১৬ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৮:২৩

করোনাভাইরাস মহামারীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম ও দেশবাসীর উদ্দেশে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান এর বক্তব্য

ইন্নাল হামদালিল্লাহ!

প্রিয় দেশের সম্মানিত জনগণ,
প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশী ভাই ও বোনেরা!

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মহান মুনিবের তরে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করছি। দুরুদ ও সালাম পেশ করছি মানবতার মুক্তিদূত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. এর ওপর।

আমার বক্তব্যের সূচনায় সেই সমস্ত ভাই-বোনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি যারা সম্প্রতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।

সুস্থতা কামনা করছি সেই সমস্ত ভাইবোনদের যারা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। দোয়া করি, রাব্বুল আলামিন তাদেরকে সুস্থতার পরিপূর্ণ নিয়ামত দান করুন।

প্রিয় দেশবাসী ভাই ও বোনেরা

গোটা বিশ্ব আজকে একটি চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গোটা বিশ্ব এধরণের ঝুঁকিতে আর কখনো পড়েনি।

এই পরিস্থিতির সূচনালগ্নে একটি দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে আমরা সরকারকে সম্ভাব্য ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করেছিলাম। জনগণকে তাদের করণীয়র ব্যাপারে সতর্ক করে বিপুল সংখ্যক লিফলেট ছাপিয়ে আমরা হাতে হাতে, ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছি।

প্রিয় দেশবাসী

আমরা সরকারকে প্রথম দিকে সতর্কতা ও আত্মরক্ষামূলক যেসমস্ত প্রস্তুতি নিতে বলেছিলাম দুঃখজনক হলেও সত্য সরকার তার কিছুই নিতে পারেনি। একটি অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে আমরা এই পরিস্থিতির সঙ্গী হয়ে আছি।

এখন পর্যন্ত সত্যিকার অর্থে আমরা নিজেদেরকে গুছিয়ে উঠতে পারিনি। এখনো হাসপাতালগুলো সেভাবে সেবার জন্য প্রস্তুত হয়নি। উপকরণ এখনো পর্যাপ্ত সরবরাহ করা যায়নি এবং সারাদেশে এগুলো পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়নি।

ফলে বহু সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এই ধরণের উপসর্গ নিয়ে। কিন্তু কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই তাদেরকে দাফন করা হচ্ছে। জাতি জানতে পারছে না তারা কী রোগে বিদায় নিলেন। এই রোগে সংক্রমিত হয়েছিলেন কিনা তা জানার কোনো সুযোগ হচ্ছে না।

আর তিলে তিলে, ধুকে ধুকে বহু মানুষ কষ্ট করছেন এই উপসর্গগুলো নিয়ে। তারাও পরীক্ষা করার সুযোগ পাচ্ছেন না।

যথেষ্ট সময় পার হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, এই সময়ের মধ্যে সকল রকম ঘাটতি পুষিয়ে সরকার ও জনগণ মিলে এই পরিস্থিতির উত্তরণের জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য নিয়ে এগিয়ে যাবো।

একটি দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে সরকারকে শুধু পরামর্শ দিয়ে বসে থাকা আমাদের কাজ ছিল না। সরকারের যেমন দায়িত্ব আছে, আমাদের সংগঠনও মনে করেছে জনগণের প্রতি, মানবতার প্রতি আমাদেরও দায়িত্ব আছে।

সেই দায়িত্বের অনুভূতির তাগিদেই সূচনা পর্বে আমাদের দলীয় সহকর্মীদের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলাম, যারা কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন সেই সমস্ত স্বল্প আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।

আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহর অসংখ্য শুকরিয়া। হাজার কষ্ট, ব্যাথা, বেদনা ভুলে গিয়ে আমাদের কর্মীরা মানবতার এই ডাকে সাড়া দিয়ে অনবরত সেই ত্যাগ স্বীকার করে চলেছেন।

এ পরিস্থিতির সূচনালগ্ন থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে গত ৯ তারিখ পর্যন্ত ২ লাখ ৫৫ হাজার ৪৯২টি পরিবারের কাছে খাদ্য সামগ্রী ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক বস্তু পৌঁছানো হয়েছে।

 

এছাড়াও আমাদের মেডিকেল টিম অনবরত অনলাইনে জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা এবং পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। সারাদেশে মহানগরী, জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও ওয়ার্ডে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক টিমগুলো অনবরত সেবা দিয়ে চলেছেন।

