৩ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ১১:১৮

চট্টগ্রামে তীব্র গ্যাস সঙ্কট : তৈরী পোশাক শিল্পে বিশৃঙ্খলা

বন্ধ রয়েছে ৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সিইউএফএল ; মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা চট্টগ্রাম চেম্বারের

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে তীব্র গ্যাস সঙ্কটে বাসাবাড়িতে ভোগান্তির পাশাপাশি শিল্প কারখানার বিশেষ করে তৈরী পোশাক শিল্পের ক্রয়াদেশ অনুযায়ী লিড টাইম অনুসরণে গলদঘর্ম অবস্থা বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে ৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা সিইউএফএল। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে গেছে গ্যাসের চাপ সঙ্কটের তীব্রতা। এতে নাগরিক দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। গ্যাসের চাপ সঙ্কটে বিস্তীর্ণ এলাকার বাসাবাড়ির রান্নাবান্না প্রায় বন্ধই বলা চলে।

পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী গত বুধবার চট্টগ্রামের গ্যাসনির্ভর রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি (সিইউএফএল), রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৮০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ১ নম্বর ইউনিট ও ২ নম্বর ইউনিট, শিকলবাহা ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বাড়বকুণ্ড ২২ মেগাওয়াট এসআইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাস সরবরাহ দিতে না পারায় শাটডাউনে (বন্ধ) ছিল।

পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী গত বুধবার চট্টগ্রামে ননগ্রিড পাওয়ার স্টেশনেসহ ২৩৬.১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দেড় শ’ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয় মাত্র ২৮.২ মিলিয়ন ঘনফুট। এ ছাড়া বহুজাতিক সার কারখানা কাফকোকে ৪৫.২ মিলিয়ন ঘনফুট, আবাসিক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক গ্রাহক মিলে ১৪৭.৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সররবাহ দেয়া হয়।

কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির (কেজিসিএল) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, চট্টগ্রামের লাইন অপেক্ষাকৃত শেষপ্রান্তে (ডাউনস্ট্রিমে) হওয়ায় এখানে চাপ সঙ্কট প্রবল। লাইনে যা গ্যাস আসছে তা শুরুতেই তিতাস ও বাখরাবাদ নেয়ার পর এ দিকে আসতেই চাপ কমে যাচ্ছে। এমনিতেই কম সরবরাহ এর ওপর চাপ সঙ্কটের মাঝে আমরা আছি। তিনি স্বীকার করেন চাপ সঙ্কটে নাগরিকেরা গাড়ি নিয়ে সিএনজি স্টেশনে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। বাসাবাড়ির দুরবস্থা তো আছেই। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি করুণ মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাতে আমাদের কিছু করার নেই।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতির আহ্বান
এ দিকে চট্টগ্রামে তীব্র গ্যাস সঙ্কট নিরসনে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম। গতকাল এক জরুরি পত্রের মারফত তিনি এ আহ্বান জানান। পত্রে চেম্বার সভাপতি উল্লেখ করেন, চট্টগ্রামে ৫০০-৫৫০ এমএমসিএফটি চাহিদার বিপরীতে সম্প্রতি ২৪০-২৫০ এমএমসিএফটি পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ করা হলেও গত কয়েক দিন তাও হ্রাস পেয়েছে। ফলে আবাসিক ও শিল্প খাতের গ্রাহকেরা চরম দুর্দশার শিকার হচ্ছেন। চলমান গ্যাস সঙ্কটের ফলে রফতানিমুখী আরএমজি, নিট এবং অন্যান্য শিল্প কারখানা বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রফতানিতব্য পণ্য উৎপাদন ও জাহাজীকরণ করতে ব্যর্থ হলে কার্যাদেশ হারানো, ব্যাংকঋণের সুদ, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতার দায়ভারে বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনুরূপভাবে গৃহস্থালি খাতে গ্যাসের অভাব ও গ্যাসের চাপ অত্যন্ত ক্ষীণ বিধায় রান্নার কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। হাসপাতাল বা কিনিকগুলোয়ও গ্যাসের সরবরাহ অতীব অপ্রতুল। পরিস্থিতির সামগ্রিক অবনতিতে চট্টগ্রাম মহানগরী এখন গ্যাসের সঙ্কটে ভুগছে।

মাহবুবুল আলম গ্যাসের এ সঙ্কট নিরসনে দেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু ও দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরীর প্রায় ৫০ লক্ষাধিক অধিবাসী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের নাজুক অবস্থা নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে জ্বালানি উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/200357