৪ মার্চ ২০১৭, শনিবার, ১:৩৬

সর্বত্রই দালালচক্র

ঢাকার সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা

চিকিৎসা সেবা নাগরিকের মৌলিক অধিকার। সরকারি হাসপাতালগুলো স্বল্পমূল্যে সেবা দিচ্ছে। চিকিৎসার জন্য চোখ ধাঁধাঁনো বেসরকারি অসংখ্য হাসপাতাল গড়ে উঠলেও সাধারণ মানুষের ‘চিকিৎসা সেবা’ ভরসা এখনো সরকারি হাসপাতাল। নিত্যদিন হাজার হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। চিকিৎসাও মানসম্পন্ন। কিন্তু গরীব রোগীদের স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা নিতে এসে পকেট খালি করতে হচ্ছে। সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। রোগীর টাকা যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী এক শ্রেণীর দালালের পকেটে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল, কিডনি হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল নিউরোসাইন্স হাসপাতাল, হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালসহ সবগুলোর চিত্রই প্রায় অভিন্ন। হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দালাল চক্র। এই চক্রের হাতে জিম্মী কার্যত সবাই। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা দালালদের অর্থ দেয়া ছাড়া কোনো সেবা পান না। দালাল ও হাসপাতালের কিছু অসাধু ডাক্তার, কর্মকর্তা মিলে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। এই ‘সিন্ডিকেট চক্রের খাই’ না মেটালে রোগীকে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি।

রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে সরেজমিন ঘুরতে গিয়ে চোখে পড়ে ভয়াবহ চিত্র। দালালদের টাকা দিলে সেবা মেলে না দিলে ভোগান্তির শেষ নেই। এ এক ভয়াবহ চিত্র। দালালদের দৌরাত্ম্যের কথা স্বীকার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রায়ই দালালদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন ইনকিলাবকে বলেন, আমি দালাল চক্রের বিষয়টি জেনেছি। ইতোমধ্যে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। চক্রটি এখন নেই বললেই চলে। ভিসি প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান খান বলেছেন, দালাল চক্রের ব্যাপারে আমরা সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখছি। পরিচালকের নেতৃত্বে একটি পৃথক টিমও কাজ করছে। তারপরও অগোচরে দালাল সিন্ডিকেটটি তাদের কার্যক্রম চালাতে পারে।

সূত্র মতে, স্বাভাবিকভাবে সেবা না মেলায় দালালদের দ্বারস্থ হতে হয় রোগীদের। হাসপাতালে রোগী প্রবেশের পর থেকেই দালালদের অপতৎপরতা শুরু হয়। বহির্বিভাগ থেকে টিকেট কাটা, টেস্ট বাণিজ্য থেকে শুরু করে বেড পাওয়া সব ক্ষেত্রেই দালালদের দৌরাত্ম্য। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সম্প্রতি হাসপাতালে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য রোধে হাসপাতাল পরিচালকদের সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, রোগীর যথাযথ সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হাসপাতালে দালালদের অনুপ্রবেশ রোধে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। একই সঙ্গে কোনভাবেই যেন তারা হাসপাতালে ভিড়তে না পারে।

রাজধানীতে অবস্থিত সরকারি হাসপাতালগুলোতে সক্রিয় প্রায় সহস্রাধিক দালাল। গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল রোগীদের টার্গেট করছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পঙ্গু হাসপাতালের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, দালালদের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সুসম্পর্ক থাকায় চাইলেও অনেক কিছু বলা যায় না। এদের সহযোগিতা নিয়েই প্রভাবশালীরা বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক পরিচালনা করেন। তারা দালালদের রক্ষা করতে অনেক কিছুই করেন।

