২ মার্চ ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:০৫

ধর্মঘটের প্রভাব কাঁচাবাজারে

পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাজধানীর কাঁচাবাজারে। মাত্র একদিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় সব ধরনের পণ্যের। বিশেষ করে বাজারগুলোতে সবজি, মাছ, মুরগিসহ অন্য নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানীর খেটে খাওয়া মানুষ। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে রাজধানীতে বাইরের জেলাগুলো থেকে মাছ, মুরগি বা সবজি আসতে পারছে না। রাজধানীর আশেপাশের এলাকা থেকে সীমিত মাছ ও সবজি আসছে। ফলে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। এমনকি বাড়তি দাম দিয়েও কোনো কোনো খুচরা ব্যবসায়ী পণ্য সংগ্রহ করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন তারা। তবে যেসব পণ্য মজুত রাখা যায়, সেসব পণ্যের দাম যেমন পিয়াজ, তেল ও আলুর মূল্য স্বাভাবিক আছে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে ফার্মের মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। মাছের দাম ধরন ভেদে কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আর সকল প্রকার সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা এবং মাংসের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে।

সরজমিন দেখা গেছে, মঙ্গলবার বয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে আর লাল কক ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়। আর গতকাল ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা এবং কক মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে। বিক্রেতা রহিম মুন্সি বলেন, ধর্মঘটের কারণে আড়তে মুরগি আসছে না। ফলে আমাদের মুরগি বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে, তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। আরেক বিক্রেতা বলেন, শুক্রবার বাদে অন্য স্বাভাবিক দিনে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি লাল কক মুরগি বিক্রি করি। এখন এনেছি মাত্র ৫টি। তাও মহাজনের কাছ থেকে বেশি দাম দিয়ে এক প্রকার জোর করে আনতে হয়েছে। বেশি দামে কিনলে তো বেশি দামে বিক্রি করতেই হয়। আমরা তো আর লস দিয়ে বিক্রি করবো না। এদিকে ব্রয়লার মুরগির সংকটে বেড়ে গেছে গরু ও খাসির মাংসের দামও। প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৯০ থেকে ৫০০ টাকায়। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়। মঙ্গলবার গরুর মাংস বিক্রি হয়েছিল ৪৬০ থেকে ৪৮০ টাকায়। আর খাসির মাংস ৬৫০ টাকা থেকে ৬৭০ টাকায়। আর গতকাল ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছে বিক্রেতারা।

সেগুনবাগিচা বাজারে আসা ক্রেতা আফজাল হোসেন জানান, বাসায় নতুন মেহমান এসেছেন। তাই বাজারে মাংস কিনতে এসেছি। কিন্তু সব মাংস বিক্রেতাই অতিরিক্ত দাম চাচ্ছেন। গরুর মাংস কিনতে হয়েছে ৫০০ টাকা কেজি দিয়ে। আর খাসির মাংস কিনেছি ৬৮০ টাকা কেজি দরে।

কাওরান বাজারের মাছ বিক্রেতা রইছ উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার প্রতিকেজি তেলাপিয়া মাছ বিক্রি করেছি ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। আজ (গতকাল) বিক্রি করছি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া, এই বাজারে ১ কেজির ওপরে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে। যা মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছিল ২২০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। ছোট রুই-মৃগেল (নলা মাছ) বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে, যা মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে।

এদিকে সবজি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে, যা মঙ্গলবার ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। মঙ্গলবার যে লাউ ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস। ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া টমেটোর দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৪৫ টাকা। ৩০ টাকার করলা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। যে গাজর প্রতিকেজি ১২ টাকায় বিক্রি হয়েছে গতকাল তা ১৬ টাকায়, ৩০ টাকা কেজির চিচিঙ্গা ৩৬ টাকায়, ২০ টাকা কেজির বেগুন ৩০ টাকায়, ১০ থেকে ১১ টাকা কেজির আলু ১৫ টাকায়, ৩০ টাকার কুমড়া ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাক ও কলমিশাক প্রতি আটিতে দুই থেকে তিন টাকা করে বেড়েছে।

এদিকে শ্রমিকদের অভিযোগ, যে গাড়ি রাত ১০টায় আসার কথা, ওই গাড়ি রাত ১টায় এসেছে। এই ধর্মঘটে আমাদের গরিবের পেটে লাথি পড়ছে বলে মন্তব্য করেন তারা। দামের ব্যাপারেও পাইকার-আড়তদারদের ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

উল্লেখ্য, সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের প্রাণহানির মামলায় ঘাতক বাসের চালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। গত ২২শে ফেব্রুয়ারি দেয়া এই রায়ের প্রতিবাদে প্রথমে আঞ্চলিকভাবে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। এদিকে সাভারে ট্রাকচাপায় এক নারীকে হত্যার দায়ে চালকের বিরুদ্ধে সোমবার মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আদালত। এরপরই সারা দেশে ধর্মঘট আহ্বান করে পরিবহন শ্রমিকরা।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=55689