২৬ মার্চ ২০১১, শনিবার

স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও দেশ বাহির থেকে নিয়ন্ত্রণ হয়

দিল্লীর গোলামী করতে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেনি -মকবুল আহমদ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মকবুল আহমদ বলেছেন, পিন্ডির গোলামী ছেড়ে দিল্লীর দাসত্ব করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেননি। নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের মুক্তিযোদ্ধা বানানোর জন্যই প্রতিবছর নতুন তালিকা করা হচ্ছে। কেউ আওয়ামী লীগ না করলেই রাজাকার হয়ে যায়। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা অব্যাহত থাকলে মিশরের মত গণআন্দোলনের মুখে সরকারকে বিদায় নিতে হবে।

গতকাল শুক্রবার সকালে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর জামায়াত আয়োজিত অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহানগর জামায়াতের আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। এ সময় বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোসলেম উদ্দিন, নগর জামায়াতে সহকারী সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম বুলবুল, মাওলানা আব্দুল হালিম প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরীর কর্মপরিষদের সদস্য ড. রিদওয়ান উল্লাহ শাহিদী, এডভোকেট মশিউল আলম, এসএম রইছ উদ্দিন, ফরিদ হোসাইন, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

মকবুল আহমদ বলেন, বহু রক্তের বিনিময়ে এদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। ভৌগলিক বিবেচনায় দেশ স্বাধীন হলেও ব্যক্তি স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। পিন্ডির গোলামী ছেড়ে দিল্লীর গোলামী করতে দেশ স্বাধীন হয়নি। এ গোলামীর অবসান দরকার। স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্যই জামায়াত কাজ করছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান সরকার কোন গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছেনা। রাপথে তো নয়ই এমনকি অফিসে কোন প্রোগ্রাম করলে পুলিশ বাধা দিয়ে বলেন ওপরের নির্দেশ। এই উপর আসলে কোথায়। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা অব্যাহত থাকলে মিশরের মত গণবিস্ফোরণ হতে পারে। তখন সরকার নিজেকে টিকে রাখতে পারবেনা। এটি সরকারকে বুঝতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ফরিদপুরের এক জনসভায় উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, যখন নিজ দলের রাজাকারদের নাম আসে তখন বলছেন, দেশ আর কোন যুদ্ধাপরাধী নেই। তারা নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের মুক্তিযোদ্ধা বানানোর জন্য প্রতি বছর তালিকা করছে। কেউ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বললেই, রাজাকার হয়। তিনি অভিযোগ করেন, আড়িয়াল বিল রূপগঞ্জসহ সকল আন্দোলনে সরকার যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকে দায়ী করছেন। আমাদের সীমান্তে এবং দেশের ভিতরে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা আজ হুমকির সম্মুখীন।

তিনি আরো বলেন, দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করলেও মুক্তিযোদ্ধারা আজ অসচ্ছল। তাদের মধ্যে সচ্ছতা আসতে দরকার ঐক্যের। এই ঐক্য এখন সময়ের দাবি।

এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ক্ষমতার ২৬ মাস অতিবাহিত হলেও আওয়ামী নেতাদের ছাড়া কারো সচ্ছতা আসেনি। দেশ পেয়েছি, দেশের স্বাধীনতা পেয়েছি কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাদের স্বচ্ছতা আসেনি। আওয়ামী লীগ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে শক্তি বলে দাবি করলেও স্বাধীনতার ৩৯ বছরে তাদের কল্যান কিছু করেনি। তারা স্বাধীনতা স্বপক্ষের শক্তি দাবি করলেও স্বাধীনতার পরে ক্ষমতায় এসে দেশের জন্য কোন উন্নয়ন করেনি। তখন ১০ লাখ মানুষ না খেয়ে ছিলো। অর্থনৈতিক মুক্তি, জুলুম, নির্যাতন ছাড়া আর কিছুই করেনি। তারা নিজেদের স্বার্থে সংবিধান পরিবর্তন করেছে।

তিনি আরো বলেন, ৭৪ সালে তারা বাকশাল কায়েম করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করেছে। তারা ক্ষমতায় আসলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস হয়। এ চেতনাকে কাজে লাগিয়ে তারা ব্যবসা করছে। মুক্তিযুদ্ধ কোন ধর্মের বিরুদ্ধে ছিলনা। এখন তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা আনছে। ধর্মের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ অবস্থান নিয়েছে। বিরোধী দলের উপর জুলুম করে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা যায় না। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে দরকার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।

এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অর্জন নস্যাতের জন্য নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করে মূল অর্জনকেই বিতর্কিত করতে চায়। এসব ষড়যন্ত্র দেশপ্রেম, রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে মারাত্মক আঘাত। স্বাধীনতার ৪০ বছর অতিক্রান্ত হলেও স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে আজও বিতর্ক শেষ হয়নি। সরকার পরিকল্পিতভাবেই এসব বিতর্কের সৃষ্টি করছে। মূলত আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কল্যাণ চায় না। তাই অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের আবারো মাঠে নামতে হবে।

ইঞ্জিনিয়ার মোসলেম উদ্দিন বলেন, শোষন-নিপিড়ন মুক্ত সমাজ ও অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্যই যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা হয়েছিল। কিন্তু দেশের মানুষের সে আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন আজও ঘটেনি। ভারত আমাদের দেশের স্বাধীনতা কখনোই মেনে নেয়নি। তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের দলিল-পত্র পুড়িয়ে দিয়ে সে কথারই সত্যতা প্রমাণ করেছে। শুধু তাই নয়, তারা আমাদের বিজয় দিবসকে ইস্টার্ন কমান্ড ডে হিসেবে পালন করে আমাদের দেশের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। জাতিকে বিভাজিত করার জন্য যে যুদ্ধাপরাধকে ইস্যু বানানো হয়েছে তাও ভারত থেকে আমদানী করা। তাই আমাদেরকে সব সময়ই ভারত এবং তাদের মিত্র শক্তি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।

নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমারা শুধুই একটি ভূখন্ডের জন্য যুদ্ধ করিনি। মূলত আমরা প্রাণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলাম একটি শোষণমুক্ত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য। কিন্তু স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও আমাদের সে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি।

রফিকুল ইসলাম খান বলেন, স্বাধীনতার ৪০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা হয়নি। তালিকা হয়নি কারা যুদ্ধে শহীদ হয়েছে। তাদের পরিবারের কোন খোঁজ খবর নেই। চিকিৎসার অভাবে তারা মারা যাচ্ছে। খাদ্যের অভাবে তারা আজ ভিক্ষা করছে। এ অবস্থা দেখলে দুঃখ হয়। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এটি কারো নিজস্ব সম্পত্তি নয়। স্বাধীনতার সুফল সকলের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে জামায়াত কাজ করছে। তিনি জামায়াত নেতাদের মুক্তি চেয়ে বলেন, অন্যায়ভাবে বিনাবিচারে তাদের কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের মুক্ত করতে হবে।

কার্টেসীঃ দৈনিক সংগ্রাম