২২ জুন ২০২২, বুধবার, ৫:৪৪

কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলায় বন্যা কবলিত প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণে আমীরে জামায়াত

সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো জামায়াতে ইসলামীর ঐতিহ্য

-ডা. শফিকুর রহমান

আমীরে জামায়াতে ডাঃ শফিকুর রহমান ২২ জুন বুধবার সকালে কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনকালে উপরোক্ত কথা বলেন এবং তিনি সম্বলহারা অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ করেন।

আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এবারের বন্যায় মানুষের জানমাল, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বানভাসি মানুষজন আশ্রয় ও খাবারের সন্ধানে দিকবিদিক ছুটাছুটি করছেন। বন্যা আক্রান্ত এলাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

তিনি বানভাসি মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি যে জিনিসগুলো নিয়ে এসেছি এগুলো রিলিফ নয়। মেজবানের বাড়িতে গেলে কিছু উপহার নিতে হয়। এগুলো আমি আপনাদের জন্য উপহার হিসেবেই নিয়ে এসেছি। দীর্ঘ দিন ধরে বর্তমান সরকার নানাভাবে আমাদের উপর জুলুম-নিপীড়ন চালাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী একটি মজলুম সংগঠন। যত বাধা-বিপত্তিই আসুক, আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব, ইনশাআল্লাহ। যারাই আমাদের উপর জুলুম-নির্যাতন চালায় আল্লাহ যেন তাদেরকে হেদায়াত দান করেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন মহান আল্লাহ যেন আমাদেরকে জুলুমের হাত থেকে রেহাই দেন। দোয়া করি আল্লাহ আপনাদেরকে ভাল রাখুন এবং আপনাদের মাথার উপর থেকে এই দুর্যোগ সরিয়ে দিন। আল্লাহ আমাদের সকলের গুনাহখাতা মাফ করুন।

তিনি আরো বলেন, দেশবাসী জানেন, সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগে গরীব মানুষের পাশে দাঁড়ানো জামায়াতে ইসলামীর ঐতিহ্য। একটি দ্বীনি সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামী মানুষের কল্যাণে সব সময় কাজ করে। গণমানুষের প্রিয় সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে আল্লাহ যেটুকু সামর্থ্য দিয়েছেন, তাই নিয়ে আমরা বন্যা কবলিত মানুষের কষ্ট লাঘবে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। এ ভয়াল দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় কোনো সামর্থ্যবান ও বিবেকবান মানুষ বসে থাকতে পারেন না। আমি আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসার জন্য সকল রাজনৈতিক দল, এনজিও, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, সংস্থা এবং বিত্তশালী ও হৃদয়বান মানুষের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।

তিনি বন্যা কবলিত মানুষের নিকট থেকে জানতে পারেন, তাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখতে ও সাহায্য-সহযোগিতা করতে সরকারের কোনো ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ আসেনি। তিনি বলেন, মূলত ২টি কারণে সরকার আপনাদের কাছে আসেনি। প্রথমত বর্তমান সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই আর দ্বিতীয়ত মহান রবের নিকট জবাবদিহিতারও কোনো ভয় নেই। সরকারের দায়িত্ব হলো দেশের জনগণের সুবিধা-অসুবিধা দেখা। আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছি অবশ্যই সরকারকে এই কঠিন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সরকার সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষের আশ্রয়, খাবার, চিকিৎসাসহ সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমি সরকারের নিকট আহবান জানাচ্ছি।”

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “জামায়াতের ৪-দফা কর্মসূচির একটি হল জনগণের কল্যাণ সাধন করা। তার অংশ হিসেবে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সকল বালা-মুসিবতে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। আমীরে জামায়াতের নির্দেশনায় আমাদের নেতাকর্মীগণ বন্যা কবলিত সকল এলাকায় ত্রাণ সহায়তা নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে মানবতার কল্যাণ সাধন করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। এই ঈমানী দায়িত্ববোধ ও ইবাদতের অংশ হিসেবেই আমরা আপনাদের কাছে ছুটে এসেছি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করবেন না।’ তাই মানুষের প্রতি দয়া-মায়া-মমতা ও ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ আমরা আপনাদের কাছে চলে এসেছি। জামায়াতে ইসলামী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী এমনই একটি কল্যাণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমে করতে চায়, যেখানে জনগণের সকল অধিকার ও প্রাপ্য তাদের নিকট পৌঁছে দেয়া হবে। আশা করি আপনারা আমাদের এই অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবেন।”


এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ড. সামিউল হক ফারুকী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের টিম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, কুড়িগ্রাম জেলা আমীর মাওলানা আব্দুল মতিন ফারুকী, নায়েবে আমীর আফম দেওয়ান আমিনুল ইসলাম, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা নিজাম উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, কুড়িগ্রাম জেলার সহকারী সেক্রেটারি শাহজালাল সবুজ, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এড. ইয়াছিন আলী সরকার ও মাওলানা হাবিুবুর রহমান, রাজিবপুর উপজেলা আমীর মাওলানা আব্দুল লতিফ, রৌমারী উপজেলা আমীর জনাব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, শিবিরের জেলা সভাপতি রইসুল মুফাস্সিরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।