৩ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ৫:৪০

প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পাদনের জন্য ভারতের অব্যাহতভাবে চাপ প্রদানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

দেশবাসী মনে করে প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পাদন বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে চরম হুমকির মুখে ফেলে দিবে

তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পাদনের কোন সম্পর্ক নেই

আগামী ৭ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে ভারতের সাথে বাংলাদেশের তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদনের অনিশ্চয়তা এবং ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক সম্পাদনের জন্য ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের উপর অব্যাহতভাবে চাপ প্রদানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জনাব মকবুল আহমাদ আজ ৩ এপ্রিল প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া বাংলাদেশের জনগণের ন্যায়সংগত অধিকার। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির সাথে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক সম্পাদনের কোন সম্পর্ক নেই।

বাংলাদেশ ভারতের সকল চাহিদা ষোল আনাই পূরণ করেছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে ভারতের নিকট থেকে বাংলাদেশ কোন ন্যায্য পাওয়ানাই আদায় করতে পারেনি। ভারত ও বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে ভারত বাংলাদেশকে বঞ্চিত করেছে। তারা ফারাক্কাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর উপর বাঁধ ও গ্রোয়েন নির্মাণ করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে কৃষি কাজে ব্যবহার করছে। শুধু তাই নয়, ভারত একদিকে শুষ্ক মওসুমে ন্যায্য পানি না দিয়ে বাংলাদেশকে শুকিয়ে মারছে, অন্য দিকে বর্ষা মওসুমে ফারাক্কাসহ অন্যান্য নদীর বাঁধ খুলে দিয়ে বন্যার পানিতে ভাসিয়ে বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে। ফলে বাংলাদেশের উত্তর-পাশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের ভূগর্ভের পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। গাছ-পালা মরে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক সৌন্দার্য্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সে দিকে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকারের কোন দৃষ্টি নেই। তারা দেশকে ধ্বংস করে হলেও ক্ষমতায় আকঁড়ে থাকার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

বাংলাদেশের পশ্চিম, উত্তর ও পূর্বাঞ্চল ঘিরে রয়েছে ভারত। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। দক্ষিণ-পূর্বকোণে মায়ানমারের সাথে রয়েছে বাংলাদেশের সামান্য সীমান্ত এলাকা। বাংলাদেশের সাথে ভারত মুখে বন্ধুত্বের মিষ্টি বুলি আওড়ালেও কার্যতঃ তাদের ভূমিকা বন্ধুত্বের প্রমাণ বহন করে না। সুতরাং ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক সম্পাদনের কোন যুক্তি নেই। এ ধরনের চুক্তি করে তারা বাংলাদেশকে তাদের তাঁবেদার রাষ্ট্র বানাতে চায়। এই প্রতিরক্ষা চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক সম্পাদন বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে চরম হুমকির মুখে ফেলে দিবে বলে দেশবাসী মনে করে। তাই এ চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক দেশের জনগণ কিছুতেই মেনে নিবে না।

তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি হবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে। সুতরাং পশ্চিম বঙ্গের অসম্মতির দোহাই দিয়ে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি বাংলাদেশের সামনে মূলোর মত ঝুঁলিয়ে রাখা ভারতের একটি কূট কৌশল বলেই রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।

ভারত যদি সত্যিই বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করতে চায় তাহলে অযথা কালক্ষেপন না করে বাংলাদেশের সাথে খোলা মন নিয়ে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি সম্পাদন করা উচিত। বাংলাদেশের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক সম্পাদন করা অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়।

দেশবাসীর প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরকালে তিনি তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি ও গংগা নদীর পানির ন্যায্য হিস্সা পাওয়াসহ বাংলাদেশের প্রাপ্য সকল ন্যায্য অধিকার নিয়ে ভারতের সাথে আলোচনা করে তা আদায়ের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিবেন এবং জাতীয় স্বার্থ বিরোধী প্রতিরক্ষা চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক সম্পাদন করা থেকে বিরত থাকবেন।”