৫ মে ২০২৪, রবিবার, ৬:২৩

রাজশাহী অঞ্চলে ফলন বিপর্যয়ে আমের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে যেতে পারে

এবারের মওসুমে বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে ফলন বিপর্যয়ের কারণে আমের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে যেতে পারে। সেই মুকুল আসা থেকে এখনকার গুটি ও কড়ালি পর্যন্ত একের পর এক সংকট চলছে আমের বাগানে। এর ফলে উৎপাদন মার খাওয়ার আশংকায় রয়েছেন আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর এই চারটি জেলায় চলতি মওসুমে ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এবার সাড়ে ১২ লাখ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে এককভাবে শুধু রাজশাহীতেই ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ২৪ হেক্টর বেশি। আর চলতি বছর ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৫ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

একের পর এক সংকট: সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলার আম বাগানগুলোতে চলতি মওসুমের শুরুতে মাঘ-ফাল্গুনে এমনিতেই মুকুল এসেছিল কম। এর পর সেই মুকুলগুলোতে অসময়ের বৃষ্টির কারণে গুটি না ধরে মুকুল ঝরে পড়তে থাকে। অতঃপর শুরু হয় বৃষ্টিহীন টানা তাপপ্রবাহ। এতে গাছ থেকে ঝরে পড়তে থাকে আমের গুটি। এছাড়াও কোনো এলাকায় চলে পোকার উপদ্রব। এমনভাবে একের পর এক বিপর্যয় ঘটে চলেছে আমের গাছগুলোতে। এরপর সামনে আছে ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশংকা। সবমিলিয়ে গাছের যতœ নেয়া সত্ত্বেও ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। এরই মধ্যে অনেক বাগানের অন্তত ৫০ শতাংশের বেশি গুটি ঝরে গেছে। আম রক্ষায় অনুমোদিত মাত্রায় ওষুধ ছিটিয়েও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় ওষুধ ছিটাতে হচ্ছে। বৈরী এই আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন না ঘটলে গাছে পাতা ছাড়া কিছুই থাকবে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে আশাবাদি কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু গুটি আম ঝরে গেলেও বাকিগুলো টিকিয়ে রাখা সম্ভব হলে তেমন সঙ্কট হবে না। তাই অব্যাহত দাবদাহ ও প্রচ- খরায় আমের গুটি ঝরে পড়া রোধে গাছের গোড়ায় রাতে বা খুব ভোরে পানি সেচ দিতে হবে।

গুটি ঝরে গেছে ৬০ ভাগ: আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি মৌসুমে বাগানের প্রায় ৭০ ভাগ গাছে মুকুল এসেছিল। সেই মুকুল গাছে থাকলে অনেক আম হতো। কিন্তু গত ২০ ও ২১ মার্চের বৃষ্টির কারণে মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে।

এখন আবার তীব্র তাপদাহ ও পোকার উপদ্রবে মুকুল ঝরে যাচ্ছে। আমগাছে পানি ও কীটনাশক দিয়েও গুটি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে প্রতি বছরই আমের কিছু গুটি ঝরে যায়। কিন্তু চলতি মওসুমে তীব্র দাবদাহে অনেক বাগানে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ আমের গুটি ঝরে গেছে। এতে ব্যাপক লোকসানের শঙ্কা রয়েছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, গত ১৭ এপ্রিল থেকে রাজশাহীতে তীব্র তাবদাহ শুরু হয়েছে। এরপর ২৩ এপ্রিল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মূলত পয়লা এপ্রিল থেকেই রাজশাহীতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল। কিন্তু মধ্য এপ্রিল থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। টানা তাপপ্রবাহ এবার রাজশাহীতে ১৯ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। ৩০ এপ্রিল বেলা ৩টায় রাজশাহীতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

বিভিন্ন এলাকার আমচাষিরা বলছেন, এবার অধিকাংশ গাছে কোনো আম নেই। গাছের কোনো পরিচর্যা করছেন না চাষিরা। ফলে যেসব গাছে কিছু আম আছে তাতেও পোকার উপদ্রব দেখা যাচ্ছে। বাগানে মাছি পোকা ও লেদা পোকানাশক বিষ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। একজন চাষি জানান, ‘টানা তাপদাহে আম শুকিয়ে কালো রং ধারণ করছে। পোকা ছিদ্র করায় আম শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। ফলে আমের ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা আছে। অনুমোদিত মাত্রায় ওষুধ দিয়েও পোকার আক্রমণ থেকে আম রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠের এলাকাগুলোতেও আমের গুটি ঝরা লক্ষ্য করা গেছে। এই এলাকার চাষিদের দাবি, ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আমের গুটি ঝরেছে। অপর এক চাষি জানান, বৃষ্টি না থাকায় আমের কিছু রোগ দেখা দিচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে আম গাছের এক ধরনের সাদা পোকা।

https://www.dailysangram.info/post/555238