১ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ১:২৯

অনিশ্চয়তায় মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প

অনিশ্চয়তায় পড়তে যাচ্ছে মাতারবাড়ী এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ প্রকল্প। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, জাপানের অর্থায়নে বাংলাদেশের অন্যতম বড় এ প্রকল্পটি নির্মাণের সময় ইতোমধ্যে দুই দফা পেছানো হয়েছে। কিন্তু দরপত্র জমাদানকারী একটি কোম্পানির আর্থিক সঙ্কটের কারণে নির্মাণকাজ আরেক দফা পেছানো হতে পারে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। আর এটা হলে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে পড়ে যাবে।

জানা গেছে, সরকার ২০১৫ সালের আগস্টে চট্টগ্রামের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন এ কেন্দ্র নির্মাণে ৩৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। এতে কয়লা ওঠা-নামানোর জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাথে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একনেকে অনুমোদন পাওয়া কার্যপত্রে বলা হয়েছে, এ প্রকল্পে ২৯ হাজার কোটি টাকা দেবে জাপানের উন্নয়ন সাহায্য সংস্থা জাইকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদার নিয়োগের সিদ্ধান্ত অনুসারে কোল পাওয়ার জেনারেশন অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) ২০১৫ সালের ৪ জুন প্রি-কোয়ালিফিকেশনের (পিকিউ) আবেদন আহ্বান করে। দরপত্র যাচাই-বাছাই শেষে দু’টি কোম্পানি চূড়ান্ত করা হয়। মূল্যায়ন কমিটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে দু’টি কোম্পানিকে মূল দরপ্রস্তাব দাখিলের আহ্বান জানানো হয়। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, গত ৩১ জানুয়ারি কোম্পানি দু’টি দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হোলে আর্টিজান বেকারিতে নিহত বিদেশীদের মধ্যে সাতজন জাপানের নাগরিক থাকায় নিরাপত্তার কারণে দরপত্র প্রক্রিয়া স্থগিত করেছিল বাংলাদেশ সরকার। পরে দু’টি কোম্পানি এ দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। 

প্রকল্পের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ‘আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি’ ব্যবহার করা হবে, যাতে কেন্দ্রের কর্মদক্ষতা হবে ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশের তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর গড় কর্মদক্ষতা ৩৪ শতাংশের বেশি নয়।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, যে দু’টি কোম্পানিকে চূড়ান্ত করা হয় তার একটির আর্থিক সঙ্কটের কারণে প্রকল্পের কাজ আবার পেছানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ওই সূত্র জানিয়েছে, পিকিউ আবেদন জমা দেয়া একটি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যদিও কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন এখনো দাফতরিকভাবে জমা দেয়া হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি ৪৯ হাজার ৯৯০ কোটি জাপানি ইয়েন লোকসান দিয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে এ লোকসানের পরিমাণ ছিল ৪৭ হাজার ৯৪০ কোটি ইয়েন। চলতি বছরেও মোটা অঙ্কের লোকসানের আভাস দিয়েছে কোম্পানিটি।

পর পর দুই বছর লোকসানের মুখে পড়া কোম্পানিটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে কতটুকু সক্ষমতা রাখে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে খোদ দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, যে কোম্পানিটি পর পর দুই বছর লোকসানের মুখে পড়েছে, চলতি বছরেও লোকসানে পড়বে বলে আগাম ঘোষণা দিয়েছে ওই কোম্পানি দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ পরিস্থিতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ সংস্থানের জন্য কোম্পানিটি সরকারের কাছে আবেদন করলে সরকারের কিছুই করার থাকবে না। পরিস্থিতি বিবেচনা করে দরপত্র মূল্যায়ন না করলে প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে পড়বে। তবে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প যথাসময়ে শেষ হবে। এ বিষয়ে কোনো আপস করা হবে না। 

গতকাল মঙ্গলবার ১০ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন করার ওপর এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সরকারের মাস্টার প্লানে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ আরো কয়েকটি বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা যাবে। অর্থাৎ তুলনামূলক কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।