১৭ জুন ২০১৬, শুক্রবার, ৪:৫৫

সরকার গণগ্রেফতার এবং তথাকথিত ক্রস ফায়ার করে দেশকে রাজনীতি শূন্য করার ষড়যন্ত্র করছে

সরকারের দেশব্যাপী গণগ্রেফতার অভিযানের পাশাপাশি তথাকথিত ক্রস ফায়ার করে বা বিচার বহির্ভূতভাবে মানুষ হত্যা করার প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান আজ ১৭ জুন প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “পবিত্র রমযান মাসে সরকার উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে দেশব্যাপী গণগ্রেফতার অভিযান চালিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে রোজাদার লোকদের কষ্ট দিচ্ছে। অন্যদিকে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রস ফায়ার করে মানুষ হত্যা করে সরকার দেশের আইন, সংবিধান ও মানবাধিকার লংঘন করছে।

সরকার দেশব্যাপী যে গণগ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে সে ক্ষেত্রে আইনের বিধি-বিধান মানা হচ্ছে না এবং উপেক্ষিত হচ্ছে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা। বিনা ওয়ারেন্টে, সুনির্দ্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া এমনকি সাদা পোষাকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করে সরকার আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে আইনের পরিপন্থী কাজ করছে। তার পাশা-পাশি সরকার সারা দেশে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রস ফায়ার করে মানুষকে বিনাবিচারে হত্যা করে চরমভাবে মানবাধিকার লংঘন করছে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত ১৫ সালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথাকথিত ক্রস ফায়ার বা বন্দুক যুদ্ধের নামে ১৯২ জন মানুষকে বিচার বর্হিভূতভাবে হত্যা করেছে। গত এক মাসে বিচার বর্হিভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে প্রায় কয়েক ডজন লোককে।

এক পুলিশ কর্মকর্তা গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের সদস্যদের হাতে লাঠি তুলে দিয়ে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসীদের ধরতে পারলে পিটিয়ে হত্যা করার’ বেআইনী নির্দেশ দিয়েছেন। এভাবে আইন হাতে তুলে নেয়ার বেআইনী নির্দেশ দিয়ে পুলিশই আইন ও সংবিধান লংঘন করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে।

কারো বিরুদ্ধে সুনির্দ্দিষ্ট কোন অভিযোগ থাকলে তাকে গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। আদালত সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার করে অপরাধীকে সর্বোচ্চ শাস্তি থেকে শুরু করে যে কোন শাস্তি দিতে পারে। কিন্তু তথাকথিত ক্রস ফায়ারের মত বেআইনী কাজ কোন সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে চলতে পারে না। তথাকথিত ক্রস ফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের মত অমানবিক কর্মকান্ড দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সে সম্পর্কে দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। অতএব তথাকথিত ক্রস ফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের মত বেআইনী কর্মকান্ড অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

সরকার গণগ্রেফতার অভিযান চালিয়ে এবং তথাকথিত ক্রস ফায়ার করে দেশকে রাজনীতি শূন্য করার ষড়যন্ত্র করছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে এবং তথাকথিত ক্রস ফায়ার করে মানুষ হত্যা করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি এবং গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। এ উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে।

তাই অবিলম্বে গণগ্রেফতার ও তথাকথিত ক্রস ফায়ার বন্ধ করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”