১৫ ডিসেম্বর ২০১৭, শুক্রবার

বিজয় দিবসের আলোচনা সভা

স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করে সরকার ফ্যাসীবাদী শাসন কায়েম করেছে: মাওলানা আব্দুল হালিম

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম বলেছেন, শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র পেয়েছি। কিন্তু মহান বিজয়ের ৪৬ বছর অতিক্রান্ত হলেও দেশে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ক্ষুধা, দারিদ্র ও বৈষম্যের যাতাকলে পিষ্ট দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার সংবিধান স্বীকৃত হলেও ক্ষমতাসীন দল তা হরণের মাধ্যমে স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করে দেশে জুলুমতন্ত্র ও ফ্যাসীবাদী শাসন কায়েম করেছে। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী সকলের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর (ভারপ্রাপ্ত) ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য কামাল হোসাইনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহাগনরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক নুর নবী, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য আ জ ম রুহুল কুদ্দুস, মাওলানা আমিরুল ইসলাম, নিজামুল হক নাঈম। উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা শাজাহান খান, ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফুল আলম প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।

মাওলানা আব্দুল হালীম বলেন, ভোটার বিহীন প্রহসনের মাধ্যমে নির্বাচিত ক্ষমতাসীন দল দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করেছে। তারা অঘোষিতভাবে দেশে বাকশালী শাসন কায়েম করেছে। দেশে মত প্রকাশের কোন স্বাধীনতা নেই। বিরোধী মতকে দমনের সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যেই বেশকিছু গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। এ সরকারের আমলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সকল দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন সময়ের দাবি হলেও সরকার তা পাশ কাটানোর জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও কুটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। কিন্তু দেশের মানুষ সরকারের সে ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হতে দেবে না।

তিনি আরোও বলেন, সরকার অবৈধ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতেই দেশে বিরাজনীতিকরণ শুরু করেছে। দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা যখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি সেখানে পরিকল্পিতভাবে বিভেদ সৃষ্টি করে দেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে রাখা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৯ সাল থেকে সকল সংসদে জামায়াতে ইসলামী প্রতিনিধিত্ব করেছে অথচ সরকার জামায়াতকে কোন কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছেনা। আমীরে জামায়াত মকবুল আহমদ, নায়েবে আমীর মিয়া মোহাম্মদ গোলাম পরওয়ার, সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল সহ বিরোধী ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগে মামলা দিয়ে জুলুম-নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি, লুটপাট, চাদাঁবাজি ও দলীয়করণের কারণে সরকার সকল ক্ষেত্রে চরমভাবে ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছে। মানুষের জান মাল ইজ্জত-আব্রুর কোন নিরাপত্তা নেই। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুম, খুন, গুপ্তহত্যা, ক্রস ফায়ার ও অপহরণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এমনকি মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুরও কোন গ্যারান্টি নেই। ফলে জনগনের মধ্যে চরম আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। ফ্যাসিবাদী-বাকশালীরা ক্ষমতায় থাকলে জনগনের জানমালের আরো অনিরাপদ হয়ে উঠবে। এভাবে কোন ভাবেই স্বাধীনতা ও মহান বিজয়ের সুফল অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই তিনি গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়-ইনসাফ ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়তে সকলকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান।

ড. হেলাল সভাপতির বক্তব্যে বলেন, গণতন্ত্র, মানবিক মূল্যবোধ ও সাম্য মহান স্বাধীনতার মূলমন্ত্র হলেও প্রতিহিংসা ও বিভাজনের রাজনীতির কারণে আমরা সে লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। আত্মনির্ভরশীলতা মহান বিজয়ের চেতনা হলেও এখনোও আমরা পশ্চাদপদ। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি, ধনী-গরীবের বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানুষের নিরাপত্তার অভাব সর্বোপরি সরকারের বিভেদ নীতি জাতীকে আরোও পিছিয়ে দিচ্ছে। মূলত দল, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে দেশপ্রেম ও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সুখী, সমৃদ্ধ ও সপ্নের বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। তিনি দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে সকলকে প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ ও বিভেদের রাজনীতি পরিহার করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।

দৈনিক সংগ্রাম