১২ জুলাই ২০১৯, শুক্রবার, ৭:৩৬

নারী ধর্ষণ, কন্যা শিশুদের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

দেশে নারী ধর্ষণ, হত্যা বিশেষ করে কন্যা শিশু ধর্ষণ ও হত্যা অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান আজ ১২ জুলাই প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “দেশে নারী ধর্ষণ, হত্যা বিশেষ করে কন্যা শিশুদের ধর্ষণ ও হত্যা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এ সমস্যাটি একটি মারাত্মক জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

দেশের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই নারী ধর্ষণ, হত্যা বিশেষ করে কন্যা শিশু ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে যেভাবে নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং হত্যা বেড়েছে তা আইয়ামে জাহিলিয়াতকেও হার মানাচ্ছে। গত ১০ জুলাই একটি চলন্ত ট্রেনে ষষ্ঠ শ্রেণির একটি কন্যা শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো পুলিশ শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে থানায় ১২ ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছে। দেশের সর্বত্রই এ সমস্যাটি নিয়ে মানুষ আলোচনা করছে। ধর্ষণ কিংবা যৌন নির্যাতনের পর মহিলা ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। এ সবের প্রতিবাদ করলে তাকে পিটিয়ে কিংবা ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হচ্ছে। অথচ বর্তমানে ক্ষমতাসীন অনির্বাচিত সরকারের এ ব্যাপারে কোন মাথা ব্যথা নেই। দেশে গণতান্ত্রিক সরকার এবং আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার থাকলে কিছুতেই এ রকম ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হতো না।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে, গত ৬ মাসে সারা দেশে ধর্ষিতা হয়েছে ৭৩১ জন নারী ও কন্যা শিশু। এদের মধ্যে ৩৯২ জনই কন্যা শিশু। ধর্ষণের কারণে নিহত হয়েছে ২৮ জন নারী ও শিশু। শিশু নির্যাতন হয়েছে ৬৯২টি, ২০৩টি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে গত ৫ বছরে (২০১৪-২০১৯) নির্যাতিতা হয়েছে ৫ হাজার ২৭৪ জন নারী ও কন্যা শিশু এবং ধর্ষিতা হয়েছে ৩ হাজার ৯৮০ জন, গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯৪৫ জন। ধর্ষণের কারণে নিহত হয়েছে ৩৪৯ জন।

উপরের পরিসংখ্যাণ থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, দেশে কী ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। বাস, ট্রেন, লঞ্চ, অফিস, বাসা-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা কোথাও আজ নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নেই। বাসা-বাড়িতে কাজে নিয়োজিত কন্যা শিশুদের ধর্ষণের পরে হত্যা করে বিল্ডিং-এর উপর থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করার মত নৃশংস ঘটনাও ঘটছে। সারা দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে তার খ-িতাংশই সংবাদপত্রে ও মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে। বাস্তব অবস্থা আরো ভয়াবহ।

নৈতিক অবক্ষয়ের কারণেই সমাজে নারী ও শিশু ধর্ষণ, হত্যা, ছিনতাই, গুম, এসিড সন্ত্রাস ইত্যাদি বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থার জন্য দায়ী নীতিহীন শিক্ষা ও সহশিক্ষা ব্যবস্থা, মাদকাসক্তি, সিনেমা ও নাটকে অশালীন দৃশ্য প্রচার। এ অবস্থা থেকে একমাত্র কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাই মানুষকে মুক্তি দিতে পারে। নৈতিক শিক্ষা দিয়ে মানুষের বিবেককে জাগ্রত করে তাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব, মানবিক মূল্যবোধ ও আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই এ অবস্থার অবসান হতে পারে।

নারী ও শিশু হত্যা, ধর্ষণকারী ও মাদকাসক্তদের বিচারের নামে যে দীর্ঘ সূত্রিতা চলছে তার কারণেই দুর্বৃত্তরা আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে অপরাধে আরো উৎসাহিত হচ্ছে। এটা বন্ধের জন্য অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদান করতে হবে। সেই সাথে সমাজের সর্বস্তরে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী নীতি-আদর্শ অনুসরণের উপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করতে হবে।

তাই নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণ, হত্যা এবং এসিড সন্ত্রাস বন্ধের ব্যাপারে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”