২৯ ডিসেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ১১:৫৬

বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের বক্তব্যে আলোড়ন: আবারো আলোচনায় রিমান্ড ও জামিন

পুলিশি রিমান্ড এবং অভিযুক্তের জামিনপ্রাপ্তির অধিকার নিয়ে গত রোববার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের বক্তব্যে বিচার বিভাগে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ওই সম্মেলনে সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী বলেন, পুলিশ রিমান্ড ভালোবাসার জন্য নয়। আসামির ওপর থার্ড ডিগ্রি পদ্ধতি প্রয়োগের জন্যই রিমান্ডে নেয়া হয়। নির্যাতন করে আসামির কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য আদায় করাই রিমান্ড। তিনি বলেন, হাইকোর্টের একটি রায় আছে যাতে জেল গেটে রিমান্ডে নেয়ার জন্য বলা হয়েছিল। জেল গেটে রিমান্ড নিয়ে নির্যাতন করলে সেটা প্রকাশ পেয়ে যাবে। এ জন্য সেখানে নিয়ে কী লাভ? তাই কোনো আসামির পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুরের আগেই নি¤œ আদালতের বিচারকদের কেস ডায়েরি পর্যালোচনা করতে হবে। জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী এ মত দেন।
জামিন স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, একটা জামিন পেলে সাথে সাথেই উচ্চ আদালতে তা স্থগিত হয়ে যায়। এটা কেন? জামিন পাওয়া তার অধিকার। কারণ একটা মানুষের সাংবিধানিক স্বাধীনতা আছে। পুলিশ বা অন্য কারো কথায় সেই স্বাধীনতা খর্ব করা যায় না। এই জামিন যদি আদালত দিয়ে থাকেন, ওই আদালতের সে এখতিয়ার ছিল কি ছিল না, সেটা দেখতে হবে। আদালতের যদি এখতিয়ার থাকে জামিন দিতে পারেন। কিন্তু স্টে করার তো কোনো আইন বা বিধান নেই। আমরা হুট করে স্টে করে দিই। কয়েক মাস পরে ওই আপিল আদালতই বলেন জামিন দেয়া ঠিক ছিল, তাহলে যে জামিনপ্রাপ্ত আসামি কয়েক মাসের দুর্ভোগ পোহাল এর জন্য কে দায়ী থাকবে? আপনারা এটা খুব বেশিভাবে খেয়াল করবেন।
মাহমুদুল আমীন চৌধুরী বলেন, বিচারকাজ পরিচালনায় বিচারকদের সাহস থাকতে হবে। যাদের সাহস নেই তারা বিচারাঙ্গন ছেড়ে চলে যান। কারণ আইন অন্ধ হতে পারে, কিন্তু বিচারকেরা অন্ধ নন। পুলিশ আবেদন করলেই রিমান্ড মঞ্জুর করার এই অন্যায় রোধে বিচারকদের সাহস থাকতে হবে। আর সেটি বিচারকাজে প্রয়োগ করতে হবে।
তিনি বলেন, নি¤œ আদালতের বিচারকদের সুরক্ষা প্রদানের কাজটি সুপ্রিম কোর্ট ও প্রধান বিচারপতিকেই নিতে হবে, যাতে তারা কোনো চাপ বা ভয়ে কোনো ধরনের আদেশ না দেন। এটা করা গেলেই বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকবে। কাউকে খুশি বা নারাজ করার জন্য নয়, আইন অনুযায়ী বিচার করতে হবেÑ এটাই মূল কথা। নি¤œ আদালতের বিচারকদের বদলি প্রসঙ্গে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকার কোনো বিচারককে বদলির জন্য সুপারিশ পাঠালে তা অনুমোদন করা যাবে না। রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন রয়েছে, যেখানে বিচারকদের তিন বছরের আগে বদলি করা ঠিক নয়। অনেক সময় প্রশাসনিক কারণে বদলি হতে পারে। রায় কারো বিরুদ্ধে দিয়েছেন, এ কারণে বদলির সুপারিশ অনুমোদন করা যাবে না। এই অন্যায় বদলির বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। এটা না করতে পারলে বিচার বিভাগ থাকবে না।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, রাষ্ট্রের প্রতিটি সংস্থা অন্য সংস্থার ওপর আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। শুধু সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোই নয়, রাষ্ট্রের বিভাগগুলোও এ প্রতিযোগিতার বাইরে নেই। কেবল বিচার বিভাগই এর ব্যতিক্রম। যারা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকেন, তাদের মধ্যে এ আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা বেশি মাত্রায় প্রতীয়মান হয়। কিন্তু বিচার বিভাগ কখনো এ প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি এবং করবেও না।
এ বিষয়ে প্রবীণ আইনবিদ অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, প্রশাসন কখনো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চায় না। তারা সব সময় বিচার বিভাগকে তাদের ক্ষমতার উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে চান। তাই আপিল বিভাগের নির্দেশ সত্ত্বেও দীর্ঘ দিন পর্যন্ত মাসদার হোসেন মামলার রায় বাস্তবায়ন করতে প্রশাসন অনীহা দেখাচ্ছে। এটা কোনো স্বাধীন দেশে কাম্য হতে পারে না। বিচার বিভাগকে অবশ্যই তার যোগ্য মর্যাদা সহকারে সংবিধানের আলোকে কাজ করতে সুযোগ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি যা বলেছেন, তার সাথে দ্বিমত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
