১২ মে ২০১৯, রবিবার, ১০:৩৯

লিজের বিমানে বছরে গচ্চা ১২০ কোটি টাকা

দুটি উড়োজাহাজ লিজের নামে হাতি পুষছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। শতভাগ সিন্ডিকেটের স্বার্থ দেখে চুক্তি করায় রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটি বছরে গচ্চা দিচ্ছে ১২০ কোটি টাকা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনায় এমন লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে লিজ চুক্তি করার কারণে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হচ্ছে বেশি। বিমান সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর লিজ নেয় বিমান। এর একটি বিমানের বহরে যুক্ত হয় ২০১৪ সালের মার্চে এবং অন্যটি একই বছরের মে মাসে। এক বছরের কম সময় অর্থাৎ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারও ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। গত ডিসেম্বরে নষ্ট হয়ে যায় ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও। পরে ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়।

তবে কোন সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। সে কারণে লিজ নেয়া প্রতিষ্ঠান ও মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান উভয়কেই অর্থ দিতে হচ্ছে বিমানকে। বিষয়টি সর্ম্পকে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ মানবজমিনকে বলেন, ইজিপ্ট এয়ার থেকে লিজ নেয়া বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ দুটি বর্তমানে গ্রাউডেন্ড রয়েছে। এর বেশি কোন তথ্য আমার কাছে নেই। জেনে বলতে হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইজিপ্ট এয়ারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, দুটি উড়োজাহাজের জন্য প্রতিমাসে ১০ কোটি করে বছরে ১২০ কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে বিমানকে। ফলে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী একমাত্র উড়োজাহাজ সংস্থাটির আয়ের বড় অংশই খরচ হয়ে যাচ্ছে। লিজ চুক্তিতে বলা হয়েছে, যাত্রী পরিবহন করুক আর না করুক প্রতি মাসে উড়োজাহাজ প্রতি ৪ কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে বিমানকে। পাঁচ বছরের আগে চুক্তি বাতিল করা যাবে না, আবার লিজের মেয়াদ শেষে উড়োজাহাজ দুটি আগের অবস্থায় ফেরত দিতে হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, মিশরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে লিজে আনা দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজের কারণে বাংলাদেশ বিমানের ৩০০ কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হওয়ার কারন হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ দুই উড়োজাহাজ লিজ নেয়া এবং মেরামতে চরম অবহেলা ও অনিয়ম করা হয়েছে। উড়োজাহাজ লিজ নেয়ার পর থেকে ইঞ্জিন বিকল হওয়া, আবার ভাড়ায় আনা, সেগুলোর মেরামত এবং উড়োজাহাজের ভাড়াসহ আনুসঙ্গিক কাজে ৩০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এদিকে ইজিপ্ট এয়ারের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত উড়োজাহাজ দুটি ফেরত দেয়ার ব্যাপারে বিমানকে নির্দেশ দিয়েছেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ও বিমান সচিব মহিবুল হক। লিখিত নির্দেশনায় তারা বলেছেন, লীজ নেয়ার সঙ্গে বিমানের কোনও কর্মকর্তা জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর বিমানের ভাবমূর্তি উদ্ধারে সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি দুর্নীতি রোধ করা হবে। বিমান সূত্রে জানা গেছে, এ দুটি উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ সহজলভ্য নয়। বর্তমানে মেরামতের জন্য উড়োজাহাজ দুটি ভিয়েতনামের বিমানবন্দরে রয়েছে। লিজ নেয়া উড়োজাহাজের বিষয়ে এক এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ মানবজমিনকে বলেন, কর্তৃপক্ষ চাইলে আরও আগেই বিষয়টির সমাধান করতে পারতো।

নিজেদের স্বার্থ বিবেচনা না করে চুক্তি করায় উড়োজাহাজ দুটি বিমানের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এই বিমানগুলো ফেরত দিতে হবে। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে ১৩টি উড়োজোহাজ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০, চারটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ও তিনটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ রয়েছে। তবে বহরে থাকা একটি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ মেরামতের জন্য গ্রাউন্ডেড রয়েছে এবং মিয়ানমারে সংঘঠিত দুর্ঘটনায় ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজটি বিকল হয়ে পড়েছে। এটি আর ব্যবহার করা সম্ভব নয় বলে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইয়াঙ্গুনে এ বিমান বিকল হওয়ায় অভ্যন্তরীন রুটে ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে বিমানের তরফে জানানো হয়েছে দুই এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=172098&cat=2