২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০, শুক্রবার

শহীদ সেনা অফিসারদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে মাওলানা নিজামী

ভবিষ্যতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে জাতিকে রক্ষার জন্যই ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করতে হবে

জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী পিলখানায় সংঘটিত মর্মান্তিক ঘটনায় শহীদ সেনা অফিসারদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিলে বলেন, এ ঘটনা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পঙ্গু হওয়ার মতো ঘটনা। এতে আমাদের সীমান্ত অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। যার পরিণতিতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এর সঠিক তদন্ত না হওয়া আরো বেশি ক্ষতিকর। তিনি মূল রহস্য উদঘাটনে সেনাবাহিনীর তদন্ত রিপোর্ট হুবহু প্রকাশ ও তদন্তের ক্ষেত্রে তাদের অপারগতার কারণ দূর করে সঠিকভাবে কাজ করার সুয়োগ দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। তিনি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ ও নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়ে বলেন, তা না করা হলে রহস্য যদি থেকে যায়, চাপা ক্ষোভ যদি সঠিকভাবে প্রকাশের উপায় না থাকে, তখন যেভাবে প্রকাশ পায় তা কোন মানুষ চাইতে পারে না। ভবিষ্যতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্যই সেদিন পিলখানায় কি ঘটেছিল, এর নেপথ্য নায়ক কারা এটা স্পষ্ট হওয়া উচিত।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মগবাজারস্থ আলফালাহ মিলনায়তনে গতবছর পিলখানায় সংঘটিত মর্মান্তিক ঘটনায় শহীদ সেনা অফিসারদের স্মরণে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী আমীর রফিকুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, এটিএম আজহারুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, সহকারী সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম বুলবুল, মাওলানা আবদুল হালিম, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ডা. রেদওয়ানুল্লাহ শাহেদী। উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুজিবুর রহমান।

মাওলানা নিজামী তার বক্তব্যে বলেন, আজকের দিনটি (২৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক দিন। এই দিনে আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক, স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী সশস্ত্র বাহিনীর অর্ধশতাধিক চৌকস সেনা কর্মকর্তাকের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। ওই সময় থেকে আজকের দিন পর্যন্ত যত লেখালেখি হয়েছে, তাতে একটি বিষয় ছিল, এক ও অভিন্ন, তা হচ্ছে এটা একটা পরিকল্পিত ঘটনা। এর পিছনে কারা ছিল? যারা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে স্বনির্ভর ও সুরক্ষিত হওয়া দেখতে চায় না, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক চায় না। তিনি বলেন, এ ঘটনার তাৎক্ষণিক ফল হচ্ছে যে, বিডিআর ছিল চোরাকারবারী ও বিএসএফ এর আতঙ্ক, সেই বিডিআরকে বিডিআরের মাধ্যমে শেষ করে দেয়া হয়েছে। অনেকেই বলে, বরাইবাড়ী ও পদুয়ায় বিএসএফ বিডিআরের হাতে যেভাবে মার খেয়েছে, এ ঘটনার মাধ্যমে তারই প্রতিশোধ নিয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের সীমানা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। অবাধে ফেনসিডিলসহ মাদকদ্রব্য আসছে, আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করা হচ্ছে। অবাধে অস্ত্র আসার কারণে আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতির অবনতি, সন্ত্রাসী কাজকে উস্কে দেয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমীরে জামায়াত বলেন, বিডিআরের কেউ কেউ তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে সরকারি দলের কয়েকজন এমপির সাথে দেখা করেছিল, এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পিএস এর কাছেও দাবি দাওয়ার কাগজ ধরিয়ে দিয়েছিল বলে শোনা যায়। আর পিএস পেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী না পাওয়ার কথা নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটা পাওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে কেন কাজে লাগানো হলো না তথ্য সংগ্রহের জন্য? তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিডিআর সপ্তাহ উদ্বোধন করলেও বিডিআরের ডিনারে যাননি। যে কারণে তিনি সেখানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, একইভাবে সে ঘটনা ঘটতে না দেয়ারও ছিল তার সাংবিধানিক, নৈতিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। তিনি সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, বিডিআরের ডিজি সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন, আরো অনেকেরই সাথে কথা বলেছেন। এরপরও তারা কয়েক ঘণ্টা ছিল অসহায়। কেউ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি বলেন, আমরা শুনেছি, সেদিন প্রধানমন্ত্রী নাকি তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, সেখানে সেনাবাহিনী পাঠাতে কত সময় লাগবে। তিনি নাকি বলেছিলেন, দুই আড়াই ঘণ্টা সময় লাগবে।

