২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৬:৪৫

মিয়ানমারে গণহত্যায় নিহত রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য দেশব্যাপী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গায়েবানা জানাযা ও দোয়া অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্র ঘোষিত মায়ানমার সরকার কতৃর্ক বর্বোরোচিত হামলা ও নির্যাতনে নিহত রোহিঙ্গা মুসলমান ভাই ও বোনদের জন্য গায়েবানা জানাজা ও দোয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত গায়েবানা জানাজায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার। গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করেন ভোলার পীর সাহেব, মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম কাওছারী।

গায়েবানা জানাজায় আরো উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা ফরিদ হোসেন খান, আব্দুস সবুর ফকির, মোকাররম হোসাইন খান, শামসুর রহমান, কামাল হোসেন, আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দাওয়াহ সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক খালিদ মাহমুদ, ছাত্রনেতা তোফাজ্জল, হাফেজ মাসুম তারিফ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।

গায়েবানা জানাজায় বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সহ হাজার হাজার সাধারণ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। জানাজা চলাকালীন সময়ে মসজিদের ভিতরের অংশ সহ উত্তর চত্ত্বর, দক্ষিণ চত্ত্বর ও পূর্ব চত্ত্বর মুসল্লিদের অংশগ্রহণে কানায় কানায় পূর্ণতা লাভ করে। নিহতদের জন্য গায়েবানা জানাজা শেষে মায়ানমারে নিহতদের পাশাপাশি আহত পঙ্গুত্ববরণকারী ভাই বোনদের জন্য দোয়ার সময় উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। দোয়ায় অংশগ্রহণকারী হাজার হাজার মুসল্লিবৃন্দ রাখাইনে নিহত ও আহত মুসলিম ভাই বোনদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং তাদের উপর ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম বর্বর হামলা বন্ধে আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করেন।

ঢাকা মহানগরী উত্তর 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তর আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, রোহিঙ্গারা মুসলমান বলেই তাদের উপর শতাব্দীর সবচাইতে নির্মম ও নিষ্ঠুর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বর্মী বর্গীরা আরাকান রাজ্যে যে গণহত্যা চালাচ্ছে তা অতীতের সকল নৃসংশতাকে হার মানিয়েছে। বাস্তুহারা, স্বজনহারা ও আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের আহাজারীতে আকাশ-বাতাশ ভারী হয়ে উঠেছে। তাই রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষা করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে। তিনি রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষায় জাতিসংঘ, ওআইসি, আবরলীগ ও সার্কসহ বিশ্বসংস্থাগুলোকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান।

তিনি আজ রাজধানীর বিশ্বরোড সংলগ্ন এলাকায় কেন্দ্র ঘোষিত ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত রোহিঙ্গা মুসলমানদের রূহের মাগফিরাত কামনায় গায়েবা জানাজা ও আহত-আশ্রহীনদের কল্যাণ কামনায়’ দোয়া কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত গায়েবানা জানাজা উত্তর সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাজিম উদ্দিন মোল্লা, শুরা সদস্য এ কে মজুমদার, জামায়াত নেতা এম এ বাশার, কামাল উদ্দিন, এম এ রহমান ও মো. কুতুব উদ্দীন, ছাত্রনেতা তরিকুর ইসলাম ও ইমরান হোসেন প্রমূখ। পরে তিনি উপস্থিত সকলকে সাথে নিয়ে নিহত, আহত ও বিপন্ন রোহিঙ্গাদের কল্যাণ কামনায় দোয়া এবং মুনাজাত পরিচালনা করেন।

সেলিম উদ্দিন বলেন, নিরাপরাধ রোহিঙ্গাদের ওপর মায়ানমার বাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা নির্মম নিধনযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালালেও বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো তাদের রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। বরং পরোক্ষভাবে অনেকেই হত্যাযজ্ঞকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। সরকারি সৈন্য ও সন্ত্রাসীরা মুসলমানদের বাড়ী-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসায় আগুন দিয়ে গণলুটপাট চালাচ্ছে। তারা নারীদের গণধর্ষণ করছে। তাদের জিঘাংসা থেকে রেহাই পাচ্ছে না নিরাপরাধ শিশু ও বৃদ্ধরাও। রোহিঙ্গাদের কুপিয়ে, জবাই ও গুলী করে এবং নির্দয়ভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। মূলত রোহিঙ্গারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হওয়ার কারণেই তাদের ওপর ইতিহাসের নির্মমতম নিধযজ্ঞ চলছে। কিন্তু বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু কথাবর্তা বললেও বাস্তবে তেমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকেই যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বিপন্ন রোহিঙ্গাদের রক্ষায় তাদেরকে মানবিক সাহায্য সহ সরকারকে কুটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। সরকার প্রায়ই দাবি করে থাকে যে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আমাদের সম্পর্ক খুবই চমৎকার। বর্তমান সংকটকালীন সময়ে সরকারের এ দাবির বাস্তব প্রতিফলন দেখতে চায় দেশের জনগণ। কারণ, ‘বিপদেই বন্ধু চেনা যায়’। এজন্য দরকার সরকারের জোড়ালো ও বলিষ্ঠ কুটনৈতিক পদক্ষেপ। মূলত রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই। কারণ, জাতীয় বিভক্তি রেখে এ ধরনের সমস্যা সমাধান কোন ভাবেই সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের ইতিবাচক উদ্যোগ। তিনি চলমান সমস্যা সমাধানে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান জানান।

