৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বুধবার, ১:৩৯

আর কত রাত?

বাতিহীন ফ্লাইওভার

মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভার চালু হয়েছে দুই বছরেরও বেশি হলো। অথচ এখনও এই ফ্লাইওভারে বাতি জ্বলেনি। বাতি না থাকায় ফ্লাইওভারের ল্যাম্পপোস্টের তারও চুরি হয়ে গেছে। ফ্লাইওভারের ল্যামপোস্টের বাতি না জ্বলায় প্রতিনিয়ত ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। গত রবিবার গভীর রাতে রাজধানীর মালিবাগ ফ্লাইওভারে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আহত পাঠাও চালক মিলনকে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান। নৃশংস এ হত্যাকান্ডে জড়িত ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন ভবনের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ এবং অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত করে খুনিকে গ্রেফতার করে। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ফ্লাইওভারে সিসি ক্যামেরা না থাকায় খুনিকে চিহ্নিত করতে পুলিশকে অনেক বেগ পোহাতে হয়েছে। ফ্লাইওভারের উপরে ছিনতাইকারীর হাতে পাঠাও চালক খুন হওয়ার পর ফ্লাইওভারে রাতে যান চলাচল অনেকটাই কমে গেছে। নিচে যানজট হবে জেনেও চালকরা রাতে আর ফ্লাইওভারে উঠছেন না। গতকাল মঙ্গলবারও উবারের চালক মতিন জানান, ওই ঘটনার পর রাতে আর তিনি মালিবাগ ফ্লাইওভারে ওঠেন নি। তিনি বলেন, এখন যাত্রীরাই আতঙ্কিত। রাতে ফ্লাওভারে উঠতে গেলেই বাধা দেন। বলেন, তুমি নিচ দিয়ে যাও। টাকা বেশি উঠলে উঠুক। চালক মতিনের মতো আরও শত শত ভুক্তভোগির প্রশ্ন-এভাবে বাতিহীন আর কতো রাত?

ভুক্তভোগিরা জানান, ফ্লাইওভারের অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে প্রতিনিয়ত এ ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এর দায় নিচ্ছেন না কেউ। ট্রাফিক পুলিশ বলছে এই দায়িত্ব ক্রাইম বিভাগের। ক্রাইম পুলিশ বলছে দায়িত্ব দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। আর দক্ষিণ সিটি বলছে মগবাজার ও মালিবাগ ফ্লাইওভার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এখনো তাদের বুঝিয়ে দেয়নি। ফলে ফ্লাইওভারের ল্যামপোস্টে বাতি জ্বালানোর বিষয়ে আপাতত তাদের কিছু করার নেই। প্রশাসনের ঠেলাঠেলিতে দিন দিন ফ্লাইওভারটি রাতে গাড়িশূন্য হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শাহজাহানপুর থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফ্লাইওভারে ছিনতাইয়ের অনেক ঘটনাই তাদের জানা। বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগিরা থানায় এসে এ নিয়ে জিডি বা মামলাও করেছে। কিন্তু সিসি ক্যামেরা না থাকায় উপরের ঘটনা কারা ঘটালো তা বর করা পুলিশের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। সে কারণে কোনো মামলারই তদন্ত হয়নি বলেইচলে। গত রোববার পাঠাও চালক মিলন খুন হওয়ার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে। আশপাশের ভবন থেকে সংগ্রহ করা ভিডিও ফুটেজে মিলনকে ছুরি মেরে গাড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েনি। তবে মিলন যখন আহত হয়ে গলা ধরে দৌড়ে ফ্লাইওভারের নিচে নামছিলেন সেটা ধরা পড়েছে। এজন্য শুধু বাতি নয় এখন ফ্লাইওভারের উপরে সিসি ক্যামেরাও জরুরি হয়ে পড়েছে বলে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা মনে করছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তর (ডিএমপি) থেকে ফ্লাইওভারগুলোতে বিভিন্ন সময়ে কতগুলো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, ওই সব ঘটনায় জড়িতরা গ্রেফতার হয়েছে কি না, রাতে ফ্লাইওভারে পুলিশ ঠিকভাবে টহলে থাকছে কি না-এ বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এসব বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রাতে ফ্লাইওভারে ল্যাম্পপোস্টে বাতি জ্বলে না। এজন্য পুলিশের গাড়িও ঠিকমতো টহলে থাকে না।

রাতে মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভার দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন এমন কয়েকজন গাড়ির চালক ও যাত্রী জানান, গভীর রাতে ফ্লাইওভারের উপরে মোড়ে মোড়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যুবকরা আড্ডা দেয়। তাদেরকে নেশাসক্ত বলে মনে হয়। কেউ কেউ মনে করেন এরাই সুযোগ পেলে ছিণতাই করে। আবার মাদকের বেচাকেনা করতেও দেখেছেন অনেকে। কাদের নামে একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক জানান, রাতের অন্ধকারে মালিবাগ ফ্লাইওভারে ছিনতাই ছাড়াও চুরির টাকা ভাগাভাগি হয়। ফ্লাইওভারে দাঁড়িয়ে ছিনতাই ও চুরির পরিকল্পনা করা হয়। সে রকম বেশ কয়েকটি ঘটনা তার চোখে পড়েছে। পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাতে এই ফ্লাইওভার ব্যবহারকারী প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল আরোহীরা যখন-তখন বিপদে পড়ছে। সেই সঙ্গে মাদকসেবীরা দখল করে রেখেছে ফ্লাইওভারের উপরসহ নিচের অংশও। ফ্লাইওভারের কাছাকাছি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি এবং রাতের টহল পুলিশ থাকলেও তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ জানান, রাতে ফ্লাইওভারের দিকে তাদের নজরদারি কম থাকে। আর ফ্লাইওভারের ওপর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ পুলিশের ক্রাইম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত।

এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালিবাগ ফ্লাইওভারের ল্যাম্পপোস্টের খুঁটির গোড়া থেকে বিদ্যুতের তার কেটে নিয়ে গেছে চোর। তারগুলোতে বিদ্যুতের সংযোগ থাকলে হয়তো এভাবে চুরি করা সম্ভব ছিল না। তবে কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুতের ওই খুঁটিগুলোতে তার লাগিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। এতেদিন পুলিশ এবং সিটি করপোরেশন পরস্পরের ওপর দায় চাপালেও এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।