ভুক্তভোগীদের মতে, হাসপাতালের এক-একটি বেড রোগীদের কাছে যেন একটি সোনার হরিণ। আর এ বেড পেতে রোগীদের ধরণা দিতে হয় প্রথমে পরিচিত স্টাফ, না পেয়ে দালাল চক্রের সাথে। এই চক্রের সাথে হাত না মেলালে হাসপাতালগুলোতে বেড পাওয়া সম্ভব নয় বলেও অভিযোগ করেছেন চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগী ও তাদের আত্মীয় স্বজনরা। একই সঙ্গে রাজধানীর অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও নানা দুর্ভোগ পেরিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ রোগীদের। এদিকে দালালরা শুধু রোগী নিয়েই ব্যবসা করে না। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগী এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনের মোবাইল, টাকা ও মালামালসহ সর্বস্ব সুকৌশলে চুরি করে নেয়। হাসপাতাল প্রশাসনের লোকজন জড়িত থাকায় দালাল চক্রটি ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

এদিকে অধিকাংশ হাসপাতালের কর্মচারী ও দালালদের সমন্বয়ে চলছে রমরমা অ্যাম্বুলেন্স-বাণিজ্য। ওয়ার্ডবয়, সুইপার, এমনকি ফুটপাতের পিঠা বিক্রেতাও অ্যাম্বুলেন্সের মালিক। তারা রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। সিন্ডিকেটের বাইরের কোনো অ্যাম্বুলেন্স তারা হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেয় না। তাই বাধ্য হয়ে তাদের অ্যাম্বুলেন্সেই উঠতে হয় রোগী ও স্বজনদের। যদিও এ শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার প্রধান কারণ সরকারি হাসপাতালগুলোতে অ্যাম্বুলেন্স সংকট। হাসপাতালে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও দেখা যায়, তা সারা বছরই অকেজো থাকে। আর সচল অ্যাম্বুলেন্সগুলো ব্যবহার করেন চিকিৎসক বা হাসপাতালের কর্মকর্তারা। সাধারণ রোগী পরিবহনে কখনোই এসব অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালে কিছু ওষুধ, বেড ও অপারেশন বিনামূল্যে পাওয়া গেলেও সবকিছুতেই দালালদের দ্বারস্থ হতে হয়। যে কারণে অনেক টাকা খরচ করতে হচ্ছে রোগীদের। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েন গরীব মানুষ। সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় রোগ সারানোর আশায় এসে তারা ভর্তি হওয়ার পর নিরুপায় হয়ে সহায় সম্বল পর্যন্ত বিক্রি করছেন।

রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে সেবা নিতে এসে পদে পদে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়। বেশি বিপাকে পড়তে হয় বেড নিয়ে। তাই বাধ্য হয়েই রোগীরা দালালদের দ্বারস্থ হন। রোগীরা বেডের ব্যাপারে কথা বলতে গেলে হাসপাতাল থেকে ওয়ার্ডবয় সুইপারদের সাথে কথা বলতে বলেন। রোগীরা একটি বেড পাওয়ার জন্য যে কোন পরিমাণ উৎকোচ দিতে রাজি থাকায় সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চক্রটি বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। একই সঙ্গে সিরিয়াল বাদ দিয়েই উৎকোচ নিয়ে বেড বাণিজ্য চালাচ্ছে। অনেক সময় আবার রোগী সুস্থ হওয়ার আগেই সুস্থ বলে বেড বাতিল, রোগীর অবস্থা মৃত্যু প্রায় দেখে অনেক সময় নিজেদের বাঁচাতে শেষ সময়ে বেড প্রদান করারও অভিযোগ রয়েছে চক্রটির উপর। এ সকল বিষয় দেখার দায়িত্ব প্রতিটি হাসপাতালের জরুরী বিভাগের আবাসিক সার্জনদের। ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালের সার্বিক সেবা মনিটরিং করার কথা থাকলেও ২/৩ দিন পরেও অনেক সময় আবাসিক সার্জনদের দেখা মেলা ভার। এ সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে দালাল চক্রটি। যদিও অভিযোগ রয়েছে এই চক্রটির কাছ থেকে আবাসিক সার্জনরাও জড়িত। তারাও মোটা অংকের মাসোয়ারা পান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ ব্যয় সরকার বহন করে থাকে। সরকারি হাসপাতালে ৭০ শতাংশ বেড বিনামূল্যের এবং ৩০ শতাংশ বেডের জন্য সামান্য ভাড়া নির্ধারিত আছে। এছাড়া রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে রোগীকে স্বল্প পরিমাণ ইউজার ফি বহন করতে হয়। ভাড়ায় বেডে থেকে এবং ইউজার ফি প্রদানের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা নিলেও কোন রোগীর মোট খরচের ১৫ শতাংশের বেশি ব্যয় হওয়ার কথা নয়। সরকারি হাসপাতালে একজন রোগীর আউটডোরে চিকিৎসা নিতে খরচ হয় ১০ টাকা আর ভর্তি হতে ১৫ টাকা। ভর্তির পর থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসার সব ব্যয় সরকারই বহন করে থাকে।

