৩ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ১১:১৪

কবি নজরুল কলেজের শিার্থীদের ভর্তির টাকা খেল ছাত্রলীগ

কবি নজরুল কলেজে ভর্তি রসিদ জালিয়াতি করে শতাধিক শিার্থীর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে শিাপ্রতিষ্ঠানটির ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। ভর্তির সময় দেয়া এসব শিার্থীর অর্থ কলেজের তহবিলে জমা না হওয়ায় এখন কলেজ কর্তৃপ তাদের কাছে পুনরায় টাকা চাইলেও তারা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। ছাত্রলীগের নেতারা এর দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এজন্য প্রশাসনকেই দায়ী করেছে। বিষয়টি তদন্তে কলেজ প্রশাসন একটি কমিটি করেছে। বিডি নিউজ।
জানা যায়, এ বছর স্নাতকে ভর্তিতে সর্বনি¤œ ৩২০২ টাকা এবং স্নাতকোত্তরে সর্বনি¤œ ৩৮০০ দিয়ে ভর্তি হয়েছেন শিার্থীরা। এর মধ্যে ১১৬ শিার্থীর ভর্তির সময় দেয়া অর্থ জমা হয়নি কলেজ তহবিলে, যার পরিমাণ কমপে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা।

কলেজের ইংরেজি বিভাগে মাস্টার্সে (প্রিলিমিনারি) ভর্তি হওয়া তাসলিমা আকতার বলেন, আমি ৫৭০০ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু কয়েক দিন ধরে স্যাররা ফোন দিচ্ছেন টাকা জমা দিতে। আমি কেন টাকা জমা দেবো ভাই? আমি একবার টাকা জমা দিয়েছি, আর দিতে পারব না। জালিয়াতির দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে বলে তার দাবি। তারা কাদের মাধ্যমে টাকা জমা নেয় যে জালিয়াতি হয়? আমি প্রয়োজনে হাইকোর্টে রিট করব তবুও আবার টাকা দেবো না। আমি স্যারকেও বলেছি এ কথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থনীতি বিভাগের এক শিার্থী বলেন, ভর্তির সময় আমরা নিজের হাতে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে পারি না। ব্যাংকের মধ্যে স্যাররা ছাত্রলীগের নেতাদের বসিয়ে রাখেন। তারাই টাকা নেন, তারাই রিসিট দেন। ব্যাংকের সিল ও স্বারসহ টাকা জমার রসিদ জমা দিয়ে আমরা ভর্তি হয়েছি। এখন রিসিট জালিয়াতি হলে তার দায়িত্ব কেন আমরা নেবোÑ প্রশ্ন এই শিার্থীর।

পুরান ঢাকার সরকারি এই কলেজের ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে এর আগেও ভর্তির সময় বিভিন্নভাবে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

কলেজের শিার্থীরা জানান, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পরে দু’জন ব্যাংকের ভেতরে বসা থাকেন সব সময়। তাদের মাধ্যমেই অর্থ জমা দিতে হয়। সব সময় নির্ধারিত অঙ্কের চেয়ে ২০০-৩০০ টাকা বেশি দিতে হয় তাদের। তবে রসিদ জালিয়াতির ঘটনা এবারই প্রথম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক কর্মকর্তা বলেন, আমার জানামতে, ডিগ্রির প্রায় ৭৭ জন ও প্রিলি মাস্টার্সের প্রায় ৩৯ জনের টাকা ছাত্রলীগ নেতারা ব্যাংকে জমা না দিয়ে রসিদ দিয়েছে। জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও এই সংখ্যা অত নয় বলে দাবি করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্য মুক্তি রানী সাহা। তবে সংখ্যাটিও প্রকাশ করেননি তিনি।

মুক্তি সাহা বলেন, এই সমস্যা এত জনের হয়নি। যাদের হয়েছে, তাদের আমার কাছে পাঠিয়ে দিন, সমাধান করে দেবো। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি হয়েছে, আপনি কলেজে আসেন সামনা-সামনি কথা বলব। আপনার ছাত্রীকে নিয়ে আসেন, সমাধান করে দেবো।

তদন্ত কমিটির সদস্য, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বদিউল আলম এ বিষয়ে এখন কথা বলতে নারাজ। তিনি বলেন, আমরা তদন্ত রিপোর্ট এখনো জমা দিইনি। এর সাথে সংশ্লিষ্টদের কথা বলছি। রিপোর্ট জমা দেয়ার আগে কিছু বলা যাবে না।

ছাত্রলীগ নেতাদের ব্যাংকে বসে টাকা জমা নেয়া ও রসিদ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বদিউল আবারো বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আগে কিছু বলা যাবে না।

এ বিষয়ে সরকার সমর্থক ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাওলাদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যাংকে তার সংগঠনের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন।

এটা তো প্রশাসনের বিষয়। ব্যাংক চালায় প্রশাসন। আমরা একটা ছাত্র সংগঠন। আমরা তো প্রশাসন চালাই না। আমরা কিভাবে এ ধরনের জালিয়াতির সাথে যুক্ত হতে পারি। তবে রসিদ জালিয়াতির অভিযোগটি শুনেছেন জানিয়ে এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, এমন হতে পারে, ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ হয়তো এর সাথে যুক্ত থাকতে পারে।

কলেজ প্রশাসন সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ দিয়ে কারও সম্পর্কে জানালে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান মাইনুল।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/200413