তিনি বলেন, এরশাদসহ সেনাবাহিনীর সাবেক অনেক কর্মকর্তাই বলেছেন, সেখানে পৌঁছতে সময় লাগার কথা ১৫ মিনিট আর অভিযান চালাতে সময় লাগতো মাত্র ৫ মিনিট। সব মিলিয়ে ২০ মিনিটের বেশি সময় লাগার কথা ছিল না। বিডিআরের সাবেক একজন ডিজি বলেছেন, মানুষের জানমালের ক্ষতির অজুহাত তুলে সেনা অভিযান চালানো হয়নি, আসলে সেটা ভুয়া অজুহাত। মাত্র কয়েকটি ট্যাংক ঢুকিয়ে দিলেই তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হতো। প্রশ্ন উঠেছে, কেন পুরো এলাকা ঘেরাও করে রাখা হয়নি। কেন বিদ্রোহীদের পালানোর সুযোগ দেয়া হয়েছে।

মাওলানা নিজামী বলেন, ঐ দিনে আমাদের প্রতিবেশী দেশের মিডিয়ার ভূমিকা কি ছিল তা জানা দরকার ঘটনার গভীরে পৌঁছানোর জন্য। আমাদের মিডিয়ায় আসার আগেই সেখানকার মিডিয়া প্রচার করে ডিজি নিহত হয়েছে। এটা তখনই সম্ভব, যদি ওখানকার কোন সঙস্থা ঘটনার ক্লোজ মনিটরিং করে। তিনি বিডিআর ম্যাসাকার নিয়ে লেখা একটি বই এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, প্রতিবেশী দেশের মাস্টার প্ল্যানের আওতায়ই এ ঘটনা ঘটে। এর মাধ্যমে আমাদের সীমানা অরক্ষিত হয়ে পড়ে, সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসারদের হত্যার কারণে প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্বনির্ভর হওয়া অপরিহার্য। তা না হলে কোন দেশ বা জাতির স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বপ্নও দেখতে পারে না। আমীরে জামায়াত বলেন, আমরা ভারতের সাথে বৈরী আচরণ করতে চাই না। তারাও করুক তা চাই না। আমরা বন্ধুত্ব চাই কিন্তু বন্ধুত্বের আদলে প্রভুত্ব কাম্য হতে পারে না। ভারত বন্ধুত্বের প্রমাণ করতে পারেনি।

তিনি বলেন, ভারতের আচরণ সামনে রেখে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। তিনি আরো বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের জন্য সুদক্ষ, সুশৃক্মখল ও আধুনিক সেনাবাহিনী দরকার। এর সাথে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনমানুষের ঐক্য ও সংহতি অপরিহার্য। এটা ছাড়া কোন আঘাত আসলে তা মোকাবিলা করে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে না।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ চায় না আমাদের সেনাবাহিনী থাকুক। এ কারণেই রক্ষীবাহিনী গঠন করা হয়েছিল। আবারো যেন সে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সবাইকে সেদিকে নজর রাখা উচিত।

মাওলানা নিজামী বলেন, বিডিআরের ঘটনার বিচার শুরু করেছে। কিন্তু সঠিক বিচারের জন্য সঠিক তদন্ত হওয়া জরুরি। সরকারি তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রীর মন্তব্য হচ্ছে, সরকার যতটুকু প্রকাশ করা প্রয়োজন মনে করবে, ততটুকুই প্রকাশ করবে। পুরোটা কেন প্রকাশ করা হয়নি? প্রকাশ না করার কারণ কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের হওয়ার মতো কিছু ছিল কি না এ প্রশ্নও জনমনে জেগেছে। পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে, সেনাবাহিনী গঠিত তদন্ত কমিটিও বিধি-নিষেধের কারণে সব কিছুর উপসংহার টানতে পারেনি। সরকারি তদন্ত কমিটি আরো বৃহৎ তদন্ত করার যে সুপারিশ করেছিল, সেটাও করা হয়নি। তিনি একজন কলামিস্টের লেখার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, সঠিক তদন্ত ছাড়া, পেছনের নায়ক মহানায়কদের মুখোশ উন্মোচন ছাড়া জাওয়ানদের বিচার করার মাধ্যমে জাতি সন্তুষ্ট হতে পারে না।

