৪ মার্চ ২০১৭, শনিবার, ১২:১৬

মানুষের জীবন, ‘অবসর’ এবং চাতুরিপূর্ণ কৌশল

আশিকুল হামিদ

সুখবর যে একেবারে শোনা যায় না তা কিন্তু নয়। বিগত কয়েকদিনে এরকম একটি সুখবরে অনেকেই সম্ভবত আশ্বস্ত হয়েছেন। সুখবরটি বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের চারজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নেয়া ব্যবস্থা সংক্রান্ত। কোনো এক রোগীর অবস্থা হঠাৎ খারাপ হতে থাকলে তার ভীত ও উদ্বিগ্ন আত্মীয় সাহায্যের জন্য হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকদের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। তারা যেখানে বসেন সেখানে তখন একজন নারী চিকিৎসক ছিলেন। রোগীর আত্মীয় ওই চিকিৎসককে ‘সিস্টার’ সম্বোধন করে সাহায্য করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। ব্যস, এতেই ঘটে গিয়েছিল মহা কাণ্ড।

রোগীর আত্মীয় কেন একজন অতি ‘মাননীয়’ নারী চিকিৎসককে ‘সিস্টার’ বললেন- এটাই ছিল তার অপরাধ! কারণ, হাসপাতালে নার্সদেরই সাধারণত ‘সিস্টার’ বলা হয়। ডাক্তারদের ‘স্যার’ ডাকতে হয়। তিনি নারী হলে অবশ্যই ‘ম্যাডাম’ বলে ডাকতে হবে। কিন্তু বিপন্ন রোগীর ওই আত্মীয়র অবস্থা তখন এতটাই খারাপ ছিল যে, তার কা-জ্ঞান সম্ভবত লোপ পেয়েছিল। কিংবা তিনি হয়তো সরল মনেই ‘ম্যাডাম’কে বোন অর্থে ‘সিস্টার’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো ব্যাখ্যা বা কৈফিয়ৎ দেয়ারই সুযোগ পাননি। প্রথমে তরুণ ইন্টার্নরা এবং তারপর সিনিয়র চিকিৎসকরাও তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বেচারার নাক-মুখ রক্তাক্ত করেছিলেন তারা। একই সঙ্গে তাকে কান ধরে উঠ-বসও করানো হয়েছিল। সবই করেছিলেন সেই বিশিষ্টজনেরা, মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়া যাদের কর্তব্য। ওদিকে রোগীর অবস্থা যে ঠিক কেমন হয়েছিল সে সম্পর্কে অবশ্য প্রকাশিত খবরে তখন কিছু জানা যায়নি।

এটা বেশ কয়েকদিন আগের খবর। খবরে আরো জানা গিয়েছিল, ‘সিস্টার’ বলে নার্সদের পর্যায়ে অর্থাৎ নিম্নস্তরে নামিয়ে আনার প্রতিবাদে হাসপাতালের চিকিৎসকরা ধর্মঘট করেছিলেন। তারা এমনকি জরুরি বিভাগেও তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে দেশে জনগণের মধ্যে উঠেছিল প্রতিবাদ। সোচ্চার হয়েছিলেন এমনকি ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী ও নেতারাও। অন্তরালে অন্য কোনো বিশেষ কারণও থাকতে পারে, কিন্তু উল্লেখযোগ্য খবর হলো, এই প্রথমবারের মতো সরকারকে ত্বরিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। ৩ মার্চ প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ঘটনায় ওই ‘ম্যাডাম’সহ চারজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে দোষী সাব্যস্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চারজনেরই ইন্টার্নশিপ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তারা ইন্টার্নশিপ শেষ করার সুযোগ পাবেন, তবে ভিন্ন ভিন্ন হাসপাতালে। খবরের অন্য একটি অংশও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এতে জানা গেছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, রোগীর জীবনকে বিপন্ন অবস্থায় রেখে যারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখে তারা ডাক্তার নয়, ‘গুণ্ডা’।

