১ জুলাই ২০২২, শুক্রবার, ৪:৩০

২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট সম্পর্কে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিক্রিয়া

উচ্চাকাঙ্ক্ষী ঋণ নির্ভর ঘাটতি বাজেট দেশ ও দেশের জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না

-মাওলানা এটিএম মা’ছুম

৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাশকৃত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জন্য ৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার উচ্চাকাঙ্ক্ষী ঋণ নির্ভর ঘাটতি বাজেট সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম ১ জুলাই ২০২২ প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেনঃ

“গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী জনাব আ.হ.ম মোস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জন্য ৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। বাজেট পেশের পর দেশের অর্থনীতিবিদ, বিভিন্ন সংগঠন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বাজেটের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনাসহ বেশ কিছু পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু সরকার তার কোনোটিই আমলে নেয়নি।

আমরা স্পষ্ট ভাষায় আবারও বলতে চাই, এটি একটি ঋণ নির্ভর ঘাটতি বাজেট। বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের যে টার্গেট রাখা হয়েছে তা অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। বাজেটে কৃষি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সম্প্রসারণ খাতে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা যথেষ্ঠ নয়। এছাড়া শিল্প খাতে বিনিয়োগের বিষয়টি বাজেটে তেমন গুরুত্ব পায়নি। বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরির ব্যাপারেও কোনো দিক-নির্দেশনা বাজেটে নেই। এ বাজেটে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের স্বার্থকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।

৭% হারে কর দিয়ে বাজেটে পাচার করা টাকা বৈধ করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে তা দুর্নীতিকে আরো উৎসাহিত করবে। পাচার করা টাকা অবৈধ। এটিকে বৈধ বলার কোনো সুযোগ নেই। এর মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন ও দুর্নীতিকে আরো উৎসাহিত করা হয়েছে।

বাজেটে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন ছিল তা নেয়া হয়নি। দেশ আজ মাদক দ্রব্যের করালগ্রাসে নিমজ্জিত। সর্বত্রই মাদকের সয়লাবের কারণে দেশের তরুণ ও যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট-সুনামগঞ্জ ও দেশের উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে পাশকৃত বাজেটে কিছুই বলা হয়নি। বন্যায় এসব এলাকার রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। কিন্তু বাজেটে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়নি।

বাজেটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ব্যাপারে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়নি। এই বাজেটের মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের স্বার্থকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।

এ বাজেটে দলীয় হীনরাজনৈতিক স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং মেগা দুর্নীতিকে লালন করার সব সুযোগ বিদ্যমান রাখা হয়েছে।
বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লক্ষ টাকাই রাখা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সর্বোপরি বলা যায় এটি একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ঋণ নির্ভর ঘাটতি বাজেট, যেখানে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের স্বার্থকে উপেক্ষা করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী ভঙুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনায়নের লক্ষ্যে চমকপ্রদ বক্তব্য প্রদান করলেও তা বাস্তবায়নে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, পাশকৃত বাজেটে বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এই বাজেট দেশ ও দেশের জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।”