বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জননেতা ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সকল খুনিদের বিচার করতে হবে। তবে অগ্রাধিকারভিত্তিতে আগে সাম্প্রতিক গণহত্যায় জড়িতদের বিচার করতে হবে। তাদের বিচার এজন্য করতে হবে-শহীদদের তাজা রক্ত এখনো ভাসছে। আহতরা কাতরাচ্ছে। সাক্ষী মজুদ। আলামত জীবন্ত ও স্পষ্ট। যত দ্রুত সম্ভব ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে ওদেরকে সঠিক পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে।
তিনি আজ ১৩ অক্টোবর রোববার সকালে রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের রুকন (সদস্য) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এর সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম এর সঞ্চালনায় রুকন সম্মেলনে দারসুল কুরআন পেশ করেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোঃ আব্দুর রব, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন প্রমুখ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “মুষ্টিমেয় কিছু দুর্বৃত্ত ছাড়া বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ মজলুম ছিলেন। আর মজুলুমদের সামনের কাতারে ছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আমরা কোনো জুলুম ও অবিচার কারো ওপর চাই না। তারা দীর্ঘদিন যেসকল কালাকানুন করেছিলেন তাই দিয়ে তাদের বিচার হোক। তারা যেন তাদের সঠিক পাওনাটা পায়। তাদেরকে যেন পাওনা থেকে বঞ্চিত করা না হয়। যার যেটা পাওনা সেইটাই যেন পায়।”
তিনি বলেন, “আমাদের একেকজন নেতাকে হত্যা করে দেশে বিভীষিকাময় অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। গল্প ফাঁদা হয়েছে। মিডিয়াগুলোকে অপপ্রচারের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। কত হাজার মামলা আমাদের বিরুদ্ধে- এর অর্থ হলো বাংলাদেশে প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়া। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ যাতে সোচ্চার প্রতিবাদ করতে না পারে। চতুর্দিক থেকে চাপ প্রয়োগ করে নড়তে দেওয়া হয়নি। শাহবাগে আসর বসিয়ে আজেবাজে জিনিসও সরবরাহ করা হয়েছে।
২০১৩ সালের ৫ মে বিভিন্ন দাবিতে সোচ্চার অরাজনৈতিক একটি সংগঠন হেফাযতের ওপর ক্র্যাকডাউন করা হয়েছিল। তা ছিল আরেকটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। এটি ছিল আরেকটি গণহত্যা। কতজনকে হত্যা করা হয়েছে তা আজও জাতি জানতে পারেনি।
প্রধান অতিথি বলেন, “আমরা কোনো সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে আইন হাতে তুলে নিয়ে কোনো প্রতিশোধ নেবো না। তারা যেমনটি আইন হাতে তুলে নিয়ে মানুষকে দুঃখ-কষ্ট দিয়েছে, মানুষের ওপর জুলুম করেছে। আমরা সেটা করবো না। কিন্তু ন্যায়বিচার পেতে আমরা বিদ্যমান আইনের মাধ্যমে জুলুমের প্রতিকার চাইবো। আমরা সেই প্রতিকারটিই চাচ্ছি। গণঅভ্যুত্থানের পর মজলুম দল হিসেবে প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার ছিল জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের। কিন্তু ৫৪ হাজার বর্গমাইলের দেশের কোথাও একটিও প্রতিশোধ নেওয়া হয়নি। আমরা সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী সুধীদেরকে অনুরোধ করেছিলাম আগামীতে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করতে চাই । তিনি সকলকে সীমাহীন ধৈর্য্যের পরিচয় দেওয়ার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, “স্বৈরাচারি শাসন কখনো স্থায়ী হয় না। অর্জিত বিজয়কে অর্থবহ ও টেকসই করতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।” তিনি দেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষায় সকলকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের আহবান জানান।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা বীরের জাতি। তাই আমাদেরকে কেউ কখনো পরাভূত করতে পারেনি; আর কখনো পারবেও না। দেশে দীর্ঘ মেয়াদে ফ্যাসীবাদী এবং স্বৈরাচারি শাসন চলেছে। তারা অবৈধ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ি করার জন্য দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু ফ্যাসীবাদের শেষ রক্ষা হয়নি।”
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মাদ সেলিম উদ্দিন বলেন, “দেশকে ফ্যাসীবাদ মুক্ত করতে আমাদেরকে অনেক ত্যাগ ও কোরবানী করতে হয়েছে। ফ্যাসীবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। তাদের সকল অপকর্ম জাতির সামনে তুলে ধরে আগামী দিনের কর্মপন্থা নির্ধারণ করার বিকল্প নেই।”
সম্মেলন উদ্বোধন ঘোষণা করেন বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানের পিতা মো. গোলাম রাজ্জাক।