৩ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ১০:২৫

দেশপ্রেমের চশমা

অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে

একটি নির্বাচন কমিশন বিদায় নিলে আরেকটি নির্বাচন কমিশন আসে। নির্বাচন কমিশনাররা পাঁচ বছর সাংবিধানিক পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেন। এই স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী ড. এটিএম শামসুল হুদা কমিশন ২০০৭ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদায় নেয়। ২০১২ সালে সার্চ কমিটির অনুসন্ধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি প্রথমবারের মতো পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কাজী রকিব নির্বাচন কমিশনকে নিয়োগ দেন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদ শেষ করে এ কমিশনও বিদায় নেয়। এবার প্রথম একজন নারী সদস্যসহ পাঁচ সদস্যের নুরুল হুদা কমিশন গঠিত হয়েছে। নতুন কমিশনের নিয়োগ নিয়ে সুশীলসমাজে অনেক সমালোচনা হয়েছে। তবে এ কমিশন সবেমাত্র দায়িত্ব পেয়েছে, কাজেই এখনই এর সমালোচনা বা প্রশংসা করা যাবে না। কমিশনের কাজকর্ম, বিশেষ করে একাদশ সংসদ নির্বাচন তারা কীভাবে পরিচালনা করেন, তা পরখ করার পরই এ কমিশনের মূল্যায়ন করা ঠিক হবে। তবে রকিব কমিশন যেহেতু পাঁচ বছরের মেয়াদ পূরণ করে বিদায় নিয়েছে, সেজন্য ওই কমিশনের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন করব।

রকিব কমিশনের পাঁচ বছরের আমলনামা পরখ করলে এর শরীরে অনেক কালো দাগ লক্ষ্য করা যায়। তবে এ কমিশনের শরীরে যে একটিও সাদা পালক নেই এমন নয়। তারা দায়িত্ব গ্রহণের পর অনুষ্ঠিত চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, ২০১৪ সালে পাঁচ পর্বে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্বের উপজেলা নির্বাচন এবং বিদায়ের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বাদ দিলে অধিকাংশ নির্বাচনে এ কমিশন নিজ পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া এ কমিশনের আমলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে সন্ত্রাস-সহিংসতা, দুর্নীতি-কারচুপি ও ভোট কাটাকাটি হলেও কমিশন ওইসব দুর্নীতিবাজকে শাস্তি দিতে পারেনি। ফলে এ কমিশনের তত্ত্বাবধানে একেকটি নির্বাচনে অনিয়ম হওয়ার পর পরবর্তী নির্বাচনে নতুন উদ্যমে আরও বেশি অনিয়ম হয়েছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে ভোটাররা দলীয় ব্যবস্থাধীনে এমন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এ কমিশনের কিছু কাজের নমুনা উল্লেখ করলে বোঝা যাবে তাদের কার্যক্রম কেমন ছিল।

হুদা কমিশন ইভিএমে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে বিদায়কালে পরবর্তী (রকিব) কমিশনের ওপর মেশিনে ভোটগ্রহণের দায়িত্ব দিয়ে যায়। রকিব কমিশন ইভিএমে ভোটগ্রহণ করবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে অনেক বাদানুবাদের প্রায় সাড়ে চার মাস পর কমিশন দশম সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু হুদা কমিশনের প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে না পেরে রকিব কমিশন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে আংশিক ইভিএম ব্যবহার করে বিতর্কিত হয়। দায়িত্বে আসার অব্যবহিত পরে সীমানা পুনর্নির্ধারণ এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করে ডিসিসি নির্বাচন করতে গিয়ে কমিশন প্রথম হোঁচট খায়। সারা দেশে যখন গড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১১ জন করে খুন হচ্ছিল, তেমন এক সময়ে সিইসি ঢাকার আইনশৃংখলা পরিস্থিতির প্রশংসা করেন এবং সেনাবাহিনীর পরিবর্তে পুলিশ দিয়ে ডিসিসি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন। গাজীপুর উপনির্বাচনে সিমিন হোসেন রিমির রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্ত্বেও তার মনোনয়নপত্র বাতিল না করে বৈধ ঘোষণা করে কমিশন বিতর্কিত হয়। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে একজন ইসি কমিশনার তাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে সমালোচিত হন। নিজস্ব লোকবল থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং দশম সংসদ নির্বাচনে ইসি কর্মকর্তাদের পরিবর্তে প্রশাসকদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করে রকিব কমিশন সমালোচিত হয়।

