৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১১:৩৭

পদ্মা ব্যাংকে টাকা রেখে বেকায়দায় বিআইডব্লিউটিএ

পদ্মা ব্যাংকে (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) টাকা রেখে চরম বেকায়দায় পড়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মচারীরা। বিআইডব্লিউটিএ’র অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের অনুদানের তহবিল পদ্মা ব্যাংকে রেখে তা ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি স্থায়ী আমানতের মেয়াদপূর্তির ৪০ দিন অতিবাহিত হলেও তা নগদায়ন করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে বার বার চিঠি দিয়েও পদ্মা ব্যাংক থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া মিলছে না। প্রতি মাসেই কর্মচারীরা অবসরে যাচ্ছেন। অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পদ্মা ব্যাংক টাকা ফেরত না দেয়ায় অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ও মৃত কর্মচারীদের অনুদান প্রদানে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এতে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবারো হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত পরিচালক হিসাব গোলাম ফারুক চৌধুরী স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, পদ্মা ব্যাংক মতিঝিল শাখায় ‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্মচারী অবসরভাতা তহবিল’ শিরোনামে ১৭ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের হিসাব (এফডিআর) খোলা হয় গত বছরের ২৮ জুন। এফডিআর নম্বর ০০৩১৯৯৬। চলতি বছরের ২৮ জুন এফডিআরটির মেয়াদ পূর্তি হয়। কিন্তু মেয়াদ পূর্তির প্রায় ৪০ দিন অতিবাহিত হলেও মুনাফাসহ আসল ফেরত দিতে পারছে না পদ্মা ব্যাংক। এ বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বার বার চিঠি দিয়েও এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

জানা গেছে, ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ দেয়ার পর অনেকটা খোলাসা হয়ে পড়ে নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংক। কার্যক্রম শুরু করার চার বছরের মাথায় দি ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়মের চিত্র ফাঁস হয়ে যায়। এসব অনিয়মের কারণে ঋণ দেয়ার চিত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে বেরিয়ে আসে। এর ফলে ব্যাংকটিতে তীব্র তারল্য সঙ্কট দেখা দেয়। গ্রাহকদের টাকা দিতে না পারায় ব্যাপক চাপের মুখে পড়ে ব্যাংকটি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকটির এমডিকে অপসারণ করে। একই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে। পরবর্তীতে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ও ইমেজ সঙ্কট কাটাতে নাম পরিবর্তন করা হয়। ফারমার্স ব্যাংক থেকে পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক রাখা হয়।

বিআইডব্লিউটিএ’র এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মচারী অবসরভাতা তহবিল শিরোনামে ১৭ কোটি টাকা স্থায়ী আমানত হিসাব খোলা হয়। বিআইডব্লিউটিএ’র অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের চূড়ান্ত অবসরভাতা পরিশোধ এবং মৃত কর্মচারীদের অনুদান প্রদানের জন্য এ এফডিআরটি খোলা হয়। গত ১৮ জুন অনুষ্ঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের ৪৯তম সভা ও কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের আলোকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের চূড়ান্ত অবসরভাতা পরিশোধের লক্ষ্যে গত ২৭ জুন পদ্মা ব্যাংক মতিঝিল শাখাকে চিঠি দেয়া হয়। ওই চিঠিতে এফডিআরটি নগদায়নের জন্য শাখা ব্যবস্থাপককে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু এফডিআরটি নগদায়ন না করায় তা আবারো ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানানো হয় এবং এর একটি অনুলিপি বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা হয়। বিআইডব্লিউটিএ’র অর্থ ফেরত প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের টাস্কফোর্স সেলকেও অবহিত করা হয়। বার বার এফডিআরটি নগদায়নের জন্য তাগাদা দেয়া হলেও মেয়াদোত্তীর্ণ এফডিআরটি নগদায়নের জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

এদিকে প্রতি মাসেই অবসরে যাচ্ছেন কর্মচারীরা। কিন্তু পদ্মা ব্যাংক টাকা ফেরত না দেয়ায় অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ও মৃত কর্মচারীদের অনুদান প্রদানে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এতে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এই অবস্থায় পদ্মা ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় স্থায়ী আমানত হিসেবে রক্ষিত ১৭ কোটি টাকা জরুরি ভিত্তিতে মুনাফাসহ নগদায়নের জন্য পদ্মা ব্যাংক মতিঝিল শাখাকে আবারো অনুরোধ করা হয়েছে। বিষয়টি সুরাহা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আবারো হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/437685/