৫ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার

দেশে নানা অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেশকে দেউলিয়াত্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এক বৈঠক সংগঠনের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুটপাট, বিদেশে অর্থ পাচারসহ নানা অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নিম্নোক্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়।

“বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট ও বিদেশে অর্থপাচার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে। গত ১৪ বছরে মেগা প্রকল্পের নামে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে কাজের মেয়াদ প্রলম্বিত করে অর্থ লুটপাট ও অর্থ আত্মসাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারের সীমাহীন দুর্নীতিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক দুর্নীতির সূচকে ১৩-তম স্থানে রয়েছে। এটা দেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।

সরকারের দুর্নীতির একটি উদাহরণ হচ্ছে পদ্মাসেতু। ১০ হাজার কোটি টাকার সেতুর কাজ শেষ করতে ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে। এই বিশাল অঙ্কের দুর্নীতি বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি করেছে। শেয়ারবাজার, ডেস্টিনি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, রিজার্ভ ফান্ডের টাকা চুরি এবং সর্বশেষ ইসলামী ব্যাংকের অর্থ লুটপাট দুর্নীতির এক কলঙ্কজনক নজির হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

আওয়ামী দলীয় নেতাকর্মীদের দুর্নীতির ফিরিস্তি লিখে শেষ করা যাবে না। ফরিদপুরে দুই ভাইয়ের ২ হাজার কোটি টাকার অর্থ আত্মসাৎ, পিকে হালদারের হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থ কেলেঙ্কারিসহ নানা অর্থ আত্মসাৎ ও লুটপাটের ঘটনায় দেশের আর্থিক কেলেঙ্কারির ভয়বহতা অনুমান করা যায়।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা লক্ষ্যে করছে যে, ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাটের পাশাপাশি সারাদেশে চলছে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ব। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা সত্তে¡ও সরকারের মন্ত্রী এবং দলীয় নেতারা দুর্নীতি ও অর্থ লুটপাট করে দেশে-বিদেশে নামে-বেনামে বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। জনগণের কষ্টের টাকা লুটপাট করে কানাডায় বেগমপাড়া, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, সিংগাপুর ও দুবাইয়ে বিলাশ বহুল বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। সুইস ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা জমা করা হয়েছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ৮ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। প্রকৃত পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ চক্র ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা আর ফেরত দিচ্ছে না। বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। যেসব মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তার মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হলেও আজো কাজ শেষ হয়নি। দফায় দফায় ব্যয়ের অঙ্ক বৃদ্ধি করে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে অথচ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়নি। দেশের সর্বত্রই শুধু দুর্নীতি আর দুর্নীতি। সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা, অবহেলা ও অমনোযোগীতার কারণে দেশের অর্থনীতির প্রধান খাত রেমিটেন্স প্রবাহে মন্থর গতি সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাটের অব্যাহত ঘটনায় জনগণ আর ব্যাংকে টাকা রাখতে সাহস পাচ্ছে না। ফলে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে স্থবিরতা বিরাজ করছে। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে প্রতীয়মান হচ্ছে সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেশকে দেউলিয়াত্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা এই মুহূর্তে লুটপাট বন্ধ এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে এনে জনগণের কোষাগারে জমা করার এবং লুটপাট, পাচারকারী ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি এবং লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছে।”