তিনি বলেন, আটক থাকা অবস্থায় অনেক জওয়ান মারা যাচ্ছে। অনেকে মনে করে, তাদের মারা হয়েছে। এভাবে চলতে পারে না। তিনি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ ও নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়ে বলেন, তা না করা হলে রহস্য যদি থেকে যায়, চাপা ক্ষোভ যদি সঠিকভাবে প্রকাশের উপায় না থাকে, তখন যেভাবে প্রকাশ পায় তা কোন মানুষ চাইতে পারে না। ভবিষ্যতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্যই সে দিন পিলখানায় কি ঘটেছিল, এর নেপথ্য নায়ক কারা তা স্পষ্ট হওয়া উচিত। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ঘটা, তা ঠেকাতে না পারা আর নেপথ্য নায়কদের বের করতে না পারা সরকারের বড় রকমের ব্যর্থতা উল্লেখ করে আমীরে জামায়াত বলেন, এখনও অনেক রহস্য রয়ে গেছে। সাদা কাপড় উড়িয়ে সেখানে প্রবেশ করা হলো, আগে থেকে যোগাযোগ না থাকলে পছন্দেরও ডিএডিকে কিভাবে নিয়ে আসা হলো? প্রতিনিধি দলে কারা ছিল, তা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে কেন রেকর্ড রাখা হলো না কেন? এটা বড়ই রহস্যজনক। তিনি বলেন, এ ঘটনা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পঙ্গু হওয়ার মতো ঘটনা। এতে আমাদের সীমান্ত অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। যার পরিণতিতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এর সঠিক তদন্ত না হওয়ায় আরো বেশি ক্ষতিকর। তিনি মূল রহস্য উদঘাটনে সেনাবহিনীর তদন্ত রিপোর্ট হুবহু প্রকাশ ও তদন্তের ক্ষেত্রে তাদের অপরাগতার কারণ দূর করে সঠিকভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া উচিত।

মাওলানা নিজামী পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, হঠাৎ করেই পার্বত্য চট্টগ্রামে আগুন জ্বলছে। এটা একটা অশনি সংকেত। সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেনা ক্যাম্পগুলো প্রত্যাহার করে নেয়ার কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তিনি সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপনের দাবি জানান। তিনি চট্টগ্রামের আলেম ও ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের গুলী বর্ষণের নিন্দা জানিয়ে বলেন, সরকার যদি গণতান্ত্রিক হয়, নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রেও উত্তোরণ হয়েছে বলে যদি মনে করা হয়, তাহলে সরকার সভা-সমাবেশে বাধা দিতে যাবে কেন? কুদরাতই খুদা শিক্ষানীতি চাপিয়ে দেয়ার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের কর্মকান্ডের কারণেই আলেম সমাজ মাঠে নেমেছেন। তাদের ওপর আঘাত ১৫ কোটি মানুষের ঈমান আকিদার ওপর আঘাত।

তিনি সরকারকে এ ধরনের কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার আহবান জানান। তিনি বলেন, ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে। জরুরি সরকারের সময়ে করা নিজেদের অপকর্ম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই জেনারেল মইন গোপন চুক্তির মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে। তিনি আরও বলেন, নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির রাস্তা বন্ধ হলে অগণতান্ত্রিক অনিয়মতান্ত্রিক শক্তির পথ খোলা হয়। এটা কারও জন্যই শুভ হতে পারে না। কৃত্রিম বাধা সৃষ্টির মতো সকল অপরিণামদর্শী কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান। সরকারের সকল ধরনের অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য তিনি জনগণের প্রতি আহবান জানান।