এ পর্যন্ত এসে পাঠকরা নিশ্চয়ই নিবন্ধের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করতে চাইবেন। তারা যে একই সঙ্গে নৌমন্ত্রী এবং পরিবহন শ্রমিকদের নেতা শাজাহান খানের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য ও কার্যকলাপের কথা স্মরণ করবেন সে ব্যাপারেও আমার সন্দেহ নেই। কারণ গত ২৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনাপ্রবাহে এই অভিযোগ অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে যে, সেদিনের আকস্মিক পরিবহন ধর্মঘটের পেছনে ওই মন্ত্রীর উসকানি ও মদদ ছিল। প্রকৃতপক্ষে শ্রমিকদের দিয়ে ধর্মঘট তিনিই করিয়েছিলেন। এ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যও প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। যেমন একটি খবরে জানানো হয়েছে, আগেরদিন দুপুরে খুলনায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের বৈঠকে চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার পর দিবাগত গভীর রাতে ওই মন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত পরিবহন শ্রমিক নেতাদের বৈঠকে পরদিন আকস্মিকভাবে ধর্মঘট শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। মন্ত্রীর কিছু বক্তব্যও ছিল উসকানিমূলক। যেমন তিনি বলেছেন, চালকরা নাকি মনে করে, মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে গাড়ি চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্যই তারা নাকি স্বেচ্ছায় ‘অবসরে’ গিয়েছিল, ধর্মঘট করেনি! চালকরা যে সিগন্যাল বোঝে এবং রাস্তার গরু-ছাগলকে চেনে- সে কথাও শুনিয়েছিলেন তিনি।

বলা দরকার, মন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধে ধর্মঘটে উসকানি দেয়ার এবং আদালত অবমাননার মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ উঠলেও সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। নেবে বলেও কেউ মনে করেন না। একই কথা প্রযোজ্য তাকে মন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবি প্রসঙ্গেও। এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে আলোচিত এ বিষয়টি নিয়ে কথা বাড়ানো অবশ্য বর্তমান নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য আসলে একথা জানানো যে, সরকারের এই বিশিষ্ট মন্ত্রী চমৎকার কৌশলে জনগণের দৃষ্টিকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দিক থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছেন। ধর্মঘটের মাত্র তিনদিন আগে দুই ধাপে এক চুলার জন্য ৬০০ টাকার স্থলে ৯০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৬৫০ টাকার স্থলে ৯৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শাজাহান খানের নেতৃত্বে শুরু হওয়া পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সে সম্ভাবনা অনেকটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। এখানেই মন্ত্রীর সাফল্য আর সে কারণেই তার নিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার প্রশ্ন ওঠে না।
এখানে গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কিছু কথা বলা দরকার। ক্ষমতাসীনরা যা-ই ভাবুন না কেন, আন্দোলন না হলেও গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তিই কিন্তু সামান্য সমর্থন পায়নি। এর কারণ, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাসাবাড়িতে তথা আবাসিক খাতের জন্য মোট উৎপাদিত গ্যাসের মাত্র দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত দরকার হয়। সে কারণে আবাসিক খাতে মূল্য বাড়ানোর কোনো অজুহাতই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

