বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “দেশের আকাশ থেকে এখনো কালো মেঘের ঘনঘটা কেটে যায়নি। শকুনীর শ্যান দৃষ্টি এখনো তৎপর রয়েছে। তাই দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষা এবং সুশাসন ও ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে আরো বড় ধরনের ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
তিনি আজ ৩০ আগস্ট রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, রমনায় সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা কথা বলেন। পরিষদের মহানগরী আহবায়ক প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে ও পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, প্রফেসর ড. আব্দুল হান্নান, ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান, সাবেক জাজ এডভোকেট তাহা মোল্লাহ,কর্নেল (অব.) ডা. জিহাদ খান, ইঞ্জিনিয়ার মিসবাহ উদ্দীন খান, ওবাইদুর রহমান, ড. মুফতি মাওলানা আবুল কালাম আযাদ বাশার, মোহাম্মদ মাসুদ কবির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মূসা প্রমুখ।
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন তার লেখনী ও তাফসির মাহফিলের মাধ্যমে আমৃত্যু দ্বীনের খেদমত করে গেছেন। কিন্তু জুলুমবাজ ও ফ্যাসীবাদী সরকার তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা দিয়ে তাকে কারারুদ্ধ করেছে। তারা দেশকে মেধা ও নেতৃত্বশূণ্য করার জন্যই কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে প্রহসন করে শীর্ষ ১১ জন জাতীয় নেতা ও বরেণ্য আলেমদের নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যার মহড়া চালিয়েছে। তারা ৫ জন নেতাকে প্রহসনের বিচারের নামে ফাঁসিতে হত্যা আরো ৫ জন নেতাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, জামায়াতকে ধ্বংস করার জন্য শত শত নেতাকে তারা হত্যা করেছে। পঙ্গু করেছে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে। তারা অন্যান্য বিরোধী দলের ওপরও নির্মম দলন-পীড়ন চালিয়েছে। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু জুলমবাজ ও ফ্যাসীবাদীদের শেষ রক্ষা হয়নি। ছাত্র-জনতার তোপের মুখে তাদেরকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, “আওয়ামী ফ্যাসীবাদীরা ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলনে দিশেহারা হয়ে জামায়াত নিষিদ্ধ করেছিল। তারা জামায়াতের ওপর দায় চাপিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু আমরা সে পাতানো ফাঁদে পা দেইনি। ফলে আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের বিজয় দান করেছেন। সকল ষড়যন্ত্রের জাল ভেদ করে মাত্র ২৬ দিনের মাথায় আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেয়েছি।”
তিনি আরো বলেন, “বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের দায়িত্ব অনেক। তাঁরা আওয়ামী-স্বৈরাচারীদের হাত থেকে একটি বিধ্বস্ত দেশ পেয়েছেন। তাই দেশে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সংশোধনে সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে। আর দেশের মানুষ ন্যায়বিচার চায়। দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা না গেলে স্বাধীনতা কখনো অর্থবহ হয়ে উঠবে না বা স্বাধীনতার সুফল ভোগ করা যাবে না।”
তিনি সাংবাদিকদের ওপর আওয়ামী জুলুম-নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলেন, “সাংবাদিক সমাজ জাতির বিবেক ও দর্পন। কিন্তু আওয়ামী শাসনামলে তাঁরা স্বাধীন ও বিবেক সম্মতভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন নি। তাই সময় এসেছে গণমাধ্যমকর্মীদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করার। আপনারা আমাদের গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। এ বিষয়ে আমাদের কোন হীনমন্যতা নেই।” তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে দেশের সাংবাদিক সমাজ অতন্ত্র প্রহরীর ভূমিকা পালনের আহবান জানান।