মহানগরী আমীর বলেন, জামায়াতে ইসলামী নিছক কোন রাজনৈতিক দল নয় বরং একটি কল্যাণকামী আন্দোলন ও সংগঠনের নাম। জামায়াত যেকোন জাতীয় দুর্যোগসহ আর্ত-মানবতার কল্যাণে এবং নির্যাতিত, নিপীড়িত ও অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করে আসছে। মানুষের জন্য জামায়াতের কল্যাণকামীতা অতীতেও ছিল, এখনও আছে এবং আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে-ইনশা আল্লাহ। আর আর্ত-মানবতার কল্যাণকামীতার অংশ হিসেবেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের কল্যাণে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাহায্যার্থে আরও কার্যকরভাবে এগিয়ে আসতে সরকার, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় দাতা সংস্থা এবং সমাজের বিত্তবান মানুষদের প্রতি আহবান জানান।

চট্টগ্রাম 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর আলহাজ¦ মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠিকে জাতিগতভাবে নির্মুলের লক্ষ্যে সেনাবাহিনী গণহত্যা,গণধর্ষণ,বাড়িতে বাড়িতে অগ্নিসংযোগত, স্কুল,কলেজ,মসজিদ,মাদ্রাসাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জা¦লিয়ে দিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষাধিক মানুষকে সে নিজ দেশ থেকে বিভিন্ন দেশে তাড়িয়ে দিয়েছে। অবিলম্বে এই জঘণ্য মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য অং সান সূচি এবং সেনা কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করতে হবে। গত ২৫ আগষ্ট থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানেরা বাঁচার জন্য বাংলাদেশে শরণার্থী হিসাবে পালিয়ে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ১৯৮২ সাল থেকে এই রোহিঙ্গা নাগরিকদের নাগরিকত্ব হরণ করেছে মিয়ানমার সরকার। অথচ তারা শত শত বছর ধরে সেখানে বসবাস করছে আসছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিরীহ নারী,শিশু,বৃদ্ধ এবং যুবক-যুবতিকে গণহারে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। তিনি অবিলম্বে আন্তর্জাতিক আদলতে মিয়ানমারের সেনা কর্মসর্তাদের বিচারের দাবী জানান।

রোহিঙ্গা মুসলমান নাগরিকদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসন এবং তাদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল গঠন করে তাদের নাগরিকত্ব পুনর্বহাল করতে হবে। অবিলম্বে গণহত্যা,ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ বন্ধ করতে হবে।

সম্প্রতি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এবং মগ সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত রোহিঙ্গা মুসলমানদের রুহের মাগফিরাত, আহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাদের হেফাজতের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া দিবস উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে আয়োজিত গায়েবানা জানাজা পূর্ব সমাবেশে তিনি সভাপতির বক্তব্যে উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন।

চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে পুরাতন রেল ষ্টেশন চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,নগর জামায়াতের সেক্রেটারী মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম,এসিসটেন্ট সেক্রেটারী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, নগর প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ, ছাত্রশিবির নগর উত্তর সভাপতির তাওহিদুল ইসলাম, নগর দক্ষিণ ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদমান সালেহ্, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী সহ-সভাপতি কাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গির হোসাইন। গায়েবানা জানাজা পূর্ব সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, নগর কর্মপরিষদ সদস্য ডা: মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুছ,মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী ও এম.এ.আলম প্রমুখ।

এছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, কুমিল্লা, নারায়াণগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, মৌলবীবাজার, সুনামগঞ্জ, যশোর, বাগেরহাট, পাবনা,  বগুড়া, দিনাজপুর, নীলফামারী, চাপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, টাংগাইলসহ দেশের আরো বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাযা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।