২২ জুন ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:৫৫

মিরপুর বেড়িবাঁধে হাইওয়ে পুলিশের এএসপিকে শ্বাসরোধে হত্যা

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মিজানুর রহমান তালুকদারের (৫০) লাশ উদ্ধার হয়েছে। গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে মিরপুর-আশুলিয়া রোডে রূপনগরের বিরুলিয়ায় বেড়িবাঁধের বোটকাব এলাকার রাস্তার পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তার গলায় কাপড় বাঁধা ছিল। পুলিশের ধারণা, তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
কে বা কারা এএসপি মিজানুর রহমানকে হত্যা করেছে এ ব্যাপারে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কিছু জানাতে পারেননি। পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, মিজানুর রহমান গতকাল ভোর ৫টার দিকে উত্তরার বাসা থেকে বের হন। এর পরই তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। পরিবার জানায়, তিনি কর্মস্থল সাভারের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন।
এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদার এক বছর ধরে হাইওয়ে পুলিশের সাভার সার্কেলে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এ দিকে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন শেষে পুলিশ গতকাল সন্ধ্যার পর এএসপি মিজানুর রহমানের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায়। আজ লাশের পোস্টমর্টেম সম্পন্ন হবে।
হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম জানান, এএসপি মিজানুর রহমান এক বছর ধরে সাভারে কর্মরত ছিলেন। তার হত্যার বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
রূপনগর থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম জানান, এএসপি মিজানুর রহমানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা অন্য কোথাও হত্যার পর বেড়িবাঁধ এলাকায় তার লাশ ফেলে গেছে। ওসি আরো জানান, নিহতের গলায় কাপড় পেঁচানো ছিল। তার শরীরে একটি চেক শার্ট ছিল। পরনে প্যান্টটি ছিল পুলিশের ইউনিফর্ম। সাথে ব্যাগে তার ব্যক্তিগত গাড়ির চাবিও পাওয়া গেছে। পুলিশ কর্মকর্তা এখানে কিভাবে এলেন বা কারা তাকে এখানে নিয়ে এসেছে তা জানার চেষ্টা চলছে।
পুলিশ জানায়, গতকাল সকালে বেড়িবাঁধের বোটকাব এলাকায় রাস্তার পাশে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ তার লাশের সাথে থাকা দু’টি মোবাইল ফোনও উদ্ধার করে। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তার পরিচয় উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি, র্যাব, পিবিআইসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এএসপি মিজানুর রহমান ভোর ৫টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন। তার নামে অফিসিয়াল কোনো গাড়ি ইস্যু করা ছিল না। এ কারণে তিনি ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার নিয়ে অফিসে যেতেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাইভেট কারটি তার বাড়ির গ্যারেজেই রয়েছে। তার সাথে থাকা ব্যাগের ভেতরে পুলিশের ইউনিফর্মের শার্ট পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি অফিসে গিয়ে ইউনিফর্মের শার্ট পরেন। কিন্তু গাড়ি ছাড়া তিনি কেন বের হলেন তার কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, মিজানুর রহমানের লাশ পাওয়ার পর তার পরিবারের সদস্যদের জানানো হলেও তার স্ত্রী বা সন্তানের কেউ ঘটনাস্থলে আসেননি। এ বিষয়টি সন্দেহজনক। পরিবারের সদস্যদের সাথে তার কোনো ঝামেলা ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, নিহত মিজানুর রহমান তালুকদারের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল এলাকার আলিভুখা গ্রামে। ঢাকার উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর সড়কের ৩৮ নম্বর বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকতেন তিনি। ১৯৮৯ সালে এসআই হিসেবে পুলিশে যোগ দেন মিজানুর রহমান। তিন বছর আগে এএসপি হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। এর আগে তিনি মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দুই সন্তানের জনক তিনি। তার বড় মেয়ে সুমাইয়া উত্তরার একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছে। আর ছোট ছেলে মুশফিক প্রথম শ্রেণীতে পড়ে।
নিহত পুলিশ কর্মকর্তার ভাগ্নে শামীম শেখ জানান, তারা বুঝতে পারছেন না কে বা কারা তার খালুকে হত্যা করেছে। তার খালুর সাথে কারো কোনো শত্রুতা ছিল কি না তা তারা বলতে পারছেন না।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/230474#sthash.UyiunWFr.dpufhttp://www.dailynayadiganta.com/detail/news/230474