বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন ঘটেছে। দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। আজ আমরা বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছি। দেশের আপামর জনতা শোষণমুক্ত শান্তি-স্বস্তির এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে থাকবে না কোনো বৈষম্য, জুলুম-নির্যাতন ও ভয়ভীতি। ছাত্র-জনতার এই গণবিপ্লব তথা গণঅভ্যুত্থানে আমাদের সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের লাখো জনতাকে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। বহু ছাত্র-জনতা আহত হয়েছে। অনেকেই চিরদিনের জন্য চোখ হারিয়েছেন ও পঙ্গু হয়েছেন। হাজারো শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে ও লাখো জনতার ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে আমরা ২০২৪ সালে আবার নতুন করে স্বাধীনতা লাভ করেছি। এই অর্জনের কৃতিত্ব একমাত্র শিক্ষার্থীদের, আমাদের সন্তানদের। দীর্ঘ ১৬ বছরে আমরা যা পারিনি, আমাদের সন্তানরা আজ তা করে দেখিয়েছে। গণবিপ্লবে শাহাদাত বরণকারী ছাত্র-জনতাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। যাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে জগদ্দল পাথরের মতো জাতির ঘাড়ে চেপে বসা ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। আমরা সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের কোনো দিন ভুলব না।”
২৫ আগস্ট রবিবার যশোর শহর সাংগঠনিক জেলা জামায়াত আয়োজিত শহর আমীর অধ্যাপক গোলাম রসূল-এর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এইসব কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক জনাব মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, যশোর পূর্ব জেলা ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ, যশোর পশ্চিম জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান. নড়াইল জেলা আমীর এ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বাচ্চু, শহীদ ইমতিয়াজের বাবা নওশের আলী ও শহীদ তৌহিদুর রহমানের স্ত্রী নাসরিন সুলতানা প্রমুখ।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, “হাজারো প্রাণের বিনিময়ে আমরা এই দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই সুযোগকে দেশ গড়ার কাজে লাগাতে হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ছাত্র-জনতার এই ঐক্য মজবুত হবে এবং দেশবিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলা করতে পারব, ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধশালী একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য আমরা আপনাদের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের পর দেশকে অর্থবহ স্থিতিশীল ও উন্নয়নের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বৈষম্যহীন, সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির সমাজ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের কর্তাব্যক্তিরা, দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দেশে যে নৈরাজ্যকর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের প্রতিটি সেক্টরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জালিম হাসিনা সরকারের অপকর্মের মদদদাতা কর্মকর্তাদের অপসারণ করে তদস্থলে সৎ, দক্ষ, যোগ্য ও পেশাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। ফ্যাসিবাদীদের লুটপাট করা পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বন্যা প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, কথিত বন্ধু রাষ্ট্র ভারত ফারাক্কাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের বিশাল এলাকা মরুভূমিতে পরিণত করেছে। গ্রীষ্মকালে শুকনো মওসুমে প্রতি বছর পানির অভাবে বাংলাদেশের হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়। ভারত তখন পানি আটকিয়ে রেখে আমাদের শুকিয়ে মারে। আবার বর্ষার মওসুমে যখন পানির প্রয়োজন নেই, তখন পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে বন্যায় ভাসায়। ভারত সরকারের এহেন অমানবিক কর্মকাণ্ডে আমরা হতবাক। স্বভাবতই বাংলাদেশের আপামর জনতার মনে প্রশ্ন জাগে, ভারত আমাদের কেমন বন্ধু রাষ্ট্র! আমরা তাদের এহেন অমানবিক কর্মকাণ্ডের ধিক্কার জানাই।”
বিশেষ অতিথি জনাব মোবারক হোসাইন বলেন, “আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনে আবু সাঈদ-মুগ্ধ-রা বুক চেতিয়ে তাদের অমূল্য জীবন উৎসর্গ করেছে। তাদেরকে আমাদের যথাযথভাবে সম্মান দিতে হবে ও স্মরণ করতে হবে। আহতদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। পঙ্গুত্ববরণকারীদের রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পুনর্বাসন করতে হবে। শহীদদের পরিবারগুলো আজ অসহায়। তাদের পাশে দাঁড়ানো দেশের ১৭ কোটি মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ববোধ থেকেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষ থেকে আজ আমরা যশোরে এসেছি। আমরা প্রতিটি শহীদ পরিবারের নিকট যাচ্ছি, তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি ও সান্ত্বনা দিচ্ছি এবং মহান রবের অশেষ মেহেরবানীতে তাদের প্রতি আমাদের সহযোগিতার হাত এখনো অব্যাহত রয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।”