জামিন স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক জামিনসহ অনেক অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে যায়। পরে দেখা যায় বেশির ভাগ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ আপিল বিভাগ বহাল রাখেন। কিন্তু মাঝখানে বিচারপ্রার্থীরা হয়রানির শিকার হন। তাই আমি মনে করি, হাইকোর্ট যেসব অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন, একমাত্র জরুরি কোনো বিষয় ছাড়া আপিল বিভাগের হস্তক্ষেপ কাক্সিক্ষত নয়। আপিল বিভাগ প্রয়োজনে হাইকোর্টকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিষ্পত্তির আদেশ দিতে পারেন। তা হলে দেখা যাবে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস যেভাবে আপিল বিভাগে স্থগিত করার জন্য যায়, সেই প্রবণতা দূর হবে এবং আপিল বিভাগেও মামলার সংখ্যা অযথা বৃদ্ধি পাবে না।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ বলেন, যে মামলায় সাক্ষ্য অপ্রতুল সে মামলায় সাক্ষ্য প্রতুল করার জন্য রিমান্ডে নেয়া হয়। দেখা যায় রাজনৈতিক কারণে ঢালাওভাবে রিমান্ড চাওয়া হয় এবং সেভাবে রিমান্ডে নেয়া হয়। অতীতে কখনো এভাবে ১৫-২০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়নি। আইনগতভাবে রিমান্ডে আসামির গায়ে হাত দেয়ার অধিকার নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে শারীরিকভাবে নিপীড়ন-অত্যাচার, পরে আদালতে আনলে আসামি বলছে তাকে অত্যাচার করা হয়েছে। জামিন স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালত মামলার নথি পর্যালোচনা ও বিচার বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তের জামিন দিয়ে থাকেন। জামিনের অপব্যবহার না হলে জামিন প্রদানকারী আদালত বা অন্য কোনো আদালতের তা স্থগিত করা ঠিক হবে না।
বিচার বিভাগের কাজের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অন্যান্য বিভাগের কাছ থেকে সহযোগিতার প্রত্যাশা করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, ‘আমরা বরং সব সময় রাষ্ট্রের বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। আর এর জন্য শাসনতন্ত্র আমাদের ওপর যতটুকু দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পণ করেছে, আমরা শুধু ততটুকুই করব। আমি আশা করব, রাষ্ট্রের অন্যান্য বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান বিচার বিভাগকে সেভাবেই সহযোগিতা করবে।’
উল্লেখ্য, বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা ও রিমান্ড-সংক্রান্ত ১৬৭ ধারা নিয়ে সম্প্রতি ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ দুই ধারার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ রায়ে ১০ দফা নীতিমালা বা গাইডলাইন প্রদান করেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনের বিষয়েও সাত দফা নির্দেশনা দেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য সুপ্রিম কোর্টের ১০ দফা গাইডলাইন : গ্রেফতারের স্থান ও সময়ে ব্যক্তির স্বাক্ষরসহ গ্রেফতারের পরপরই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ বিষয়ে একটি মেমোরেন্ডাম তৈরি করবেন। গ্রেফতারের সময় ও স্থান এবং আটক রাখার জায়গা গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির আত্মীয়কে জানাতে হবে। আত্মীয়স্বজন না পেলে ব্যক্তির নির্দেশনা মোতাবেক তার বন্ধুকে জানাতে হবে, এই কাজে ১২ ঘণ্টা অতিক্রম করা যাবে না। কোন যুক্তিতে, কার তথ্যে বা অভিযোগে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, ঠিকানাসহ তা কেস ডায়েরিতে লিখতে হবে। আটক ব্যক্তি কোন কর্মকর্তার তদারকিতে রয়েছেন, তাও উল্লেখ করতে হবে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতারের জন্য কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো যাবে না। গ্রেফতারের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও উপস্থিত মানুষের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের পরিচয় বলতে হবে, প্রয়োজনে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির শরীরে কোনো ইনজুরি থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য তা রেকর্ড করে চিকিৎসার জন্য তাকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের কাছ থেকে সনদ নিতে হবে। ব্যক্তির গ্রেফতার যদি তার বাসা বা কর্মক্ষেত্র থেকে না হয়, সে ক্ষেত্রে থানায় নেয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে বিষয়টি তার স্বজনকে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি চাইলে যেকোনো স্বজনের সাথে সাক্ষাৎ বা আইনজীবী থেকে পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। কোনো ব্যক্তিকে যখন আদালতে হাজির করা হয়, তখন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তার ফরওয়ার্ডিং লেটারে উল্লেখ করবেন, কেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত শেষ করা সম্ভব নয়, ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ সুনির্দিষ্ট বলে তিনি মনে করছেন, তাও উল্লেখ করতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য : উঁচুমানের পেশাগত দায়িত্বশীলতা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মানুষকে সুরক্ষা ও কমিউনিটিকে সেবা দেবেন; নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব তারা পালন করবে আইন মেনে। দায়িত্ব পালনকালে তারা মানুষের মর্যাদা রক্ষা ও সম্মান করবে এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখবে।
