২৮ আগস্ট ২০১৭, সোমবার, ২:৩১

সরকারের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান

একজন মন্ত্রী ও একজন সাবেক বিচারপতি প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে বক্তব্য দিয়ে দেশের সংবিধান লংঘন করেছেন

গতকাল ২৭ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানব বন্ধনে বাংলাদেশ সরকারের একজন মন্ত্রী বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে লক্ষ্য করে “দেশ ছেড়ে চলে যান, না হয় হেমায়েতপুরে যান” এবং সাবেক বিচারপতি এ.এইচ.এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক গত ২৬ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় “তুমি শুধু প্রধান বিচারপতির পদ ছাড়বা না, এ দেশ ছাড়তে হবে।” মর্মে যে সব অসহিষ্ণু, কটাক্ষপূর্ণ ও অবমাননাকর বক্তব্য ছুঁড়ে দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ও বিস্ময় প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ২৮ আগস্ট প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের একজন মন্ত্রী ও সাবেক বিচারপতি এ.এইচ.এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে লক্ষ্য করে যে সব অসহিষ্ণু, কটাক্ষপূর্ণ, অশালীন ও অশ্লীল বক্তব্য দিয়েছেন তা শুধু অবমাননাকরই নয়; তারা এ বক্তব্য দিয়ে কার্যতঃ আদালত অবমাননা করেছেন। তাদের এ ধরনের অসহিষ্ণু ও বেআইনী বক্তব্য সম্পূর্ণ অন্যায়, অনৈতিক, অনভিপ্রেত এবং অনাকাক্সিক্ষত। তাদের এসব বক্তব্যের মাধ্যমে অসহিষ্ণু মনোভাবই চরমভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

দেশের একজন মন্ত্রী ও একজন সাবেক বিচারপতির নিকট থেকে দেশবাসী এমন উস্কানীমূলক, কুরুচিপূর্ণ, অশালীন ও আদালত অবমাননাকর বেআইনী বক্তব্য আশা করে না। প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে তারা কুরুচিপূর্ণ ও বেআইনী বক্তব্য দিয়ে দেশের আইন এবং সংবিধান লংঘন করেছেন। আদালত অবমাননার দায়ে তাদের দু’জনেরই বিচার হওয়া উচিত।

যে মন্ত্রী সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন তিনিই এক সময় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের গায়ের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছিলেন। এখন তিনি তার সেই বক্তব্যের কাফ্ফারা আদায় করার উদ্দেশ্যেই কী প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ও বেআইনী বক্তব্য দিচ্ছেন?

সাবেক বিচারপতি এ.এইচ.এম শামসুদ্দিন চৌধুরী সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে এ অশ্লীল, রুচিহীন ও উস্কানীমূলক বক্তব্য দিতে পারেন না। তার এ বক্তব্যের দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারপতি হওয়ার মত কোন যোগ্যতাই তার ছিল না। বিশেষ একটি দলের প্রতি আনুগত্যের কারণেই তাকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় এসে দেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। বর্তমান সরকার দেশের জনগণের সভা-সমাবেশ করার এবং মতামত প্রকাশের গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকার হরণ করে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। সরকার নির্বাচন কমিশনকে তাদের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে এবং ব্যালট ডাকাতির নির্বাচনের নাটক করে অনির্বাচিত লোকদের দিয়ে রাবার স্ট্যাম্প সংসদ গঠন করে সংসদীয় গণতন্ত্রিক ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দিয়েছে।

এখন সরকারের মন্ত্রীগণ সুপ্রীম কোর্টের রায় ও প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে কটাক্ষপূর্ণ, কুরুচিপূর্ণ ও উস্কানীমূলক বে-আইনী বক্তব্য দিয়ে আদালত অবমাননা করে বিচার বিভাগকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সরকারের এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

সরকারের একজন মন্ত্রী ও একজন সাবেক বিচারপতি এ.এইচ.এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকসহ যারাই সুপ্রীম কোর্টের রায় ও প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন তাদের সবাইকে দেশের আইন অনুযায়ী বিচারের কাঠ গড়ায় দাঁড় করাবার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তা না হলে আইন-আদালতের প্রতি জনগণের আস্থা ও শ্রদ্ধা থাকবে না এবং আইন হাতে তুলে নেয়ার বেআইনী প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।”