১৮ নভেম্বর ২০২২, শুক্রবার

২০২৩-২০২৫ কার্যকালের জন্য দ্বিতীয় মেয়াদে আমীরে জামায়াত হিসেবে শপথ গ্রহণ করছেন ডা. শফিকুর রহমান

গোটা জাতি আজ দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধ

  • আমীরে জামায়াতের শপথ গ্রহণ
  • জামায়াতে ইসলামী দ্বীন প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে
  • জামায়াতের প্রতিটি কর্মী দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত
  • দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে
  • দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি আদায়ের জন্য তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে

২০২৩-২০২৫ কার্যকালের জন্য ৫ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত আমীরে জামায়াত নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে পুনরায় আমীরে জামায়াত নির্বাচিত হন ডা. শফিকুর রহমান। ১৮ নভেম্বর শুক্রবার রাজধানী ঢাকার একটি মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি জনাব মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় মহাগ্রন্থ আল কুরআন থেকে অর্থসহ তিলাওয়াতের মাধ্যমে শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। নব-নির্বাচিত আমীরে জামায়াতকে শপথ বাক্য পাঠ করান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাওলানা এটিএম মা’ছুম। শপথ গ্রহণকালে ডা. শফিকুর রহমান আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কান্না বিজড়িত কণ্ঠে তিনি শপথ বাক্য পাঠ করেন। এ সময় এক আবেগ ঘন পরিবেশ তৈরি হয়। শপথের পর আমীরে জামায়াতের অনুরোধে দোআ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ২০২৩-২০২৫ কার্যকালের জন্য কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার নব-নির্বাচিত সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। অতপর নব-নির্বাচিত আমীর ডা. শফিকুর রহমান দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিকে সামনে রেখে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আমি আজ গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে তাদের স্মরণ করছি, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে স্থান লাভ করেছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, মানবাধিকার এবং ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য যারা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, জুলুম-নির্যাতন বরণ করেছেন এবং এই আন্দোলন করতে গিয়ে যারা শাহাদাত বরণ করেছেন আমি তাদেরকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে স্মরণ করছি। আমি আরো স্মরণ করি স্বাধীনতার স্থপিত শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীকে।

ডা. শফিকুর রহমান আবেগ তাড়িত কণ্ঠে বলেন, “আামি আরো স্মরণ করছি ভাষা সৈনিক সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম, সাবেক আমীর ও মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক নায়েবে আমীর মাওলানা একেএম ইউসুফ ও মাওলানা আবদুস সুবহান, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও মন্ত্রী জনাব আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান ও শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা এবং শহীদ মীর কাশেম আলীকে। সরকারের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে মজলুম অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী সাবেক নায়েবে আমীর একেএম নাযির আহমাদকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের সকলের শাহাদাত কবুল করুন, আমীন।

আমীরে জামায়াত বলেন, আমি অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করি বিশ্ব বরেণ্য মুফাসসিরে কুরআন মিথ্যা মামলায় আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক এমপি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে কারা প্রকোষ্ঠে আটক এটিএম আজহারুল ইসলাম ও সাতক্ষীরার গণমানুষের প্রিয় নেতা সাবেক এমপি আবদুল খালেক মণ্ডলকে।

নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য জনাব শাহজাহান চৌধুরীসহ আলেম-উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যারা কারাগারে আটক আছেন, তাদের সকলকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

আমীরে জামায়াত আরো বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন। মানবতার মুক্তি ও কল্যাণের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে দুনিয়ায় লক্ষাধিক নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। ইসলামের সুমহান আদর্শ ব্যতীত মহানবতার মুক্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত হতে পারে না। জামায়াতে ইসলামী দ্বীন প্রতিষ্ঠার সেই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যারা দ্বীন প্রতিষ্ঠা করেন মহান রাব্বুল আলামীন তাদের নিকট থেকে ঈমানের পরীক্ষা নেন। আমাদেরকে ঈমানের যে কোনো পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীর আমীর দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ আজ এক কঠিন পরিস্থিতিতে নিপতিত। দেশে আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও মানবাধিকার বলতে কিছু নেই, মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। দেশে আজ সংবিধান স্বীকৃত মতপ্রকাশের অধিকার এবং সভা-সমাবেশের কোনো সুযোগ নেই। মানুষের ভোটাধিকার বলতে কিছু নেই। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

এই সরকারের আমলে দফায় দফায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়ে তা জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছে। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, কৃষি উপকরণ এবং জ্বালানি ও ভোজ্য তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বহুবার। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি, ব্যাংক লুটপাট, শেয়ারবাজার, ডেস্টিটিনি ও হলমার্ক কেলেঙ্কারি, রিজার্ভ ফান্ডের টাকা চুরি, জুয়া, ক্যাসিনোসহ নানা অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি দেশকে আজ দেউলিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্যখাতে সীমাহীন অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে মানুষকে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করেছে। এই সরকার দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দিয়ে দেশের যুব সমাজকে অনৈতিকতার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই শিক্ষাব্যবস্থার কুফল গোটা জাতি ভোগ করছে। মাদক ও অপসংস্কৃতির সয়লাবে আমাদের যুব সমাজ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত। সরকার ইসলামে হারাম ঘোষিত মদের বৈধতা দিয়ে যুব সমাজের চরিত্র বিনষ্ট করার ব্যবস্থা করেছে।

সরকারের হাত থেকে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, আলেম-উলামা, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী কেউ নিরাপদ নয়। গোটা দেশ আজ এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিপতিত। এর হাত থেকে উদ্ধারের একমাত্র উপায় জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা। সেই জন্যই প্রয়োজন দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। গোটা জাতি আজ দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধ। আমি দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অতীতে জনগণের ন্যায্য ও ন্যায় সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিটি আন্দোলনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। অতীতে আমাদের প্রতিটি আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ। ভবিষ্যতেও আমরা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।

জামায়াতে ইসলামী দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছে। আমি আমার প্রিয় দেশবাসীর নিকট দেশের বৃহৎ ইসলামী সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জন্য দোআ ও সহযোগিতা কামনা করছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের নিকট স্বৈরশাসকের পতন ঘটবে, মানুষের নায্য ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং মানুষ তার সকল অধিকার ফিরে পাবে ইনশাআল্লাহ।

বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালনের জন্য আমি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।”