৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ২:২৯

আতঙ্কে বিনিয়োগকারী

শেয়ারবাজারে মন্দা কাটছে না। গত সপ্তাহে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক। বাজার আরও কমতে পারে- এ ধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকের রাখা সরকারি তহবিল তুলে নেয়ার জন্য আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এই তহবিলের আকার ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই টাকা তুলে নিলে শেয়ারবাজারেও এর প্রভাব পড়বে। সবকিছু মিলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আর বাজার পরিস্থিতি নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেছে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে ডিএসই, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন। বৈঠকে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ইতিবাচক কিছু আলোচনা হয়েছে।

জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক মো. রকিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। বাজারকে ভালো করার জন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিএসইসি সহায়তা করবে। এ ছাড়াও বাজারে কেউ কারসাজি করলে যত ক্ষমতাবানই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কমিশন। তিনি বলেন, বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেছেন, বাজারের স্বার্থে সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করা দরকার। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করবেন।

জানা গেছে, তিন মাস ধরে বাজারে অস্থিরতা চলছে। লেনদেন ও মূল্যসূচক দুটিই কমছে। দীর্ঘদিন পর সূচক ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বাজারের উন্নয়নে বিএসইসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রণোদনাসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও বাজারে তারল্যপ্রবাহ বাড়ছে না। গত সপ্তাহে ৫ দিনে ডিএসইতে ১ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩৯৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে ৫ দিনে ২ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। প্রতিদিন গড়ে ৪৪৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। এ হিসাবে গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ২৭০ কোটি টাকা। আর প্রতিদিন গড়ে লেনদেন কমেছে ৫৪ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে যা প্রায় ১২ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে মূল্যসূচক ৮২ পয়েন্ট কমেছে।

এদিকে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা রাখা সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংস্থার উদ্বৃত্ত ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। এ টাকা ফেরত নিতে নতুন আইন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মুহূর্তে ব্যাংকের পক্ষে টাকা ফেরত দেয়ার সক্ষমতা নেই। কারণ এই টাকা কয়েকটি খাতে বিনিয়োগ করেছে ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে ঋণ হিসাবে বিতরণ, সরকারি সিকিউরিটিজ, বিভিন্ন বন্ড ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ। আর বিতরণ করা ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ খেলাপি। এ কারণে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট চরমে। ফলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তা পুরো আর্থিক খাতে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। শেয়ারবাজারেও বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। সরকার টাকা ফেরত নেবে, নাকি মালিকানা বদল হবে, সেটি বিবেচ্য বিষয়। তিনি বলেন, ব্যাংকে জমানো বিনিয়োগ করা আছে। কিন্তু গ্রাহক চাইলে ব্যাংক তা ফেরত দিতে বাধ্য। সেটি কীভাবে ম্যানেজ করবে, তা ব্যাংকের বিষয়।

https://www.jugantor.com/todays-paper/economics/218350/