এছাড়া মসজিদসহ সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় আমাদের সেবা টিমগুলো কাজ করে যাচ্ছে।

প্রিয় সম্মানিত দেশবাসী

আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী লক্ষ্য করছে, সমাজের বেশ কিছু বিত্তবান ও হৃদয়বান ব্যক্তি, সংস্থা, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন জাতির এই দুর্যোগ মুহুর্তে স্বতস্ফূর্তভাবে যার যার অবস্থান থেকে মানবতার প্রতি এই সেবা কার্যক্রম দিয়ে চলেছেন। আমরা তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।

আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, জনগণের তহবিল থেকে সরকার বিপন্ন মানুষদের সহায়তার জন্য যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন; এই জায়গায় সরকারী দলের বেশ কিছু দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন।

তারা স্বল্প মূল্যের চাল ভিন্নপথে নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে গুদামজাত করে রাখছেন। পত্র-পত্রিকা ও গণমাধ্যমে যা এসেছে প্রকৃত পরিস্থিতি তার চাইতে অনেক ভয়াবহ।

সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ধ্বস থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন খাতে তিন পর্যায়ে প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও বিভিন্ন দেশের সরকার সাহায্য আকারে দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সেটাকে ঋণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

আবার সেই ঋণের সাথে ‘সুদ’ জুড়ে দেয়া হয়েছে। যেখানে টিকে থাকার লড়াইয়ে সরকার হবে শিল্প ও কৃষি খাতের সহযোদ্ধা সেখানে যদি তাদের ওপর ঋণের সাথে সুদ জুড়ে দেয়া হয় এটা মোটেও সুবিচার করা হবে না।

এজন্য আমরা দৃঢ়ভাবে এই দাবি করছি, সকল প্রকার প্রণোদনা অবশ্যই সুদ ও লাভমুক্ত হতে হবে।

আমরা লক্ষ্য করলাম, দেশের প্রধান উৎপাদনশীল কৃষি খাতে সরকার প্রথমে কোনো প্রণোদনা ঘোষণা করেনি। দ্বিতীয় পর্যায়েও করেনি। জনগণের দাবির মুখে তৃতীয় পর্যায়ে করেছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সেটা অতি নগন্য।

মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা সরকারকে বলবো, জিডিপিতে যেই কৃষির সিংহভাগ অবদান, যেই দেশের সিংহভাগ মানুষ কৃষির সাথে সম্পর্কিত সেখানে পাঁচ হাজার কোটি টাকা নয়, কমপক্ষে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করা হোক।

সেই প্রণোদনা যেনো প্রকৃত পাওনাদারের হাতে পৌঁছে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। কোটারি স্বার্থবাদীরা যাতে এটাকে লুটেপুটে খেতে না পারে এই জন্য হকদারকে তার প্রাপ্তি নিশ্চিত করুন।

এটা সরকারের দায়িত্ব। দুর্নীতি, দলপ্রীতি, স্বজনপ্রীতির উর্ধে উঠে ইনসাফের ভিত্তিতে সরকারকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সরকার যদি এ দায়িত্ব পালন করেন দেশবাসী ন্যায্য কাজে তাদেরকে সহযোগিতা করবেন।

কিন্তু এই দায়িত্ব পালনে যদি ব্যার্থ হন তাহলে এই দ্বায়ভার এককভাবে সরকারকে বহন করতে হবে।

প্রিয় ভাইয়েরা এবং আমার বোনেরা

স্বল্পমূল্যের যেসমস্ত খাদ্য সামগ্রী জনগণের মাঝে পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলোর নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।

এই কাজে বর্তমান পদ্ধতি যেহেতু ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছে আর আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী এই পরিস্থিতিতে জনগণের সাথে মাঠে আছে, তাই আস্থার প্রতিক সেনাবাহিনীকে এই খাদ্য বিতরণ ও বিক্রির সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও তত্বাবধান করার দায়িত্ব দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আশা করি সরকার আমাদের এই আহ্বানে সাড়া দেবেন।

প্রিয় দেশবাসী

আমরা সরকারকে এই মুহুর্তে আরো কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