সূত্র মতে, সরকারি হাসপাতালে দালাল প্রবেশে রয়েছে কড়া সতর্কবার্তা। কিন্তু সেটা যেন কেবলই কাগজে-কলমে। রাজধানীর কিডনি হাসপাতালেই দেখা গেলো এমন নমুনা। হাসপাতালটির কর্মীদের যোগসাজশেই ঢুকে পড়ছে দালালরা। আর এসব দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন রোগী ও তার স্বজনরা। বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারি ব্যবস্থপনায় চিকিৎসা সেবা থেকে। কর্তৃপক্ষের দাবি- দালাল প্রতিরোধে উদ্যোগ নিলেও কৌশল পরিবর্তন করে ঢুকে পড়ছে তারা।

সম্প্রতি কিডনি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের রিসিপশনে বসে রোগীদের পরামর্শ দিচ্ছেন জাকির হোসেন নামের এক ওয়ার্ডবয়। তিনি রোগীদেরকে বোঝান যে, রোগ নির্ণয়ের জন্য সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ, তাই রোগীকে নিতে হবে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। আর এসবের বন্দোবস্ত করে দেবেন তিনিই। হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. মো. নুরুল হুদা জানান, দালাল প্রবেশে কিডনি হাসপাতালে রয়েছে কঠোর নজরদারী। সরেজমিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) নিউরো সার্জারি বিভাগে রোগীদের সঙ্গে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের অভিযোগে জানা যায়, এই বিভাগের একটি বেড পাওয়ার জন্য বিস্তর ছোটাছুটি করেও কখনোই একক চেষ্টায় বেড পাওয়া সম্ভব হয়না। তবে ওয়ার্ডবয়দের সাথে হাত মেলালেই টাকার বিনিময়ে খুব সহজেই বেড মিলে।

ঢাকা মেডিকেল
দেশের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার সর্ববৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানে দালাল চক্রের পরিধি ব্যাপক। কর্মচারী নেতাদের সহায়তায় হাসপাতালকে জিম্মি করে রেখেছে এই চক্রটি। প্রশাসনও এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে। সূত্র মতে, দালাল চক্রটি কর্মচারী নেতাদের প্রতি মাসে মাসোহারা দেন। যে কারণে এই চক্রের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলেনা। এর নেতৃত্ব দিচ্ছে কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল খালেক। হাসপাতালে ২শ’রও বেশি দালাল রয়েছে বলে জানা গেছে। জরুরী বিভাগের দালালরা হলেন- সুমন, মিজান, কাওছার, রফিক, হাবিব, হামিদুল, কিশোর, আয়নাল, রফিকুল ইসলাম, খায়রুল, মনির হোসেন, কালা, শামসু, আবেদ আলী, সেকেন্দারসহ প্রায় শতাধিক। এছাড়াও হাসপাতালের ভিতরে বিভিন্ন টেস্টের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, প্রাইভেট হাসপাতালের এবং অর্ধশতাধিক বহিরাগত দালাল।

এদিকে চিকিৎসকদের পাশাপাশি ঢামেক হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মচারীও বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মার্কেটিংয়ের কাজে ব্যস্ত। তারা প্রতিদিন হাজিরা দেন হাসপাতালে। কিন্তু ঢামেকের নয়, কাজ করেন মনোনীত ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধি হিসেবে। সবকিছুই ঘটছে প্রকাশ্যে। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এটা চলমান প্রক্রিয়া। প্রায়ই দালালদের পুলিশে সোপর্দ করা হচ্ছে। হাসপাতালে কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। একই সঙ্গে হাসপাতালের নিজস্ব কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

