২৩ জুন ২০১৭, শুক্রবার, ১১:১২

চালের শুল্ক কমলেও প্রভাব নেই বাজারে

দেশে চালের সংকটকালে সরকার বিনা জামানতে চাল আমদানি ও শুল্ক কমালেও এর প্রভাব নেই রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বাজারে। আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। চাল আমদানিতে ১৮ শতাংশ শুল্ক কমানোর সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন চালের আড়তদাররা। বর্তমানে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ হওয়ায় বস্তাপ্রতি চালের দাম কমছে ন্যূনতম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। কেজিপ্রতি কমছে ৬ থেকে ৮ টাকা। এদিকে শুল্ক কমানোর সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই দেশে বিদেশি চাল আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে চালের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। ওদিকে গত রোববার থেকে ট্রাকে নিত্যপণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কৃষকের ধানের জমিতে পোকার আক্রমণ এবং হাওরে আগাম বন্যার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ধান উৎপাদন হয়েছে। এ সুযোগে একশ্রেণির অসাধু মিল মালিকের কারসাজিতে কয়েক দফা চালের দাম বেড়েছে। দফায় দফায় চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ঢাকার বাজারে মোটা চালের পাইকারি মূল্য প্রতি কেজি ৪৩ থেকে ৪৫.৫০ টাকা। আর মোটা চালের খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা।
রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন বাজারে মোটা স্বর্ণা চাল কেজিপ্রতি ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা, পারিজা ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, মিনিকেট ৫৬ থেকে ৬০, মিনিকেট (সাধারণ) ৫২ থেকে ৫৪, বিআর আটাশ ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, নাজিরশাইল ৫৪, ভালোমানের নাজিরশাইল ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, পায়জাম ৪৮ থেকে ৫০, বাসমতি ৬০ টাকা, কাটারিভোগ ৭৬ থেকে ৭৮, হাস্কি নাজির ৪৫ এবং পোলাও চাল খোলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতাদের অভিযোগ মিল মালিকরা চালের দর একক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে চালের আমদানি শুল্ক কমানোর ঘোষণার পর থেকে দাম স্থির আছে বলে জানালেন তারা। সহজ শর্তে কম শুল্কে আমদানি চালের সুফল আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে আড়তদাররা মনে করছেন।
টিসিবি’র তথ্য বলছে, গত এক বছরে মোটা চালের ক্ষেত্রে দাম বাড়ার হার প্রায় ২৫ শতাংশ। এছাড়া ৯.৭৬ শতাংশ দাম বেড়েছে মাঝারি মানের এবং উন্নতমানের চালের দাম বৃদ্ধির হার প্রায় ৬ শতাংশ। সাধারণ মানুষ খায় এ রকম চালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এক বছরে।
বাংলাদেশ চাল আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, আমাদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। তবে মিল মালিকরা চাইলে কিছু কম দামে আমাদের কাছে চাল দিতে পারেন। তারা কম দামে চাল দিলে বাজারে চালের দাম কমবে বলে আমার মনে হয়।
ক্যাব-এর সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, চালের যে সরবরাহ সংকট আছে সেটা মজুত হচ্ছে না। আজকে ছয় সাত লাখ টন চাল মজুত থাকলে এ সমস্যাটা হতো না। ঈদের পরে কম শুল্কে আমদানি করা চাল বাজারে এলে দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে আমদানি শুল্ক কমানোর পরও আদেশের কপি স্থলবন্দরে না পৌঁছানোয় চাল খালাস করতে পারছেন না আমদানিকারকরা। হিলি স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আটকে আছে চালবাহী শতাধিক ট্রাক। এনবিআর থেকে আদেশ জারির পরও কাস্টমসে তা পৌঁছেনি। আদেশ নিয়ে জটিলতায় আটকে আছে আমদানিকৃত চাল।
টিসিবি’র ট্রাকে পণ্য বিক্রি বন্ধ: পর্যাপ্ত চাহিদা থাকলেও খোলা ট্রাকে নিত্যপণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে টিসিবি। টিসিবি মতে, রমজানের শেষের দিকে এসে পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। তাই গত রোববার থেকে ট্রাকে পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রমজান উপলক্ষে টিসিবি সারা দেশে প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা, মসুর ডাল ৮০ টাকা ও সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৮৫ টাকায় বিক্রি শুরু করে। হঠাৎ খোলা ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ হওয়ায় হতাশ হয়েছেন ভোক্তারা। টিসিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, চাহিদা না থাকার কারণে সারা দেশে খোলা ট্রাকে পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে টিসিবির বিভিন্ন বিক্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে। ভোক্তারা সেখান থেকে পণ্য কিনতে পারবেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, সরকারি গুদামে চালের মজুত গত ১০ বছরের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন। সরকারি গুদামে চাল ছিল মাত্র ১ লাখ ৯১ হাজার টন। অথচ ২০১১ সালের এই দিনে চালের মজুত ছিল ৯ লাখ ৯৮ হাজার টন। ২০১২ সালে ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার টন। ২০১৩ সালে ছিল ৬ লাখ ৫৮ হাজার টন। ২০১৪ সালে ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার টন। ২০১৫ সালে ছিল ৬ লাখ ৯৬ হাজার টন। এবারই প্রথম চালের মজুত এতটা নিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
আমদানিকারকরা বলছেন, শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত আরো আগে নেয়া হলে চালের দাম এত বেশি বাড়তো না। চাল আমদানিকারক মাজেদ বলেন, চালের দাম বাড়ার যে সম্ভাবনা ছিল তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=71287&cat=2/