স্বল্প আয়ের যে সমস্ত মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন তাদেরকে আগামী ছয় মাস পর্যন্ত খাদ্যে ভর্তুকি দিয়ে অতি অল্প মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

যারা বিভিন্ন প্রাইভেট সেবাখাতে চাকরি করতেন তাদের কমপক্ষে তিনমাস বেতন পাওয়ার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। সেটা ওই খাতের মালিকরা দেবেন এবং ক্ষেত্র বিশেষে সরকারকেও এখানে দায়িত্ব নিতে হবে।

এরপর স্বাস্থ্য খাতের প্রতি সরকারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা আগেও বলেছি এখনো বলছি, স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তা সুরক্ষা নিশ্চিত করে, যাতে অনায়াসে করোনাভাইরাস আক্রান্তসহ সকল মানুষ ন্যায্য সুবিধা পায় তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

কমপক্ষে সকল জেলা কেন্দ্রিক এই ভাইরাস পরীক্ষা করার কিট সরবরাহ এবং পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারী হাসপাতালগুলো করোনাভাইরাস রুগীদের সেবা দেয়ার জন্য সকল দিক থেকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে।

পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের দেশ ভেন্টিলেটরের সংখ্যার দিক থেকে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। যত দ্রুত সম্ভব এই ঘাটতি পূরণে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

রেমিটেন্স যোদ্ধা হিসেবে খ্যাত প্রবাসী ভাইবোনদের অনেকে করোনাভাইরাসে মারা গিয়েছেন এবং আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ আছেন। অনেকে কর্ম হারিয়েছেন এবং লকডাউন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের এই সংকট সমাধানে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত প্রণোদনার ব্যবস্থা করে সার্বিক সেবা নিশ্চিত করা দরকার। নতুবা তারা ক্ষতিগ্রস্থ হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং জনমনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

এর পাশাপাশি সম্ভাব্য যে আর্থিক মন্দা গোটা বিশ্বকে বিচলিত করে তুলেছে আগামী দিনে এই সম্ভাব্য মন্দা থেকে উত্তরণের জন্য দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে, উদারভাবে এ দেশের যারা খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী আছেন তাদেরকে সম্পৃক্ত করে একটি জাতীয় পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা দরকার।

তারা এখন থেকে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী সম্ভাব্য অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব থেকে উত্তরণে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবেন। যদি সরকার এই কাজেও দলীয়করণের মধ্যে আবদ্ধ থাকেন তাহলে আমরা বিশ্বাস করি এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না।

এতো বড় মুসিবত! এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে জাতীয় ঐক্যের। বারবার আমরা ডাক দিয়েছি। অনেকেই দিলখোলা ডাক দিয়েছেন।

কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কেনো সাড়া আমরা লক্ষ্য করছি না। বিলম্ব না করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে এই পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

সম্মানিত ভাই ও বোনেরা

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম এবং সাহসিকতার পরিচয় দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে ইতোমধ্যে যারা বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন এবং আরো যারা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে তাদেরকে সতর্ক করা উচিত।

এখন থেকে কেউ যাতে কোনো ধরণের অনাচার, পক্ষপাতিত্ব ও দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়তে না পারে এ বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

সম্মানতি ভাই ও বোনেরা

ততদিন পর্যন্ত মিল, ফ্যাক্টরি, ইন্ডাস্ট্রি খুলে দেয়া যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত এই আশঙ্কা সন্তোষজনকভাবে কেটে না যায়। মনে রাখতে হবে জাতি বেঁচে থাকলে শিল্প বেঁচে থাকবে। মানুষই যদি না বাঁচে, মানুষের জীবনই যদি ব্যাপক ঝুঁকিতে পড়ে যায় শিল্প রক্ষা করবে কে?

এজন্য শিল্পের চাকা যারা ঘুরাবে তাদের জীবন সন্তোষজনকভাবে আশঙ্কামুক্ত উপলব্ধির করার পরেই কেবল এই পদক্ষেপ নেয়া যাবে তার আগে নয় এবং জাতীয়ভিত্তিক যে ঐক্য সেল গঠন করা হবে সেই সেলের সাথে পরামর্শ করে উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করে আবার সমাজের চাকা চালু করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

এই দুর্যোগের সময় সকল দলমত, দুঃখ, বেদনার উর্ধ্বে উঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জাতীয় স্বার্থে সরকারকে সবধরণের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।

আমি আজকে আরেকবার সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমাদের এই আন্তরিক প্রস্তাব ও অনুরোধকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে তারা বৃহত্তর ঐক্যের দিকে জাতিকে নিয়ে যাবেন আশা করি।

সম্মানিত ভাই ও বোনেরা

আমরা বিত্তশালী ও চিত্তবান নাগরিকদের কাছে অনুরোধ জানাবো, আজকে যারা বিপন্ন হয়েছে তারাও আদমের সন্তান, তারাও আমাদের ভাইবোন। আপনারা এগিয়ে আসুন তাদের জন্য। ইতোমধ্যে অনেকে এগিয়ে এসেছেন। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই।

রাজনৈতিক দলগুলোরও এগিয়ে আসা উচিত। কারণ রাজনীতি তো মানুষের কল্যাণের জন্য। এই সময়েও যদি রাজনৈতিক দলগুলো এগিয়ে না আসে তাহলে কখন আসবে?

আমরা মহান রব্বুল আলামিনের ওপর ভরসা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যতদিন পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা জাতির ওপর এই সংকট বহাল রাখার ফায়সালা রাখবেন ততদিন পর্যন্ত আমরা জাতির পাশে থেকে এই সেবাগুলো ইনশাআল্লাহ দিয়ে যাবার চেষ্টা করবো। আমাদের যাত্রা থামবে না ইনশাআল্লাহ।

আমরা, প্রিয় দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ যাত্রাপথে তাদের ভালোবাসা, তাদের দোয়া এবং সমর্থন আজকে এই পর্যায়ে আমাদের নিয়ে এসেছে। আমাদের হাজার দুঃখ, কষ্ট, বেদনা সবকিছুকে পেছনে ফেলে এখন জাতীর এই দুর্যোগ মুহুর্তে জাতীর সাথে থাকাটা নিজেদের কর্তব্য ও সৌভাগ্য বলে মনে করি।

সামর্থের অভাবে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক বিপন্ন পরিবার ও ভাইবোনদের কাছে আমরা পৌঁছতে পারিনি। তাদের কাছে আমরা ক্ষমা চাই। তাদের কাছে আমরা দোয়া চাই। ভবিষ্যতে যেনো আমরা এই ঘাটতি পোষাতে পারি। আপনাদের দুয়ারে আমরা যেনো পৌঁছতে পারি। আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য আপনারা দোয়া করবেন।

সরকারকে আমরা আহ্বান জানাবো, সরকারী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ভালো যা করেছেন তার পাওনা আল্লাহর জিম্মায় থাকবে। কিন্তু মানুষের ওপর যদি কোনো জুলুম অত্যাচার হয়ে থাকে তার জন্য আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করে ক্ষমা চাইতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা আপনাদেরকে ক্ষমা চাওয়ার তৌফিক দিন। তাতে আপনাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে। জাতি এর দ্বারা উপকৃত হবে।

আমরা সকলে মিলে অঙ্গিকার করবো ভবিষ্যতে আমরা কোনো অন্যায়, অপকর্ম ও অপরাধের সাথে জড়াবো না। কারো ওপর কোনো ব্যক্তি ও রাষ্ট্রপর্যায়ের জুলুম হবে না। এই দেশ ইনসাফের ভিত্তির ওপর পরিচালিত হবে।

যদি এই অঙ্গিকার মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে দৃঢ়তার সাথে করি, আশা করি আল্লাহ তায়ালা এই বিপদ থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাবেন।

প্রিয় দেশবাসী

আসুন মহান প্রভুর দরবারে বিগলিত চিত্তে তওবা করি, আমাদের অপরাধ ও অপকর্মের জন্য লজ্জিত হই, আমরা ক্ষমা চাই, আল্লাহ তায়ালার রহমত ভিক্ষা করি, তার সাহায্য ভিক্ষা করি।

আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, আল্লাহ আমাদের দেশবাসীর সহায় হোন, বিশ্ববাসীর সহায় হোন এবং এই সংকট থেকে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে, বিশ্ববাসীকে, বিশেষ করে বাংলাদেশকে হেফাযত করুন।

সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, আমাদের সাথে সঙ্গ দেয়ার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে, মহান আল্লাহর শুকরিয়া জানিয়ে, আপাতত আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি।

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্য দেখতে এখানে ক্লিক করুন।