৩১ জুলাই ২০১৯, বুধবার, ২:৫৩

সিএনএন-এর প্রতিবেদন : এশিয়ায় ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার উদ্বেগজনক বিস্তার হওয়ায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তার মধ্যে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণে বিস্তার ঘটেছে ডেঙ্গুর। তবে ম্যালেরিয়া এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্যখাতে জরুরি অবস্থার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনামে। ওষুধেও কাজ হচ্ছে না এ রোগে। এ বছর ভয়াবহ আকারে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হওয়ায় ফিলিপাইনে এ মাসে জাতীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে ডেঙ্গু এলার্ট। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে সেখানে প্রায় এক লাখ মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার রিপোর্ট করা হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা শতকরা ৮৫ ভাগ বেশি। ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার নিয়ে অনলাইন সিএনএন এ খবর দিয়েছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, গ্রীষ্মপ্রধান ও গ্রীষ্মপ্রধানের কাছাকাছি এমন দেশ যেমন বাংলাদেশ, ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলোতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব খুব সাধারণ বিষয়। কিন্তু এখন এর বিস্তার বিশ্বের অন্যান্য অংশেও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদিও সেসব দেশ গ্রীষ্মপ্রধান নয়। এমন দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল, অস্ট্রেলিয়া, চীনের উপকূলীয় এলাকা ও জাপান। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা বিশ্বের ওইসব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সিএনএন আরো লিখেছে, গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে কমপক্ষে ১০০০ মানুষ নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর বেশির ভাগই শিশু। বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা একে ভয়াবহতার রেকর্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ বছর জানুয়ারি থেকে এতে আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে ৮ জন মারা গেছেন। এ বছর এখন পর্যন্ত মশার কামড় থেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ১৩৬০০ মানুষ। এর মধ্যে ৮৩৪৮ জন অথবা অর্ধেকেরও বেশি আক্রান্ত হয়েছেন জুলাই মাসে। জুনে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৮২০ জন। মে মাসে ১৮৪ জন। সে তুলনায় জুলাই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের ডিরেক্টরেট জেনারেল অফিসের সহকারী পরিচালক আয়েশা আখতার সিএনএন’কে বলেছেন, ২০০০ সাল থেকে আমরা ডেঙ্গুর রেকর্ড রাখা শুরু করি। তারপর বাংলাদেশে ডেঙ্গুর যে ভয়াবহতা দেখেছি তার মধ্যে এবারই সবচেয়ে খারাপ বিস্তার ঘটেছে। তিনি স্বীকার করেন, দেশের কমপক্ষে ৫০টি জেলায় দেখা দিয়েছে এ রোগ। কিন্তু ২ কোটির বেশি মানুষের বসবাসের শহর ঢাকায় এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে ভয়াবহ। এখানে অনেক হাসপাতাল রোগিদের স্থান সংকুলানে হিমশিম খাচ্ছে। আয়েশা আখতার আরো বলেন, সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এই ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সব শক্তি যেন ব্যবহার করে এটা নিশ্চিত করছি আমরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগিদের চিকিৎসা দিতে আমরা একটি বিশেষ শাখা খুলেছি।

ফ্লুর মতো লক্ষণ দেখা দেয় ডেঙ্গুর সংক্রমণ। এর মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, পেশী ও শরীরের জয়েন্টগুলোতে প্রচন্ড ব্যথা, জ্বর ও পুরো শরীরে র‌্যাশ ওঠা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হন। তার মধ্যে প্রায় ৫ লাখ মানুষের অবস্থা খারাপ পর্যায়ে যায়। ফলে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এর মধ্যে মারা যান ১২৫০০ জন।

এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী, সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে কারিগরি সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা এরই মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে চিকিৎসার নির্দেশনা প্রণয়ন করেছে। এ জন্য সংবাদপত্রগুলোর মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টির বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে অন্যান্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/224085/