আরও

১১ নভেম্বর ২০১৯, সোমবার

বাবরী মসজিদ সংক্রান্ত ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

বাবরী মসজিদ সংক্রান্ত ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জনাব মকবুল আহমাদ আজ ১১ নভেম্বর, ২০১৯ প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “বাবরী মসজিদ সংক্রান্ত মামলার রায়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এ রায় ভারতের মুসলমানসহ মুসলিম উম্মাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।

ভারতের একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত ধর্মীয় ও মানবাধিকার সনদ এবং ভারতীয় আইন লংঘন করে রাজনৈতিক শক্তির জোরে ৪৬০ বছরের পুরনো বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে দিয়ে মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত প্রকারান্তরে ঐ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অন্যায় কাজকেই বৈধতা দিল। এতে মুসলিম উম্মাহ মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন। বাবরী মসজিদের স্থানে রামমন্দির নির্মাণের জন্য ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও মসজিদের জন্য পাঁচ একর জমি দানের যে কথা রায়ে বলা হয়েছে তা মুসলমানদের প্রতি চরম উপহাসের শামিল। ভারতের মুসলিম সমাজকে তাদের ধর্মীয় ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ‘বাবরী মসজিদের স্থানে পূর্বে মন্দির ছিল’ মর্মে যে দাবি করছে তা সম্পূর্ণ অসত্য ও বিভ্রান্তিকর। ঐ স্থানে খনন কাজ করেও মন্দিরের কোন চিহ্ন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ভারতীয় প্রতœতত্ত্ববিদরাও ঐ স্থানে মন্দিরের কোন নিদর্শন আবিষ্কার করতে পারেনি। সুপ্রিম কোর্ট নিজেও মেনে নিয়েছে যে, পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের রিপোর্টে কোনোভাবেই প্রমাণ হচ্ছে না যে, একটা মন্দিরকে ভেঙ্গে ওখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। এ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, বাবরী মসজিদের স্থানে মন্দির নির্মাণের দাবি সম্পূর্ণ অন্যায় ও অযৌক্তিক এবং ন্যায়নীতির পরিপন্থী।

ভারতের একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং কোলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিসহ একাধিক বিচারপতি ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তাদের বক্তব্যে বলেছেন যে, ‘ইতিহাস পুননির্মাণ করা আদালতের কাজ নয়। আদালত সিদ্ধান্তে পৌঁছায় অকাট্য প্রমাণ এবং প্রামাণ্য নথিপত্রের ভিত্তিতে। বাবরী মসজিদ যেখানে ছিল, সেই জমিতে মন্দির তৈরির নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট কোনো অকাট্য প্রমাণ ও প্রামাণ্য নথির ভিত্তিতে দেয়নি। এই রায় আইন ও সংবিধানের ভিত্তিতে দেয়া হয়নি।’

ভারতীয় বিচারপতিদের বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে যে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে এ রায় প্রদান করেছে। এ রায় শুধু ভারত নয়, সারা বিশে^র বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

আমরা আশা করি ভারত সরকার জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত ধর্মীয় ও মানবাধিকার সনদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে বাবরী মসজিদের স্থানে সরকারি দায়িত্বে মসজিদ নির্মাণ করার ব্যবস্থা করে মুসলমানদের ধর্মীয় ন্যায্য অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করবেন।”