২০১৩ সালের মধ্য জুনে অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আংশিকভাবে ইভিএম ব্যবহার করতে গিয়ে রকিব কমিশন হোঁচট খায়। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে টিটি কলেজ কেন্দ্রে ইভিএম থেকে ৩১০টি ভোট মুছে গেলে কমিশন তার কারণ নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়। ফলে পরবর্তী সময়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কমিশন ইভিএম ব্যবহার করেনি। এসব নির্বাচনে ব্যাপকভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙা হলেও কমিশন সেসব প্রার্থীকে শাস্তি না দিয়ে নিজ ক্ষমতা কেবল শোকজেই সীমাবদ্ধ রাখে। দশম সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সীমানা পুনর্নির্ধারণে কমিশন পেশাদারিত্ব দেখাতে পারেনি। ঢাকা-১৯ আসনে যেখানে ভোটার দেখা যায় ৬,৭৮,৬৫৭, সেখানে শরীয়তপুর-২ আসনে ভোটার ছিল মাত্র ১,৫২,৮৪১। লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রচলিত নিয়ম ভেঙে আইন প্রতিমন্ত্রীর মৌখিক অনুরোধে তার নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-২-এর সীমানা ইসি পুনর্নির্ধারণ করলে সরকারি দলের আট এমপি এর প্রতিবাদ করেন। রাষ্ট্রপতি নিয়োগে পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়ার সুযোগ পেয়েও কমিশন সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেনি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার আগেই বাড়তি আগ্রহ প্রদর্শন করে একমাত্র প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করে কমিশন সমালোচিত হয়।

নির্বাচন কমিশন সবসময় তার ক্ষমতা বাড়াতে চায়। হুদা কমিশন আরপিওতে ৯১-ই ধারা যোগ করে কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিল। এই ধারাবলে কোনো প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙলে কমিশন ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারত; কিন্তু রকিব কমিশন ৯১-ই ধারা বাতিল করে কমিশনের ক্ষমতা কমাতে চেয়ে বিতর্কিত হয়। পরে সর্বমহল থেকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে কমিশন তা আর করতে পারেনি। রাজনৈতিক দলে যোগদানের ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের যে তিন বছরের বাধা ছিল, তা উঠিয়ে দিয়ে রকিব কমিশন প্রশাসনের রাজনীতিকরণকে উৎসাহিত করে। দশম সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তৎকালীন সিইসি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ না করলেও ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর তিনি ভারতীয় হাইকমিশনের রাজনৈতিক কাউন্সিলর মনোজ কুমার মহাপাত্রর সঙ্গে দেড় ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বিএনপিকে দুর্বল করার লক্ষ্যে সরকারি মদদে সৃষ্ট ভুঁইফোড় রাজনৈতিক দল বিএনএফ নতুন দল হওয়ার প্রয়োজনীয় শর্তগুলো সঠিকভাবে পূরণ না করা সত্ত্বেও প্রস্তাবিত দলটিকে রেজিস্ট্রেশন দিতে তাড়াহুড়ো করে কমিশন সমালোচিত হয়।

রকিব কমিশন তড়িঘড়ি করে দশম সংসদ নির্বাচন করেও সমালোচিত হয়। কমিশন এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাদানের জন্য সবচেয়ে কম সময় দেয়। এরশাদ ও অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর নির্বাচনী সিডিউল পিছিয়ে দেয়ার অনুরোধ কমিশন আমলে নেয়নি। অভিনব চরিত্রের ওই নির্বাচনে ভোটদানের আগেই একটি দল সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করে। কমিশন চাইলে সহিংস পরিস্থিতিতে প্রাণহানি এড়াতে ১৮৯৭ সালের জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট ব্যবহার করে তফসিল বাতিল করে সরকারকে সংসদ ভেঙে দেয়ার পরামর্শ দিতে পারত। সমঝোতা প্রচেষ্টা দীর্ঘায়িত করতে পারত। কিন্তু কমিশন তা করেনি। আরপিও অনুসারে প্রার্থীদের হলফনামায় প্রদত্ত তথ্য প্রকাশ করার কথা থাকলেও সরকারি দলের অনুরোধে ইসি তা প্রকাশ করেনি। নির্বাচনটিকে পর্যবেক্ষণ-অযোগ্য মনে করে কোনো বিদেশী নির্বাচন পর্যবেক্ষক ওই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসেননি।

দশম সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমাদান ও প্রত্যাহার প্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ। তারপরও নির্বাচন কমিশন এমনই এক নির্বাচন করে, যে নির্বাচনে ১২ হাজার ভোট কেন্দ্র বা তার আশপাশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ১৭ জেলার ৪০০ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। ৪৮টি ভোট কেন্দ্রে সময়মতো নির্বাচন সামগ্রী পাঠানো সম্ভব হয়নি। ৪১টি ভোট কেন্দ্রে একটিও ভোট পড়েনি। নির্বাচনের দিনই নির্বাচন বর্জনকারীরা চাঁদপুর ও নোয়াখালীতে নির্বাচনের ‘কুলখানির’ আয়োজন করেন। নির্বাচনের সাড়ে চার মাস পর ১৪৭ আসনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্যে ৯০টি আসনে রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসার প্রেরিত ভোটের সংখ্যায় গরমিল ধরা পড়ে।

