জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের ৬টি বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তার মধ্যে ইসির বক্তব্যের সাথে একমত হয়ে দু‘টি বিষয় সংশোধন করতে জামায়াত সম্মত হয়েছে। বাকী চারটি বিষয়ে লিখিতভাবে সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দিয়েছে। এ ব্যাখ্যা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সন্তোষজনক হলে জামায়াতকে ধন্যবাদ পত্র দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা। অন্যথায় আবারো ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক শেষে তিনি একথা বলেন। সিইসি ড. হুদা বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ তাদের মতামত তুলে ধরেছে। লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছে। আমরা কোন মতামত দেইনি। তাদের মতামত বিশ্লেষণ করে পরবর্তীতে মতামত দেয়া হবে। তারা ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু সংবিধানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক আছে কিনা? জানতে চেয়েছি। তারা বলেছেন, অমুসলিমদেরকে জামায়াতের সদস্য হওয়ার সুযোগ রেখে আলাদা একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ৬টি বিষয়ে আপত্তি ছিল। তারা দু‘টি বিষয় মেনে নিয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো, বাদ দেয়া কয়েকটি লাইন পুনরায় ছাপা হয়েছে। এটি ভুলে ছাপা হয়েছে। তা বাদ দেয়া হবে। আর ২০২০ সালের মধ্যে কমিটিতে ৩৩ শতাংশ মহিলা সদস্য রাখার বিধানটি ফুটনোটে ছিল তা ধারার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করবে বলে তারা জানিয়েছে। জামায়াতের বক্তব্যে ইসি সন্তুষ্ট কিনা? জানতে চাওয়া হলে সিইসি বলেন, সন্তুষ্ট অসন্তুষ্টের কিছু নয়। আমরা তাদের বক্তব্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করবো। তাতে সন্তোষজনক হলে তাদেরকে ধন্যবাদপত্র দেব অন্যথায় পুনরায় সংশোধনের জন্য চিঠি দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
দীর্ঘ দেড় ঘন্টা বৈঠক শেষে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ইসি গঠনতন্ত্রের কিছু বিষয় সংশোধনের চিঠি দিয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে আজকের বৈঠক। নিবন্ধন নেয়ার সময় গঠনতন্ত্র থেকে কয়েকটি লাইন বাদ দেয়া হয়েছিল। তা চূড়ান্ত গঠনতন্ত্রে ভুলক্রমে ছাপা হয়েছে। এ লাইনগুলো বাদ দেয়া হবে। আর কমিটিতে ৩৩ শতাংশ মহিলা সদস্য রাখার বিধানটি ফুটনোটে ছিল। এটি ধারার মধ্যে সংযুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, ইসি আরো কয়েকটি ধারার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তার মধ্যে ইসলামী সুবিচার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সংবিধানের সাথে কিভাবে সমন্বয় করা হবে, জানতে চেয়েছে। এ বিষয়ে আমরা যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেছি। আমাদের গঠনতন্ত্রে অমুসলিমদেরকে সদস্য করার বিষয়ে একটি ধারা রাখা হয়েছে। আর সংবিধানে মার্কসবাদ, লেলিনবাদ মতবাদের কথা উল্লেখ নেই। অথচ বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো এসকল মতবাদ নিয়ে রাজনীতি করছে।
সুতরাং ইসলামী সুবিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও কোন সমস্যা নেই। তাই আরপিও অনুযায়ী তা সংশোধনের প্রয়োজন নেই বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে আমাদের একটি কমিটি রয়েছে। আর এ কমিটির সদস্যরা তৃণমূল সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত। ইসির সাথে আলোচনা সুন্দর হয়েছে। এ ধরনের আলোচনা আরো হওয়া দরকার। ইসি বলেছে তারা আলোচনা করে পরবর্তীতে মতামত জানাবে।
বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, ইসি সচিব মুহাম্মদ হুমায়ূন কবিরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা, এটিএম আজহারুল ইসলাম, অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ঢাকা মহানগরী আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. জসিম উদ্দীন সরকার, কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ, ঢাকা মহানগরী আইন বিভাগীয় সভাপতি এড. ফরিদ উদ্দীন খান।
কার্টেসীঃ দৈনিক সংগ্রাম