২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, রবিবার, ১১:০৪

নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ

জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচনে বর্তমান নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ২৮ ফেব্রুয়ারী প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই নির্বাচন কমিশনের কাজ। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে সংবিধানে অনেক ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে। এ সব ক্ষমতা যথাযথভাবে প্রয়োগ করলে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা যেতে পারে।

নির্বাচন চলাকালীন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যাস্ত করা হয়। নির্বাচন কমিশনের বলিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভূমিকা থাকলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ পালন করতে বাধ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা একপেশে ও রহস্যজনক। এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনই অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করায় ভোটার উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। ৪৭টি ভোট কেন্দ্রে একজন ভোটারও ভোট দেয়নি। অথচ এ নির্বাচনে শতকরা ৪০ ভাগ ভোট পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দেয়।

এরপর উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাচন ৬ ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত প্রার্থীরা ভাল ফলাফল করে। পরবর্তীকালে সরকার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পরবর্তী ধাপগুলোতে আর সুষ্ঠু নির্বাচন হতে দেয়নি। ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও কেন্দ্র দখল করে ব্যালট কেটে বাক্স ভর্তি করা, নির্বাচনের আগের রাতে কেন্দ্র দখল করে নেয়া, বিরোধী দলের প্রার্থী, এজেণ্ট, সমর্থক এবং ভোটারদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভোটারদের ওপর হামলা করা ইত্যাদি কর্মকান্ড করে জোর করে বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজিত করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতেই এসব অপকর্ম সংগঠিত হলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। কারণ অপরাধীরা সকলেই সরকারী দলের লোক। পৌরসভা নির্বাচনেও একই কায়দায় ব্যালট বাক্স ছিনতাই, বিএনপি ও জামায়াতের পোলিং এজেণ্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, ব্যালট কেটে বাক্সে ঢোকানো ইত্যাদি কর্মকান্ড করে সরকারী দলের প্রার্থীদেরকে বিজয়ী করা হয়। ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও একই কায়দায় ভোট ডাকাতি করা হয়। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কোন ভূমিকাই ছিল না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ সব ক্ষেত্রে দফায় দফায় নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তারা কোন কার্যকর ভূমিকাই গ্রহণ করেনি।

সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আসন্ন। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ৬ ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপের নির্বাচনে নমিনেশন পেপার সাবমিটে বাধা দেয়া হয়। প্রায় শতাধিক প্রার্থী তাদের নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে পারেনি, যা অতীতে কোন সময় দেখা যায়নি। ইউনিয়ন পরিষদের মত নির্বাচনে ইতোমধ্যেই ৫১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনই ঘটেনি। যারা নমিনেশন পেপার সাবমিট করেছেন তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে বাড়ি-ঘরে হামলা করে তাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন সরকারের এ অন্যায় কর্মকান্ডে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ফলে উৎসব মুখর নির্বাচন তো দূরের কথা, নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে অনেকেই মহাবিপদে পড়েছেন। সরকার যেভাবে চাচ্ছে, নির্বাচন কমিশন সেভাবেই নির্বাচন পরিচালনা করছে। মেরুদন্ড হীন এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যে সম্ভব নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ না থাকলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। তাই আমি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ এবং বস্তুনিণ্ঠ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় নির্বাচনের নামে গণতন্ত্র নির্মূলের এ সর্বনাশী কর্মকান্ডের সমস্ত দায়-দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকেই বহন করতে হবে।”