৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, রবিবার, ১১:১৪

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ০৭ ফেব্রুয়ারী প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে দেশের জনগণ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত।

সারা দেশ জুড়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেণ্ডারবাজি, গুম, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন সাংঘাতিকভাবে বেড়ে গিয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারী ঢাকা মহানগরীর শাহ আলী থানার একজন পুলিশ চাঁদা না পেয়ে চা দোকানদার বাবুল মাতব্বরের কেরোসিনের চুলায় লাঠি দিয়ে আঘাত করলে কেরোসিন ছিটকে বাবুল দগ্ধ হয়ে পরের দিন ৪ঠা ফেব্রুয়ারী মুত্যুবরণ করে (ইন্না ......... রাজিউন)। এ ঘটনায় দেশের জনগণ মর্মাহত ও বিক্ষুব্ধ। এক পরিসংখ্যাণে দেখা যাচ্ছে যে, বর্তমানে দেশে প্রতি ঘণ্টায় একজন লোক নিহত হচ্ছে।

দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির পরিবর্তে আরো অবনতি ঘটাচ্ছে। তাদের নীতি-নৈতিকতার চরম অবক্ষয় ঘটেছে। গত ৯ জানুয়ারী বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা জনাব গোলাম রাব্বীকে মোহাম্মদপুর থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ শিকদার মারধর করেছে। গত ২০ জানুয়ারী ব্যাংক এশিয়ার কর্মচারী আইয়ুবকে পিটিয়েছে এক পুলিশ। গত ৩ ফেব্রুয়ারী গাজিপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার ইউএনও-এর নিকট থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসানের বিরুদ্ধে ক্যাশ বাক্স ভেঙ্গে সাড়ে তিন লাখ টাকা ছিনতাই এর অভিযোগ করেছে শফিকুল ইসলাম নামক এক ব্যবসায়ী। ঢাকা সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তাকে পুলিশ পিটিয়েছে এবং বলেছে যে, ‘মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা পুলিশ’। এ থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে, পুলিশ অর্থের লোভে বেপরোয়া হয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটাচ্ছে। আইজিপি জনাব একেএম শহিদুল হক পুলিশের দ্বারা সংঘটিত ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার’ অপচেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু এ সব ঘটনা মোটেই কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পুলিশের বিরুদ্ধে গত এক বছরে ৩০ হাজার অভিযোগের তথ্য আজকে (৭-০২-১৬) সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।

মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার এক পরিসংখ্যাণে দেখা যাচ্ছে যে, দেশে শিশু ও নারী নির্যাতন ব্যাপক হারে বেড়েছে। গত ২০১৫ সালে ধর্ষিতা হয়েছে ১৪১টি শিশু। ২০১৪ সালে ধর্ষিতা হয়েছিল ১১৫টি শিশু। ২০১৫ সালে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ১৪০ জন লোক এবং ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে প্রায় ১৫৫ জন লোক। ২০১৪ সালে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছিল ৭৫ জন লোক। মহিলা পরিষদ জানিয়েছে যে, গত ২০১৫ সালের ৭ মাসে ১৯১টি শিশুকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রদত্ত তথ্যে জানা গিয়েছে যে, চলতি বছরের জানুয়ারী মাসেই ১৫০টি শিশু অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালে শিশু অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল ৮০২টি এবং ২০১৪ সালে ৯২০টি শিশু অপহৃত হয়েছে।

চলতি বছরের গত ৫ ফেব্রুয়ারী কেরানীগঞ্জ উপজেলায় আব্দুল্লাহ নামে ১১ বছরের একটি শিশুকে দুর্বৃত্তরা অপহরণ করে হত্যা করেছে। গত ২৮ জানুয়ারী কুষ্টিয়া শহরের মঙ্গল বাড়িয়া আশরাফিয়া উলুম মাদ্রাসা থেকে মাদ্রাসা ছাত্র আবুজর গিফারীকে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা অপহরণ করেছে। গত ২৫ জানুয়ারী ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার পাঁচপাড়া থেকে স্কুল ছাত্রী সুমাইয়াকে (১৩) দুর্বৃত্তরা অপহরণ করেছে। গত ২৭ জানুয়ারী দুর্বৃত্তরা ধামরাই থেকে শাকিল ও ইমরান নামক দুই শিশুকে অপহরণ করে দেড় লাখ টাকা দাবি করে এবং টাকা না পেয়ে তাদের হত্যা করেছে। গত ৩০ জানুয়ারী সাভারের শিশু শিহাবকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় অপহরণকারীরা মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে শিশুদের হত্যা করে। এসব ঘটনা থেকেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কী সাংঘাতিক অবনতি ঘটেছে।

বর্তমান সরকার দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার জন্য বেআইনীভাবে ব্যবহার করার কারণেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেপরোয়া হয়ে অর্থের লোভে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটাচ্ছে। এ অবস্থার উন্নতি করতে হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার বন্ধ করে আইনানুগভাবে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া আবশ্যক।

চা বিক্রেতা বাবুল মাতব্বরকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা করার ঘটনাসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত সকল অপরাধের ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”