১৫ জুন ২০১৬, বুধবার, ৪:৫৭

জামায়াত শিবিরসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা

সারাদেশে গত কয়েক দিন যাবত জঙ্গি ধরার নামে গণগ্রেফতার অভিযান চালিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান আজ ১৫ জুন প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “সরকার জঙ্গি ধরার নামে সারাদেশে গণগ্রেফতার অভিযান চালিয়ে গত ৫ দিনে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবির ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীসহ প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার মানুষকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার ঘটনা সম্পূর্ণ অমানবিক ও বেআইনী।

সরকার জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে দেশের কারাগারগুলো ভরে ফেলেছে। সরকার বিশেষভাবে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদেরকে টার্গেট করে গ্রেফতার করছে। সারা দেশে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের হাজার হাজার নেতা-কর্মী, সমর্থককে সরকার অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। দেশে মোট ৬৮টি কারাগার রয়েছে। এ সব কারাগারের ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৩৪ হাজার ৬৮১ জন। অথচ বর্তমানে কারাগারগুলোতে ৭৬ হাজারের অধিক মানুষকে ঠাসাঠাসি করে রাখা হয়েছে। এতে বন্দিরা ঠিকমত খাদ্য, পানীয় ও চিকিৎসা পাচ্ছে না। উপরন্তু ঠিকমত গোসল ও টয়লেট ব্যবহার করতে পারছে না। অনেক বন্দি স্থান সংকুলান না হওয়ায় টয়লেটে বসে রাত কাটানোর খবরও পাওয়া যাচ্ছে। জুন মাসের এ তীব্র গরমের মধ্যে বন্দিরা অমানবিক জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে কারাগারে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে যে, গ্রেফতারকৃত সাড়ে ১৪ হাজার লোকের মধ্যে তারা ১১৯ জন তথাকথিত জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। তথাকথিত ১১৯ জন জঙ্গিকে যদি তারা সনাক্ত করতে সক্ষম হয়ে থাকে তাহলে বাকী লোকদের তারা গ্রেফতার করে জেলে পাঠাচ্ছে কোন্ যুক্তিতে বা কোন আইনে।

বিশ্বের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোকে পবিত্র রমযান মাসে সরকার রোজাদার লোকদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগীতা করে থাকে এবং রমযানের পবিত্রতা রক্ষা করে। এমনকি যে সব দেশে মুসলিমগণ সংখ্যালঘু সে সব দেশেও সরকার রমযান মাসে রোজাদার মুসলমানদের সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে এবং রোজাদারদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি মুসলিম দেশ হওয়া সত্বেও সরকার রোজাদার মুসলমানদের সাহায্য-সহযোগিতা তো করেই না, উপরন্তু রমযান মাসে জঙ্গী ধরার নামে অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার রোজাদার মুসলমানদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে অমানসিকভাবে কষ্ট দিচ্ছে এবং রমযানের পবিত্রতা ক্ষুন্ন করছে। রোজাদার লোকদের গ্রেফতার করার ফলে তাদের পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন উদ্বেগ, উৎকণ্ঠ এবং আতংকের মধ্যে দুঃখভারাক্রান্ত মনে অতিকষ্ঠে রোজা পালন করছে। পবিত্র রমযান মাসের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে গণগ্রেফতার অভিযান বন্ধ করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

সরকারের গণগ্রেফতার অভিযানের কারণে মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। সরকারের এ স্বৈরাচারী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
রমজানের পবিত্রতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীসহ সকল নিরপরাধ লোকদের নিঃশর্তভাবে মুক্তি প্রদান করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”