২৮ আগস্ট, বুধবার, রাজধানীর লেকশোর গ্রান্ড হোটেলে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্মানিত সম্পাদক, প্রধান নির্বাহী, বার্তা সম্পাদক ও চীফ রিপোর্টারদের সাথে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান-এর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ-এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, জনাব হামিদুর রহমান আযাদ সাবেক এমপি, এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও এডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মোবারক হোসাইন প্রমুখ।
আমীরে জামায়াত বলেন, “আমাদের প্রিয় সমাজ, জাতি ও দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সমাজের যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ রয়েছে এর মধ্যে সাংবাদিকতা বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। সমাজের দুটি অংশের একটি সাংবাদিকতা ও আরেকটি রাজনীতি। এই দুইটি ক্ষেত্রের সাথে সংশ্লিষ্টগণ যখন সমন্বিতভাবে কাজ করেন, তখন সমাজটা কাক্সিক্ষত সমাজে পরিণত হয়। আর যেখানে এই বুঝাপড়ার ব্যত্যয় ঘটে সেখানে সমাজকে প্রত্যাশিত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। জাতির ক্রান্তিলগ্নে এই দুই ক্ষেত্রের সাথে সংশ্লিষ্টদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিতে হয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশের বুকে গড়ে উঠা একটা সংগঠন। ইসলামের সুমহান আদর্শকে বুকে ধারণ করে দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিয়ে এবং দেশ ও জাতির প্রয়োজনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে নই। আপনাদের সমালোচনা, পরামর্শ আমাদের চলার পথকে সহজ করবে। আমরা জাতি হিসেবে এক। আমরা কোন বিভক্তি চাই না। আসুন আমরা শপথ নিই, আমরা জাতির স্বার্থে সর্বদা এক থাকব।”
দেশ ও জাতি গঠনে জামায়াতে ইসলামীর প্রতি পরামর্শ ও করণীয় বিষয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিগণের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দীন, বিএফইউজে-এর সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আব্দুল হাই শিকদার, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম এ আজিজ, দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার নির্বাহী যুগ্ম সম্পাদক শামীমুল হক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, বাংলা ভিশনের প্রধান সম্পাদক ড. আব্দুল হাই সিদ্দিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হাসান আহমদ কিরণ, প্রবীণ সাংবাদিক এলাহী নেওয়াজ। উপস্থিত ছিলেন দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, দৈনিক কালবেলা সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মা, আমার সংবাদ সম্পাদক হাশেম রেজা, নয়া শতাব্দী সম্পাদক নাঈম সালেহীন, ডেইলি স্টারের বিশেষ সংবাদদাতা রাশেদুল হাসান প্রমুখ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
আমীরে জামায়াত বলেন, “যে সমাজে সকলেই নিগৃহীত হন, সাংবাদিকরাও সেখানে নিগৃহের শিকার হবেন, এটাই স্বাভাবিক। কারণ সাংবাদিকগণও তো সমাজেরই অংশ।
বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশে প্রধানত মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এই চার ধর্মের লোক বসবাস করে। আমাদের কথা খুব পরিষ্কার, আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশ। এখানে ধর্ম বা দলের ভিত্তিতে বিভক্ত করা চরম অন্যায়। আর যে জাতি এ ধরনের বিষয় নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে, সে জাতি একটা দুর্বল জাতিতে পরিণত হয়। আমাদের পারস্পরিক বিভক্তির কারণে আমাদের প্রতি অন্যদের মাতব্বরি করার সুযোগ তৈরি হয়। আমরা পরস্পর বিভক্ত হয়ে এ মাতব্বরির সুযোগটা আমরাই তৈরি করে দিই। আমরা মনে করি, যেখানে জাতীয় স্বার্থ জড়িত সেখানে বিভক্তি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এ জায়গাটায় আমাদেরকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা আর কোনো ধরনের বিভক্তি চাই না।
তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিগত সাড়ে ১৫টি বছর আমরা আমাদের মুখের ভাষা জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। আমাদের কর্মের বিষয়গুলোতে আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারিনি। আমরা মিডিয়াগুলোতে আমাদের বক্তব্য পাঠাতে চেষ্টা করতাম। কিন্তু সেখানে যে কারণেই হোক আপনাদের মনের আকাক্সক্ষা থাকা সত্ত্বেও তা প্রকাশ করতে পারেননি বলে আমরা ধারণা করি। এ না পারার জায়গাটা চিরতরে বিলীন হয়ে যাক, নিশ্চিহ্ন হয়ে হয়ে যাক আমরা দোয়া করি। আমি ব্যক্তি হিসেবে এবং আমাদের দল ভুলের ঊর্দ্ধে নয়। আমাদের ভুল কেউ ধরিয়ে না দিলে, আমরা তো ভুলের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে যাব।
আসুন আমরা সমাজের সব হাতগুলোকে এক জায়গায় নিয়ে আসি। শপথ নেই, আমরা জাতীয় স্বার্থে এক। এ জায়গায় আমরা কম্প্রমাইজ করব না। এটা কারো পক্ষে বা বিপক্ষে গেলেও এতে আমাদের কিছু আসে যায় না। সবকিছুর ঊর্দ্ধে জাতীয় স্বার্থ। আপনাদের কলম মুক্ত ও শাণিত হোক। আপনাদের মুখগুলোও মুক্ত ও স্বাধীন হোক। সকলের চিন্তা ও মুখ খোলাসা হোক এবং আমরা যেন নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারি। একজন কৃষকও যেন নির্ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারে, লাঙ্গল নিয়ে মাঠে যেতে পারে। একজন পিয়ন যেন ভয়ের সংস্কৃতিতে না থাকে, তাকে যেন বসের দাসে পরিণত হতে না হয়। সমাজের শাসকরা যেন প্রভু বনে না যান। তারা যেন নাগরিকদের অধীনস্ত দাস মনে না করেন। বরং নাগরিকদের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে তারা বাধ্য হন এবং নাগরিকদের কাছেই তাদের জবাবদিহি করতে হবে এই অনুভূতি জাগ্রত হোক আমরা সেই দোয়া করি। সবকিছুর ঊর্দ্ধে আমাদের জাতীয় স্বার্থ- আল্লাহ তাআলা আমাদের এটা বুঝার এবং এক সাথে কাজ করার তাওফীক দিন। আমীন।”