প্রাসঙ্গিক দ্বিতীয় তথ্যটি হলো, কয়েকটি ব-জাতিক কোম্পানি দেশে উত্তোলিত বিপুল পরিমাণ গ্যাস বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এর ফলেই আসলে দেশের অভ্যন্তরে গ্যাসের সংকট তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের কার্যক্রমও প্রশ্নসাপেক্ষ। কারণ, বিভিন্ন উপলক্ষে জনগণকে বাসাবাড়িতে বোতলজাত করা এলপি গ্যাস ব্যবহার করার পরামর্শ শুনতে হয়েছে। এই পরামর্শ ‘খয়রাত’ করেছেন কোনো কোনো মন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনরা। বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, এলপি গ্যাস ব্যবহারের পক্ষে সরকারের প্রচারণা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অনুসন্ধানেও তেমন কিছু তথ্যই বেরিয়ে এসেছে। জানা গেছে, বেশ কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানি বহুদিন ধরে বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজি ও এলপি গ্যাস বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি করছে। বলা হচ্ছে, মূলত তাদের স্বার্থেই সরকার এলএনজি ও এলপি গ্যাসের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে, জনগণ যাতে আবাসিক খাতে এই গ্যাস ব্যবহার করে এবং কোম্পানিগুলো যাতে যথেচ্ছভাবে মুনাফা লুণ্ঠন করতে পারে। বর্তমান পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পেছনেও রয়েছে একই উদ্দেশ্য। সরকার এমন অবস্থা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, জনগণ যাতে বেসরকারি কোম্পানগুলোর কাছ থেকে এলএনজি ও এলপি গ্যাস কিনতে বাধ্য হয়। এসব গ্যাসের জন্য লাইসেন্স কারা পেয়েছেন সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই বলার দরকার পড়ে না।

কথা শুধু গ্যাসের কারণে ওঠেনি। আসল কারণ জনগণের হালহকিকত। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্যের দামই কমছে না বরং বেড়ে চলেছে অবিশ্বাস্য হারে। সংবাদপত্রের রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, মাত্র মাস দেড়েকের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে চালের দাম বেড়েছে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত। কারণ জানাতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী মিলাররা সি-িকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে চলেছে। ওদিকে চালের পাশাপাশি অন্য সব পণ্যের দামও বেড়েই চলেছে। এমন কোনো সবজির নাম বলা যাবে না- প্রতি কেজিতে যার দাম ৫০/৬০ টাকার নিচে রয়েছে। মাছের বাজারে সাধারণ মানুষ তো যাওয়ারই সাহস পাচ্ছে না। গোশতের বাজারেও আগুনই জ্বলছে। মাঝখানে চাঁদাবাজির প্রতিবাদে গোশতের ব্যবসায়ীরা পাঁচদিন ধর্মঘট করেছেন। এর ফলে হোটেলের ব্যবসা লাটে ওঠার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। এই ধর্মঘটের সুযোগ নিয়ে দেশী ও ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি বেড়ে গেছে এমনকি ডিমের দামও। পাঁচদিন পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও গোশতের ব্যবসায়ীরা জানিয়ে দিয়েছেন, এখন থেকে তারা চাঁদার টাকা হিসাবে ধরে নিজেদের ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করবেন। তখন যেন সরকার নাক গলাতে না আসে!

এভাবে সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন হয়ে পড়েছে যে, বাজারে গিয়ে জিহ্বা বেরিয়ে যাচ্ছে বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষের। কারণ অন্য সব পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একযোগে বেড়েছে বাস, রিকশা ও সিএনজিসহ যানবাহনের ভাড়া। সরকারনির্ধারিত হারের তোয়াক্কা করছেন না মালিকেরা। অন্তরালে চাঁদাবাজি ও কমিশনের মতো গোপন কিছু ব্যাপার থাকায় টাউট ও অতিমুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা স্বাধীনতা পেয়ে গেছে। এমন অবস্থারই কুফল সইতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কারণ, বাজার ও খরচের তুলনায় আয় তো বাড়ছেই না, অনেকের রোজগার বরং কমে যাচ্ছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের তো নাভিশ্বাস উঠেছেই, মধ্যবিত্তরাও আজকাল চোখে সরষের ফুল দেখছেন। এমন অবস্থায় সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, দেশে আদৌ কোনো সরকার আছে কি না। কারণ, কোনো পণ্যের দামই রাতারাতি বাড়েনি। বেড়ে আসছে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে। কিন্তু মাঝেমধ্যে ধমক দেয়ার এবং লম্বা আশ্বাস শোনানোর বাইরে মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ফলপ্রসূ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি বর্তমান ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যেও সরকারকে নড়াচড়া করতে দেখা যাচ্ছে না। ভুক্তভোগী মানুষ কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারছে, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের ‘অতি চমৎকার’ সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কের পেছনে যে চাঁদা ও কমিশনই প্রধান ফ্যাক্টর বা নির্ধারকের ভূমিকা রাখছে- সে কথাটাও কাউকে বুঝিয়ে বলতে হচ্ছে না।