একটি বড় নির্বাচনের পর সাধারণত যথেষ্ট সময় নিয়ে আরেকটি বড় নির্বাচন করতে হয়। অথচ দশম সংসদ নির্বাচনের পরপরই রকিব কমিশন উপজেলা নির্বাচন করে। এ নির্বাচনের প্রথম পর্বে সরকারি দলের প্রার্থীরা ভালো করতে না পেরে পরবর্তী নির্বাচনী পর্বগুলোতে সন্ত্রাস-সহিংসতা বাড়িয়ে দিয়ে অধিকাংশ আসনে বিজয়ী হন। নির্বাচনে সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের কমিশন শাস্তি দেয়নি। উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ পর্ব থেকে সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা নির্বাচনের আগের রাতেই প্রিসাইডিং অফিসারকে আয়ত্তে নিয়ে কিছু ভোটের বাক্স ব্যালট কেটে ভরে রাখে। এ অপসংস্কৃতির চর্চা উপজেলা নির্বাচনের পঞ্চম পর্বে আরও ব্যাপক হয়। উপজেলা নির্বাচনকে সিইসি এতই অবহেলা করেন যে, দুই পর্ব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি সস্ত্রীক আমেরিকা চলে যান এবং নির্বাচন শেষ হলে দেশে আসেন। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত তিন সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে কমিশন মেলোড্রামা করে। প্রথমে ৪ দিনের জন্য সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হলেও পরে সেনাবাহিনীকে ক্যান্টনমেন্টে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ফলে সন্ত্রাসীদের ভোট ডাকাতির মহোৎসব করতে অসুবিধা হয়নি। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের পুলিশের পোশাক পরে ভোট কারচুপিতে অংশগ্রহণ করার সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিরোধীদলীয় মেয়রপ্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ভোট কেন্দ্রগুলো ভোটারশূন্য হয়ে গেলেও চট্টগ্রামে ১০টি ভোট কেন্দ্রে শতকরা ৯৫ ভাগেরও বেশি ভোট পড়ে। ফলে ভোটের নামে এসব নির্বাচনে কী হয়েছিল তা অনুমান করা যায়।

রকিব কমিশন প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ সম্পন্ন করতে না পারলেও ২০১৫ সালে স্মার্টকার্ড দেয়ার উদ্দেশ্যে ১৫ বছর বয়সীদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। একই বছর ২৩৪টি পৌরসভা নির্বাচনেও ব্যাপক ভোট ডাকাতি হয়। প্রতিযোগী প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটসংখ্যা বিবেচনায় নিলে এসব দুর্নীতি-কারচুপির চরিত্র অনুধাবন করা যায়। যেমন- কাজীপুর, বারৈয়ারহাট ও সন্দ্বীপ পৌরসভায় নৌকা প্রতীক যেখানে যথাক্রমে ৭৮২৫, ৫০৬৬ ও ২০৬৯০ ভোট পায় সেখানে ধানের শীষ পায় মাত্র যথাক্রমে ৮৪, ২৩৮ ও ৪৬৪ ভোট। ছয় পর্বে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড স্থাপিত হয়। এ নির্বাচনে অনেক এলাকায় ভোটারদের কেবল মেম্বার প্রর্থীদের ভোট দেয়ার জন্য ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হয়। চেয়ারম্যানের ব্যালটে আগেই সিল মেরে বিশেষদলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত করা হয়। এ নির্বাচনে ২২০ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। নির্বাচনী সহিংসতায় ১৪৫ জন নিহত এবং ১১ সহস্রাধিক লোক আহত হলেও কমিশন এসব খুনের বিচার করেনি। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের উচ্চ ব্যবধানও এ নির্বাচনের দুর্নীতি-কারচুপির ব্যাপকতা প্রমাণে যথেষ্ট। উদাহরণ হিসেবে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দাগনভূঞার মাতুভুঞা, সিন্দুরপুর, পূর্ব চন্দ্রপুর ও ইয়াকুবপুর ইউপিতে যেখানে আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান প্রার্থী পান যথাক্রমে ৯০৮৪, ১৪০৮৬, ৯৭৮৭ ও ৯০০৭ ভোট, সেখানে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীরা পান যথাক্রমে ১৬৪, ৩৩৯, ৩৬৪ ও ২৩৫ ভোট। ভোটের এ পরিসংখ্যান দেখে অনুধাবন করা যায় ওই ইউপিগুলোতে নির্বাচনের নামে কী হয়েছিল।

রকিব কমিশনের ৫ বছরের আমলনামা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করলে এ কমিশনের শরীরে আরও অনেক কালো দাগ উন্মোচন করা যাবে। ছোট পরিসরে সে চেষ্টা করা যৌক্তিক হবে না। ভবিষ্যৎ নির্বাচন গবেষকরা নিশ্চয়ই তা উদঘাটন করবেন। এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য রকিব কমিশনের সমালোচনা করা নয়। এ লেখার প্রকৃত উদ্দেশ্য হল নতুন নির্বাচন কমিশনকে রকিব কমিশনের ব্যর্থতা ও ভুলত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিতে সহায়তা করা। নতুন কমিশনের উচিত হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে রকিব কমিশনের ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে একই রকম ভুল না করা। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ভাবমর্যাদা সমুন্নত করে ফুটবল মাঠের রেফারির

মতো নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা।

ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার : অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

akhtermy@gmail.com

http://www.jugantor.com/sub-editorial/2017/03/03/105673