১ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ১:২৮

গণিত পরীক্ষা বাতিল হচ্ছে না

এসএসসি পরীক্ষার গণিতের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে গতকাল পর্যন্ত কোনো নির্দেশনাও দেয়া হয়নি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা শুরুর ৪০ মিনিট আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কথা স্বীকার করে। অথচ গত ১৬ দিনেও এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো নয়া দিগন্তকে জানায়। এ অবস্থায় এসএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা আগামীকাল শেষ হচ্ছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি সাধারণ সব ক’টি বোর্ডে গণিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর ৪০ মিনিট আগে ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড শুধু নয় রাজশাহী, কুমিল্লা বোর্ডেও একই বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের খবর প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। ওই দিন আন্তঃবোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকারকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ সম্পর্কে শিক্ষা সচিব মো: সোহরাব হোসাইন ও অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) রুহী রহমান শিক্ষা বোর্ডের ওই দুই শীর্ষ কর্মকর্তার সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন এবং প্রশ্ন ফাঁসের উৎস খোঁজার নির্দেশ দেন। সরকারি ট্রেজারিতে আরো নজরদারি কিভাবে করা যায় তার উপায় বের করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। 

অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমান গতকাল বলেন, পরীক্ষার প্রশ্নের নিরাপত্তা আরো কিভাবে নিশ্চিত করা যায় তা খোঁজা হচ্ছে। প্রশ্নের নিরাপত্তা কৌশলও পাল্টে ফেলা যায় কি না, তা বিবেচনা করা হচ্ছে। যে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, তা নিয়ে নতুন করে ভাবনার অবকাশ নেই। আমরা প্রশ্নের নিরাপত্তা আরো নিশ্চিত ও জোরদার করতে তৎপর রয়েছি।

চলতি এসএসসি পরীক্ষায় গণিতের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠার পর শিক্ষামন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন, এসএসসির গণিতে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরীক্ষা বাতিল করা হতে পারে। তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। যদি সত্যিই প্রমাণিত হয় যে, আগেই (গণিতের) প্রশ্ন আউট হয়ে গিয়েছিল এবং তার ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথবা কেউ লাভবান হয়েছে, তা হলে নিশ্চয় আমরা গণিতের পরীক্ষা বাতিলের বিষয় ভাববো। আমরা বিভিন্নভাবে বিষয়টি তদন্ত করছি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগের রাতে গণিতে যে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল, তা মূল প্রশ্নের সাথে মিলেনি। তবে পরীক্ষা শুরুর ৪০ মিনিট আগে গণিতের প্রশ্ন পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে চলে আসে বলে স্বীকার করেন শিক্ষামন্ত্রী। 

এ দিকে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: মাহাবুবুর রহমান নয়া দিগন্তকে গতকাল বলেছেন, গণিত পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পত্রিকান্তে খবর বেরিয়েছিল পরীক্ষা শুরুর ৪০ মিনিট আগে গণিতে প্রশ্নপত্র বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া গেছে। তিনি আরো বলেন, ৪০ মিনিটি আগে তো প্রশ্নপত্র বিতরণের জন্য খোলা হয়। আর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করে। তা হলে এ প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের ফলে কারা লাভবান হলো ? তাই গত ১২ তারিখে অনুষ্ঠিত গণিত পরীক্ষা বাতিলের প্রশ্ন আসে না। তিনি আরো বলেন, এখন পরীক্ষা বাতিল করা হলে শিক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। 

তবে, প্রশ্ন ফাঁসের উৎস উদ্ধারে ব্যর্থতায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, প্রশ্ন ফাঁসে কারা মদদ দিচ্ছে বা কারা এর সাথে জড়িত তা খুঁজে বের করতেই হবে। না হলে শিক্ষায় সব অর্জনই ম্লান হয়ে যাবে। প্রশ্ন ফাঁস রোধ করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। না হলে পরীক্ষার বিকল্প খুঁজতে হবে।

এদিকে আগামীকাল এসএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ হচ্ছে। তবে মাদরাসা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষা শেষ হবে আরো চার দিন পর ৫ মার্চ। সাধারণ বোর্ডগুলোতে ৫ মার্চ থেকে ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হবে ও ১১ মার্চের মধ্যে শেষ করতে হবে। 
লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ আগামী ২ মে’র মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন, আন্তঃবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির আহ্বায়ক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান।