২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৬:৩২

মিয়া গোলাম পরওয়ার ২০২০-২০২২ কার্যকালের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল নির্বাচিত

সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ২০২০-২০২২ কার্যকালের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ২৬ ডিসেম্বর সকালে তাকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে শপথ বাক্য পাঠ করান।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ আসনে (ফুলতলা ও ডুমুরিয়া) নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জোট সরকারের ৫ বছরে তিনি ডুমুরিয়া-ফুলতলায় প্রায় সোয়া তিনশত কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছেন। এত উন্নয়ন কার্যক্রম বিগত ৩০ বছরে এ এলাকায় কোন এমপি করতে পারেননি। বিশেষ করে ডুমুরিয়া-ফুলতলার সন্ত্রাস দমণে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের দু:সাহসিক ভূমিকা শুধু তার এলাকার জনগণের জীবনেই শান্তি এনে দেয়নি বরং বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন দিক নির্দেশনা দিয়েছে।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ১৯৫৯ সালের ৮ জানুয়ারী খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার শিরোমণি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন।

পারিবারিক জীবনে তার পিতা-মাতা, ৫ ভাই, ৫ বোন, স্ত্রী, ২ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তান রয়েছে। শিরোমণি হাইস্কুল, বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও আযম খান বাণিজ্য বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে যথাক্রমে এস.এস.সি, এইচ.এস.সি, বিকম অর্নাসসহ (হিসাব বিজ্ঞান) এম.কম পাস করেন।

ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে জড়িত। ১৯৭৪ সালে তিনি জাসদ ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ১৯৭৭ সালের শেষার্ধে ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত পেয়ে তিনি ইসলামী আদর্শভিত্তিক ছাত্ররাজনীতিতে শরীক হন। প্রতিষ্ঠালগ্ন হতেই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে জড়িত হন এবং তিনি বিভিন্ন মেয়াদে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ফুলতলা থানা সভাপতি, খুলনা সদর থানা সভাপতি, বিএল কলেজ সভাপতি, কমার্স কলেজ সভাপতি এবং ১৯৮৪-৮৫ সেশনে খুলনা মহানগরীর সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন।

ছাত্রজীবন শেষ করে তিনি সাংবাদিকতা ও অধ্যাপনা পেশার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। দৈনিক সংগ্রামের খুলনা প্রতিনিধি হিসেবে তিনি কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় খুলনা প্রেসক্লাব নির্বাচনে সর্বাধিক ভোট পেয়ে তিনি কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। দুই বছর কাল তিনি খুলনা ইসলামিয়া কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ছাত্রজীবন শেষ করেই তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন।

১৯৯৬-২০১১ সাল পর্যন্ত খুলনা মহানগরী জামায়াতের আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করছেন এবং ২০১৭ সালের জানুয়ারী থেকে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ১৯৯৪ সালে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করে ব্যাপক পরিচিতি ও বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী দুঃশাসন বিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি খুলনা জেলা ও মহানগরী চারদলীয় জোটের অন্যতম কো-কনভেনর ছিলেন। ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি ১ লাখ ৬ হাজার ভোট পেয়ে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

প্রস্তাবিত নতুন শ্রম আইন লেবারকোড’ ১৯৯৪-এর শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারাসমূহ বাতিলের দাবিতে জাতীয়ভাবে গঠিত ‘লেবারকোড’ ‘৯৪ প্রতিরোধের জাতীয় সমন্বয় কমিটি’র খুলনা যশোর অঞ্চলের তিনি প্রথম উদ্যোক্ত ও আহ্বায়ক ছিলেন।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের জনপ্রিয়তা ও আপোসহীন বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে ওঠে অত্যাচারী শাসক গোষ্ঠী। তাকে ২০১০ সালের ৩০ জুন খুলনার একটি মিছিল থেকে গ্রেফতার করে কারাবন্দী করা হয। তারপর থেকে দফায় দফায় জেলগেট থেকে ও রাজনৈতিক সভা থেকে তাকে গ্রেফতার করে দীর্ঘ দিন তার উপর কারানির্যাতন চালানো হয়। এ সরকারের শাসন আমলে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর তিনি কারা নির্যাতন ভোগ করেন। এ সময়ে তাঁকে প্রায় ৩০ দিন রিমান্ডে নিয়ে তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।

সামাজিক কার্যক্রম ও শিক্ষা প্রসারে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বিভিন্ন সময়ে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জাপান, থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, সুইজারল্যান্ড, ব্রিটেন, তুরস্ক প্রভৃতি দেশ সফর করেন।