাগে পাঁচ পৃষ্ঠা। গাইড বইয়েও এর সমাধান করা রয়েছে তিন পৃষ্ঠাজুড়ে।

রাজধানীর ষষ্ঠ শ্রেণীর একজন অভিভাবক এ বিষয়টি এ প্রতিবেদকে জানিয়ে বলেন, আমি আমার ছেলেকে গণিত করাই মাঝে মধ্যে। ষষ্ঠ শ্রেণীর গণিত দেখে আমার মাথা ঘুরে যায়। ৩৭ পৃষ্ঠার গণিতটি অনুশীলনী ১ দশমিক ৬ এর ২৪ নম্বর অঙ্ক। অঙ্কটি প্রথমে পড়লে মনে হয় তেমন কঠিন না। কিন্তু এর সমাধান করতে গিয়ে মাথা থেকে রীতিমতো ধোঁয়া বের হওয়ার অবস্থা হয়েছে আমার। আর ঘামে ভিজেছে শরীর।

অনুশীলনী ১ দশমিক ৬ এর ২৪ নম্বর অঙ্কটি এরকম : এক কৃষক তার ২৫০ শতাংশ জমির আট ভাগের তিন অংশে ধান এবং ১২ ভাগের ৫ অংশে সবজি চাষ করলেন এবং বাকি জমি পতিত রাখলেন।

ক) পতিত জমির পরিমাণ বের কর।
খ) সবজির বিক্রয়মূল্যের চেয়ে ধানের বিক্রয়মূল্য ২৪০০ টাকা কম হলে মোট কত টাকার সবজি বিক্রি করেছিলেন।
গ) সম্পূর্ণ জমিতে ধান চাষ করলে তিনি কত টাকার ধান বিক্রি করতে পারতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ অভিভাক বলেন, শিশুদের গণিত বই যে কত কঠিন করা হয়েছে এ অনুশীলনীটি তার একটি নমুনা মাত্র। বইয়ের সব গণিতই অনেক কঠিন।

তিনি বলেন, বইটিতে একটু চোখ বুলালে যে কেউ স্বীকার করবেন যে, এ বই ষষ্ঠ শ্রেণীর উপযুক্ত হতে পারে না। ষষ্ঠ শ্রেণীর শিশুরা এত কঠিন আর বড় গণিত ধারণ করতে পারে না। আমি আমার সন্তানকে এসব গণিত অনেক বুঝিয়ে বললেও সে বুঝতে পারে না। এত বড় গণিত সমাধান করতে করতে শেষ পর্যন্ত যেতে যে ধৈর্য্য আর মাথা খাটানো দরকার তা তাদের নেই। তা ছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয় হলো তাদের জন্য সরকারিভাবেই ১৪টি বই পাঠ্য করা হয়েছে। এত কঠিন গণিত বই আয়ত্ত করার জন্য তাদের যে সময় দেয়া দরকার ছিল তা দেয়া হয়নি। কারণ অন্য পাঠ্যবইওতো তাদের পড়তে হয়। তারপর গণিতের জন্য কতটুকু সময় থাকে। নভেম্বর মাসে ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। দেখা যায় গড়ে একটি বইয়ের জন্য তারা এক মাসও সময় পায় না। সারা দিন দীর্ঘ সময় ক্লাস করার পর বাসায় এসে সব বিষয়ের পড়া তৈরি করতে হয়। তার মধ্যে গণিতের পেছনে তারা কত সময় ব্যয় করতে পারে? দেখা যায় গণিতের পেছনে বেশি সময় দিলে অন্য বিষয়ে তারা পড়া তৈরি করতে পারে না।

শুধু ষষ্ঠ শ্রেণী নয়, বরং মাধ্যমিক এমনকি প্রাথমিকেরও তৃতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বর্তমানে গণিত বই অত্যন্ত দুরূহ আর ভারী করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের বয়স আর ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে। এ বিষয়ে আলোকপাত করে নয়া দিগন্তে আগেও একাধিকবার প্রতিবেদন করা হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণীর গণিত বই সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের কয়েকজন অধ্যাপকের সাথেও এর আগে কথা বলা হয়েছে এবং তারা প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণীর কঠিন গণিত বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/438460/