৯ জুন ২০১৮, শনিবার, ২:১৯

প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বড় হলেও তাতে জনগণের কোন কল্যাণ হবে না

গত ৭ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের জন্য ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার যে মোটা অংকের বাজেট পেশ করেছেন সে সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আ.ন.ম. শামসুল ইসলাম আজ ৯ জুন প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন কোন চমক নেই। এ বাজেট গতানুগতিক ও অবাস্তব।

প্রস্তাবিত বাজেটে গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের চাইতে ৬০ হাজার কোটি টাকা বেশী বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, জনগণের নিকট থেকে আদায় করা ট্যাক্স, ভ্যাট, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ এবং অনুদান থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে এ ব্যয় মিটানো হবে। বাজেটের ব্যয় মেটাতে বৈদেশিক অনুদানসহ আয়ের পরিমাণ করা হয়েছে ৩ লক্ষ ৪৩ হাজার ৩শত ৩১ কোটি টাকা। এনবিআর থেকে আয় ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। বিদেশী অর্থ থেকে ঋণ ৫০ হাজার ১৬ কোটি, বৈদেশিক অনুদান ৪ হাজার ৫১ কোটি টাকা, দেশের ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করা হবে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা এবং সঞ্চয় পত্র বিক্রয় থেকে আয় ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১শ ৯৭ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.৮ শতাংশ। গত বছরে তা ছিল ৭.৪ শতাংশ। মুদ্রাস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫.৬ শতাংশ, গত বছর তা ছিল ৫.৪ শতাংশ। এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, প্রস্তাবিক বাজেট সম্পূর্ণ গতানুগতিক। প্রস্তাবিত বাজেট অনেকাংশেই ঋণ নির্ভর। বিগত ৯ বছরে সরকার কোন বাজেটই পুর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এবারও তা বাস্তবায়ন করতে পারবে না বলেই মনে হচ্ছে। ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে ব্যাংকগুলো ধ্বংস করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বড় হলেও তাতে জনগণের কোন কল্যাণ হবে না। ঋণ নির্ভর এ বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। যা মোট উন্নয়ন বাজেটের সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ। আর সামগ্রিক বাজেটের ১১.১ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটে উচ্চ বিত্তশালীদের সন্তুষ্ট করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পক্ষান্তরে মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র জনগণের কষ্ট আরো বৃদ্ধি পাবে। তাদের জন্য বাজেটে কোন সুখবর নেই। বাজেটে সরকারী চাকুরীজীবী, ব্যাংক, বিমা কোম্পানীর মালিকদের সুবিধা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে রাজস্ব বাড়ানোর জন্য ভ্যাটের আওতা ও হারের বিস্তৃতি ঘটানো হয়েছে। ভ্যাটের কারণে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ চাপের মধ্যে পড়বে।

প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ ১০.২ শতাংশ কমানো হয়েছে। এতে সরকারের শিক্ষা সংকোচন নীতিই প্রতিফলিত হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দ দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে তাদের লুটপাটের সুযোগ দিয়ে তুষ্ট করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট প্রণোদনা না থাকায় তাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে শিল্পখাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তৈরি পোশাক বিক্রিতে বর্তমানে ভ্যাট ৪ শতাংশ, তা বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে পোশাকসহ দেশীয় শিল্প মার খাবে। বিদেশী নিয়োগ আকৃষ্ট করার মত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিলাস বহুল গাড়ী যা ধনীরা ব্যবহার করে তার দাম কমানো হয়েছে। ১৮০০ সিসি পর্যন্ত হাইব্রিড গাড়ী আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে বিলাস বহুল গাড়ীর দাম কমবে। মোটর সাইকেল, রড-সিমেন্টের দাম কমবে। টায়ার-টিউবের কাঁচামালের আমদানী শুল্ক ২৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে ধনীরাই খুশী হবে। অপর পক্ষে মোবাইল ফোন সেট, চুলের ক্লিপ, তৈরি পোশাক, বাই-সাইকেল, পুরোনো গাড়ী, আসবাবপত্র, আইপিএস ও ইউপিএস ও প্রসাধনী সামগ্রী, সিরামিক পণ্য, মধু, আমদানিকৃত চাল, চুইংগাম ও চকলেট ইত্যাদির দাম বাড়ানোর ফলে গরীব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গরীবদের ব্যবহারকৃত সকল পণ্যের দাম কমিয়ে বিলাস বহুল গাড়ীসহ ধনীদের ব্যবহার্য্য দ্রব্যের মূল্য বাড়ানো উচিত।

প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক মালিকদের আরো বড় ধরনের সুবিধা দিতে যাচ্ছে সরকার। তাদের বেশী মুনাফার জন্য ব্যাংকের করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ভ্যাট কাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে আমদানী পণ্যের দাম ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির জন্য কোন বরাদ্দ রাখা হয়নি। এতে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীগণের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়বে। প্রস্তাবিত বাজেটে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য কোন দিক নির্দেশনা নেই।

প্রস্তাবিত বাজেটে ভোটারদের তুষ্ট করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই বাজেটে পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সরকার প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করা না করা সম্পর্কে নিরবতা পালন করে মূলত: কালো টাকা সাদা করার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। এতে দুর্নীতি আরো বাড়বে। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারী দলের লোকদেরকে লুটপাটের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে বিগত কয়েক বছরের ন্যায় এবারেও আয় করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা রাখা হয়েছে। অথচ বাজেটের আকার পূর্বের তুলনায় অনেক বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, টাকার মূল্য কমেছে। কাজেই করমুক্ত আয়ের সীমা সময়োপযোগী ও যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা উচিত। সরকারের প্রস্তাবিত এ বাজেট মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র জনগণকে হতাশ করেছে। দেশের জনগণের নিকট এ বাজেট গ্রহণ যোগ্য নয়।

দেশের সাধারণ জনগণের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে প্রস্তাবিত বাজেট সংশোধন করে যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”