এমন অবস্থায় স্বাভাবিক নিয়মেই জাতীয় অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ, অর্থনীতির সূচক ভালোর দিকে দেখা গেলে আয়-রোজগার বাড়া ও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হওয়াসহ সংকট কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। কিন্তু সেখানেও নৈরাশ্যের ঘোর অন্ধকারই দেখা যাচ্ছে। একটি উদাহরণ হিসেবে প্রাধান্যে এসেছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ। সরকারের পক্ষ থেকে রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার ‘সুখবর’ শোনানো হলেও গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির জানিয়েছেন, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের তথা রেমিট্যান্সের প্রবাহ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ। তথ্যটি অত্যন্ত আশংকাজনক হলেও এটুকুই আমাদের উদ্বেগের কারণ নয়। আসল কারণ হলো, রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেই গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে রেমিট্যান্স কমেছিল ৭০ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার বা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা- আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ।

কয়েক বছর আগে রেমিট্যান্সের যখন পতন শুরু হয় তখন এর কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং তেলের দাম ও টাকার বিপরীতে বিদেশী বিভিন্ন মুদ্রার মান কমে যাওয়ার মতো কিছু কারণের উল্লেখ করা হয়েছিল। অন্যদিকে দেশপ্রেমিক অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা কিন্তু এসব কারণকে দায়ী বলে মানতে রাজি হননি। তারা বরং বলেছিলেন, সরকারের একদেশকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে বিএনপিসহ ইসলামী ও দেশপ্রেমিক দলগুলোর বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের কারণে বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়েছে। সে কারণে ওই দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া হয় বন্ধ করেছে নয়তো অনেক কমিয়ে দিয়েছে। উদাহরণ দিলে দেখা যাবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ৩৫ শতাংশই এসেছে সৌদি আরব থেকে। সবচেয়ে বড় সে চাকরির বাজারেই একদিকে বাংলাদেশীদের জন্য দরোজা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, অন্যদিকে কমে এসেছে শ্রমিকদের সংখ্যা। আরব আমিরাত, কুয়েত ও কাতারের মতো দেশগুলোও সরকারের রাজনৈতিক কর্মকা-ের কারণে শ্রমিক নেয়া হয় বন্ধ করেছে নয়তো অনেক কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে বিদেশে বাংলাদেশীদের জন্য চাকরির বাজার অনেক সংকুচিত হয়ে এসেছে।

রেমিট্যান্সের এই পতন অত্যন্ত ভীতিকর এজন্য যে, রফতানি আয়ের প্রধান খাত গার্মেন্ট কয়েক বছর ধরেই সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে। এমন অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় প্রধান খাত রেমিট্যান্সেও যখন ধস নামার খবর শুনতে হয় তখন উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। কারণ, বিপুল পরিমাণ আমদানি ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন কর্মকা-ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান আসে রফতানি আয় থেকে, এতদিন পর্যন্ত যার দ্বিতীয় প্রধান খাত ছিল রেমিট্যান্স। সে রেমিট্যান্সেই পতন শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, দেশের অর্থনীতি আসলে বিপর্যয়ের মুখোমুখি এসে পড়েছে।

অন্যদিকে এসব বিষয়ে সরকারকে কিন্তু তৎপর হতে দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীনরা বরং শাজাহান খানের মতো একে-তাকে দিয়ে রাজনীতির চাতুরিপূর্ণ খেলায় মেতে আছেন। চেষ্টা করছেন সমস্যার দিক থেকে কোনোভাবে জনগণের মনোযোগ সরিয়ে দেয়ার। আমরা জানি না, এ ধরনের অপকৌশলই শেষ পর্যন্ত সরকারের জন্য ‘কাল’ হয়ে উঠবে কি না।

http://www.dailysangram.com/post/274183