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কেবল দায়িত্ব পালনে আবশ্যক হলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্তি প্রয়োগ করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ নিষ্ঠুর-অমানবিক-মর্যাদাহানিকর কোনো আচরণ, নির্যাতন বা শাস্তি প্রদান অথবা তাতে উসকানি দেয়ার ঘটনা সহ্য করবে না।
সংবিধান স্বীকৃত নাগরিক অধিকারের প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেবল সম্মানই দেখাবে না, তা মেনেও চলবে।
মানুষের জীবন যেহেতু সবচেয়ে মূলবান সম্পদ, সেহেতু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানুষের জীবন ও মর্যাদা রক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রাথমিক চেষ্টা থাকবে অপরাধের পথ বন্ধ করার দিকে। একটি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর সক্রিয় হওয়ার চেয়ে আগেই তা প্রতিহত করা উত্তম।
ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারকদের জন্য গাইডলাইন : ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭(২) ধারা অনুসারে ডায়েরির অনুলিপি ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে আদালতে হাজির করে আটকাদেশ চাইলে ম্যাজিস্ট্রেট, আদালত, ট্রাইব্যুনাল একটি বন্ড গ্রহণ করে তাকে মুক্তি দিয়ে দেবেন।
আটক কোনো ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্য কোনো সুনির্দিষ্ট মামলায় যদি গ্রেফতার দেখাতে চায়, সে ক্ষেত্রে যদি ডায়েরির অনুলিপিসহ তাকে হাজির না করা হয়, তাহলে আদালত তা মঞ্জুর করবেন না, গ্রেফতার দেখানোর আবেদনের ভিত্তি না থাকলে বিচারক আবেদন খারিজ করে দেবেন।
উপরোক্ত শর্ত অনুসারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির আটকের ১৫ দিনে মামলার তদন্ত শেষ না হলে এবং মামলাটি যদি দায়রা আদালত বা ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক এক্সক্লুসিভলি বিচারযোগ্য হয়, সে ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যক্তিকে ৩৪৪ ধারা অনুসারে রিমান্ড দিতে পারে, যা একবারে ১৫ দিনের বেশি হবে না।
ফরওয়ার্ডিং লেটার এবং মামলার ডায়েরিতে তাকে আটক রাখার মতো যথাযথ উপাদান পাওয়া গেলে বিচারিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করা পর্যন্ত আদালত পুনঃআটকের আদেশ দিতে পারেন। কোনো কাজ থেকে বিরত রাখতে ইতোমধ্যে গ্রেফতার কোনো ব্যক্তিকে আটকের আবেদন বিচারক মঞ্জুর করবেন না। ১৬৭ ধারায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কোনো আদালতে হাজির করা হলে শর্তগুলো পূরণ করা হয়েছে কি না, সেটা দেখা ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারকের দায়িত্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ যদি কাউকে আইনের বাইরে গিয়ে আটক করে থাকে, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট দণ্ডবিধির ২২০ ধারায় তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন।
হেফাজতে কারো মৃত্যু হলে বিচারক মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে মৃতব্যক্তিকে পরীক্ষা করবেন, এমনকি দাফন হয়ে গেলেও সেটা করতে হবে। নিপীড়নে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদন পাওয়া গেলে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুসারে ওই কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কমান্ডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নিতে হবে।
মেডিক্যাল প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে নির্যাতনের ফলে হেফাজতে মৃত্যু বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হলে বিচারক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই অপরাধ আমলে নেবেন; মামলা দায়েরের অপেক্ষা করবেন না। আর এ নির্দেশনা সার্কুলার দিয়ে জারি করার জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেল, পুলিশের আইজি ও র্যাবের ডিজিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ১০ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারের স্বাক্ষরের পর ৫৪ ও ১৬৭ ধারা নিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে ৫৪ ও ১৬৭ ধারার কিছু বিষয় সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করেন। এ বছরের ২৪ মে এর বিরুদ্ধে আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/182693