পঙ্গু হাসপাতাল
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল) জিম্মি হয়ে পড়েছে দালালদের হাতে। আর তাদের সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে খোদ হাসপাতালেরই চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। সেবা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের অভিযোগ- হাসপাতালের গেট থেকেই শুরু হয় দালালদের তৎপরতা। এসব দালালদের কারণে রোগীদের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। সূত্র মতে, পঙ্গু হাসপাতালে ২০টি গ্রুপে দুই শতাধিক দালাল সক্রিয় আছে। গ্রুপগুলোর মধ্যে অন্যতম-শওকত গ্রুপ, জাহিদ গ্রুপ, নাহিদ গ্রুপ, মজনু গ্রুপ, হাজেরা গ্রুপ, আল-আমীন গ্রুপ, নাজিম গ্রুপ, রেজাউল গ্রুপ, শাহানা গ্রুপ, সুমন গ্রুপ, সিদ্দিক গ্রুপ, মোকারম গ্রুপ, আলী গ্রুপ, রুবেল গ্রুপ, বাশার গ্রুপ, শহিদুল গ্রুপ, জহির গ্রুপ, মামুন গ্রুপ, কল্পনা গ্রুপ ও মরজিনা গ্রুপ। একেক গ্রুপে সিনিয়র-জুনিয়র মিলিয়ে ৮ থেকে ১০ জন দালাল। তাদের কেউ হাসপাতালের কোনো কর্মচারীর আত্মীয়, কেউ স্থানীয় প্রভাবশালীদের আশীর্বাদপুষ্ট, আবার কারও আছে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক পরিচয়। এ কারণে হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা এদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস পান না।

যদিও এই হাসপাতালে প্রায়ই অভিযান চালায় র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। দালালদের গ্রেফতার করে সাজাও দেয়া হয়। কিন্তু তৎপরতা থামে না। জানা গেছে, গত এক বছরে দেড় শতাধিক দালালকে গ্রেফতার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর পর এরা আইনি ফাঁকফোকরে জামিনে বেরিয়ে আসে। আবার বীরদর্পে তৎপরতা শুরু করে। এ হাসপাতালকে ঘিরে সক্রিয় দালালদের কেউ কেউ ৮-১০ বারও জেল খেটেছেন। স¤প্রতি ২৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এর আগে গত বছরের এপ্রিলে দালাল চক্রের ১৬ সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়। দালালদের বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. ইকবাল কাভীর সঙ্গে গতকাল মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে মুঠোফোনে কিছু বলতে অপারাগতা প্রকাশ করেন।

বিএসএমএমইউ
দালালদের অপতৎপরতা বন্ধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও এখানেও দালাল চক্র সক্রিয়। তবে এখানটায় অন্যান্য হাসপাতালের মতো বেড বাণিজ্য নেই। এখানে রয়েছে বহির্বিভাগে রোগী দেখানোর টিকেট পাওয়া, বৈকালিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবার টিকেট পাওয়া এবং বিভিন্ন টেস্টের জন্য রোগীদের পার্শ্ববর্তী ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে পাঠানো নিয়ে একটি চক্রের বাণিজ্য। তবে চক্রটি অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আনসারদের সমন্বয়ে গড়া একটি সিন্ডিকেট।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন ইনকিলাবকে বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি। ইতোমধ্যে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। চক্রটি এখন নেই বললেই চলে। ভিসি প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান খান বলেছেন, আমরা সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখছি। পরিচালকের নেতৃত্বে একটি পৃথক টিমও কাজ করছে। তারপরও অগোচরে দালাল সিন্ডিকেটটি তাদের কার্যক্রম চালাতে পারে। তাই তিনি রোগী ও স্বজনদের কাছে অনুরোধ করেন- কারো নজরে পড়লেই যেন প্রশাসনকে জানানো হয়। এদিকে সম্প্রতি বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সেবাচিম) ডিবি পুলিশের অভিযানে দালাল চক্রের ৭ জনকে আটক করা হয়। এই চক্রটি প্রতিদিন হাসপাতালে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের মোবাইল, টাকা ও মালামালসহ সর্বস্ব সু-কৌশলে হাতিয়ে নিতো।

https://www.dailyinqilab.com/article/67661