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেন, শহীদ সেনা অফিসারদের স্মরণে আজকের (গতকাল বৃহস্পতিবার) এই আলোচনা সভা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে হওয়ার কথা ছিল। সরকারিভাবে যদিও জরুরি সরকারের মতো ঘোষণা করা হয়নি যে, সভা-সমাবেশ করতে অনুমতি লাগবে, তারপরও আইনানুগ দল হিসেবে আমরা আইন-শৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সভার কথা জানাই। আমাদের সভা করার অনুমতি দেয়া হয়নি। শহীদ সেনাকর্মকর্তাদের স্মরণে আয়োজিত সভায় বাধা দেয়া প্রশ্নবোধক। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে মুফতি আহমদ শফির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। অনুমতি নেয়ার দরকার না থাকলেও তারা অনুমতিও নিয়েছিলেন, তারপরও তাদের করতে দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে, মেট্রোপলিটন পুলিশের বিধি মতো সভা না করতে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ধরনের বিধি থাকলে আওয়ামী লীগ সভা-সমাবেশে মিছিল করে কি করে? জাতিকে তা জানাতে হবে। তিনি বলেন, এটা কোন ধারা যে ধারা বলে কোন কোন দল সভা করতে পারবে, আবার কোন কোন দল সভা করতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, মুফতি শফি আহমদ ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি, সরকারের ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড, ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার চেষ্টার প্রতিবাদ জানাতেই এ সভার আয়োজন করেছিলেন। তাহলে কি সরকার ইসলামী দল, ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামী ব্যক্তিত্বদের ওপর অঘোষিত কোন বিধি নিষেধ আরোপ করছে? তা না হলে বাধা দেয়া বেআইনি। এ ব্যাপারে জাতি পুলিশের বক্তব্য আশা করে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় নারকীয় ও নির্মম হত্যাকান্ডের তদন্ত রিপোর্ট সরকার প্রকাশ করেনি। তিনি বলেন, ভারতের সাথে সমঝোতা করেছে, বিনা শর্তে বন্দর দিয়ে এসেছে, টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে ভারতে লাইসেন্স দিয়ে আসা হয়েছে, দ্রব্যমূল্যও ঊর্ধ্বগতি, আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতি অবনতি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাধছিল, তখনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমরা এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছিলাম। এতে যারাই দোষী হোক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছিলাম। তারপরও সারাদেশে কেন চিরুনি অভিযান চালানো হয়েছে? সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যই রাজশাহীর ঘটনাকে ব্যবহার করছে সরকার।

জনাব মুজাহিদ বলেন, বাংলাদেশের স্থপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান যে ইস্যু মীমাংসা করে গেছেন, তাই এখন চাঙ্গা করা হচ্ছে। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার হত্যাকান্ড নিয়ে জনগণ প্রশ্ন করবে, জনগণ বিচার চাইবে, এদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দিতে সেই মীমাংসিত ইস্যু সামনে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, যারা মীমাংসিত ইস্যু নিয়ে কথা বলে, তারা পিলখানার বিচার চায় না। তারা আসলে একযোগে ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে হাত মিলিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুবল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি বিডিআরের ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে বলেন, দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে। এ ব্যাপারেও জনগণকে সচেতন হতে হবে। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের যত বড়ই আঘাত আসুক না কেন ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আবদুল কাদের মোল্লা বলেন, কিছু ঘটনা ঘটলেই ইসলামী দলগুলোর উপর দোষ চাপানো হয়। বিডিআরের ঘটনায় সিআইডি যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, এর সাথে এমন কেউ জড়িত নয়।

তিনি বলেন, জাতীয় বেঈমান, এ যুগের মীর্জাফর জেনারেল মউনকে রিমান্ডে নিলেই ঘটনার রহস্য বেরিয়ে আসতে পারে। এটিএম আজহারুল ইসলাম তদন্ত রিপোর্ট জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, পিলখানার ঘটনা একটি পরিকল্পিত ঘটনা। পাগলেও বিশ্বাস করবে না শুধু অপারেশন ডাল-ভাতের কারণে চৌকস সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়েছে। তিনি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ ও দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। আজ দোয়ার মাহফিল : জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে পিলখানার মর্মান্তিক ঘটনায় শহীদ সেনা অফিসারদের স্মরণে আজ জুমাবার বিকাল ৫টায় আলফালাহ মিলনায়তনে দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে এবং মহানগরীর থানায় থানায়ও দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

কার্টেসীঃ দৈনিক সংগ্রাম