বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার নির্মম আঘাতে নিহতদের স্মরণে ২৭ অক্টোবর এক বিবৃতি প্রদান করেছেন:
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “২০০৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে ২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষে ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সারাদেশে লগি-বৈঠার তাণ্ডব সৃষ্টি করে। ঐ দিন বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে জনসভার আয়োজন করা হয়। সকাল থেকে জনসভার স্টেজ নির্মাণের কাজ চলছিল। হঠাৎ করে ১৪ দলীয় জোটের সন্ত্রাসীরা গোটা পল্টন এলাকায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর লগি-বৈঠা, লোহার রড ও বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা চালাতে শুরু করে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুরু হলে চারিদিক থেকে ১৪ দলের সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে জামায়াতের সমাবেশের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সমাবেশের প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন আমীরে জামায়াত ও শিল্পমন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (রাহি:)। জনসভায় উপস্থিত জনগণ এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ওপর আঘাত করাই ছিল তাদের আসল লক্ষ্য। ঐ দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পল্টন এলাকা লগি-বৈঠাধারীদের সন্ত্রাসী তাণ্ডবে এক রক্তাক্ত প্রান্তরে পরিণত হয়। তাদের হামলায় ঢাকাসহ সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন এবং আহত হন সহস্রাধিক নেতা-কর্মী। শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশে ১৪ দলের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে গোটা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মানুষ হত্যা করে মৃত মানুষের লাশের ওপর নৃত্য করে বর্বরভাবে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করে যা সারা বিশ্বের মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। ঐ ঘটনা ছিলো পূর্বপরিকল্পিত মানবতাবিরোধী গণহত্যা।
তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠাধারীদের গণহত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ২৮ অক্টোবরের পথ ধরেই তারা দেশে সন্ত্রাসী রাজনীতি শুরু করেছিলো তা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তখন থেকে দেশকে রাজনীতিশূন্য করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকারসহ মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নেয়া হয়।
২৮ অক্টোবরের নারকীয় গণহত্যার সাথে জড়িত খুনিদের বিচারের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার সেই মামলা প্রত্যাহার করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে খুনিদের রক্ষা করে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ তীব্র গণআন্দোলনের মুখে দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়। আমরা বিশ্বাস করি এই পটপরিবর্তনের ফলে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং অবিলম্বে ২৮ অক্টোবরের গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশের জনগণের দাবি হচ্ছে অবিলম্বে ২৮ অক্টোবরের খুনিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা পুনরায় সচল করে খুনিদের গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২৮ অক্টোবরে যারা নিহত হয়েছেন তাদের স্মরণে আলোচনা এবং তাদের শাহাদাত কবুলের জন্য মহান আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করার জন্য আমি জামায়াতে ইসলামীর সর্বস্তরের জনশক্তি ও দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি। সেই সাথে যারা আহত ও পঙ্গু হয়ে এখনো মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তাদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।”