২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ৭:২০

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক

-আলী আহমাদ মাবরুর

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। কাগজে কলমে বা যে কোনো পরিসংখ্যানেই বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম। বাহ্যত মুসলিমরাই এখানে সর্বত্র। রাজধানী ঢাকার অপর নাম মসজিদের শহর। এ দেশে অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসা ও মক্তব আছে। প্রতিবছর এখানকার মানুষ রোজা রাখছে। হজে¦ গমন করছে। কিন্তু এতকিছুর পরও বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে যতটা সংকট তৈরি হয়েছে, এতটা এর আগে কখনোই এতটা দৃশ্যমান হয়নি। আবার বাহ্যত যা দেখা যাচ্ছে এর অন্তরালেও ঘটে যাচ্ছে অনেক কিছুই। আর দেশের বেশিরভাগ মানুষই যেকোনো ইস্যুর উপরভাগ নিয়েই বেশি সম্পৃক্ত থাকে, এ কারণে সংকটটা কোথায় তৈরি হচ্ছে এবং কীভাবে তা ঘনীভূত হচ্ছে তা অনেকক্ষেত্রেই আমাদের উপলব্ধির বাইরেই রয়ে যায়। আর যখন আমরা বিষয়গুলো বুঝতে পারি, ততক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়।

মুসলিমদের সংকট এখানে বহুবিধ। তবে মুসলিমদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি এখানে খুবই স্বল্প পরিসরেই আলোচিত হয়। বিশেষ করে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশ হওয়ার কারণে এখানে মুসলিমদের নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ অনেকেই আমলে নিতে চায় না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ফরিদপুর জেলার মধুখালি উপজেলায় দুই মুসলিম সহোদরকে পিটিয়ে হত্যা করার যে ঘটনা ঘটেছে তা আমাদের মাঝে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও নিরাপত্তাহীনতা অনেকটাই বৃদ্ধি করেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। সেদিন রাতে ফরিদপুরের মধুখালি উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে এ ঘটনা ঘটে। পাঁচটি গ্রাম নিয়ে এই পঞ্চপল্লীটি গঠিত। পুরোটা এলাকাই হিন্দু বসতি অধ্যুষিত। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, একটি কালী মন্দিরে আগুন দেওয়ার গুজব রটে যাওয়ার পর ঘটনার সূত্রপাত হয়। পঞ্চপল্লীরই একটি গ্রাম হলো কৃষ্ণনগর। এখানে একটি স্কুলের টয়লেট নির্মাণে নিয়োজিত শ্রমিকরা আগুন দিয়েছেন এমন ধারনা থেকেই গ্রামবাসী শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় শ্রমিকেরা প্রাণ বাঁচাতে স্কুলের একটি কক্ষে আশ্রয় নিলে স্কুলের গ্রিল ও দরজা ভেঙে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। মুসলিম শ্রমিকদের হাত পা বেঁধে বেদম পিটিয়ে এবং অত্যন্ত নির্মমভাবে ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এতে দুজন শ্রমিক নিহত হন। নিহত নির্মাণ শ্রমিক দুই ভাই হলেন- জেলার মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল খান (১৭) ও তার ভাই আশাদুল খান (১৫)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন। আহতদের উদ্ধার করে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুরের শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তেও পারতো। কিন্তু ততক্ষণে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এবং আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় আইন শৃংখলা বাহিনী ঘটনাস্থলে চলে আসে এবং তারা আহত ও বন্দী শ্রমিকদের উদ্ধার করে। আক্রমণকারী দুর্বৃত্তরা এতটাই বেপরোয়া ছিল যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাথমিকভাবে যে ওসি ও ইউএনও সাহেবরা গিয়েছিলেন, তাদেরকেও প্রায় ৬ ঘন্টা জিম্মি করে রাখা হয়। পরে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার নিজেই ঘটনাস্থলে গমন করেন এবং পুলিশ ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরবর্তীতে, ফরিদপুর জেলা সদর ও রাজবাড়ী জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে সবাইকে উদ্ধার করে এবং আহত ভিকটিমদেরকে মুমুর্ষূ অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নিহত দুজন শ্রমিকের চাচাতো ভাই ইমরান খান এরই মধ্যে তিনি ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেছেন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “তার ভাইয়েরা গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে এমনটা দাবি করা হলেও বিষয়টি তেমন নয়। ২০ এপ্রিল বিবিসি বাংলায় এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি বলেন, “এটি কোনো গণপিটুনির ঘটনা নয়, এটি পরিকল্পিত খুন। একটি রুমে কয়েকজনকে বেঁধে লাঠি, ইট ও রড দিয়ে পেটানো হয়েছে। তারা যে নসিমন গাড়িতে করে কাজে গিয়েছিল সেই নসিমনটিও পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়েছে।”

পঞ্চপল্লী গ্রামের কালীমন্দিরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হলো তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই ঘটনায় উত্তেজিত এলাকাবাসীর মারধরে দুই শ্রমিক নিহত হওয়ার বিষয়টি নিছক গুজব নাকি পরিকল্পিত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অগ্নিকা-ের সঙ্গে নির্মাণ শ্রমিকদের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। এ কারণে উত্তেজনার মধ্যে নিছক সন্দেহের বশে তাদের ওপর হামলা হয়েছে কি না তা দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সুপার মোরশেদ আলম ঘটনা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে জানান। তিনি আরো বলেন, “সন্ধ্যার পর মন্দিরে প্রদীপ জ্বালানোর ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তখন পাশ শুধু সাতজন নির্মাণ শ্রমিক সেখানে ছিলেন। কিন্তু তাদের আগুন দিতে কেউ দেখেনি বা আগুন দেওয়ার হীন উদ্দেশ্য তাদের থাকতে পারে এমন-সন্দেহ করার কোনো যৌক্তিক কারণও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনার জের ধরে মধুখালি উপজেলা বিশেষ করে ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়ক আবারও উত্তপ্ত হয় ২৩ এপ্রিলে। বিক্ষুব্ধ জনতা এদিন ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়ক ৫ ঘন্টা সময় অবরুদ্ধ রাখে। প্রশাসন প্রকৃত দোষীদের আড়াল করে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে এমন তথ্য পাওয়ার পর স্থানীয় জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পুলিশ সমাবেশে বাধা দিলে প্রতিবাদী জনতার সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়। খবর পেয়ে মধুখালী থানার পুলিশের সাথে ফরিদপুর থেকে এপিবিএন, র‌্যাব ও বিজিবি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এ ঘটনায় ১৫ জনেরও বেশি আহত হয়। বিক্ষোভে অংশ নেয়ার অভিযোগে মধুখালি ও পাশর্^বর্তী বোয়ালমারি উপজেলা থেকে ৫ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশি হয়রানির ভয়ে এলাকার মুসলিম বাড়িগুলো রীতিমতো পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, একটি জাতীয় দৈনিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে, ফরিদপুরের মুসলিম শ্রমিক হত্যার ঘটনায় ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপনেরও সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। এমনকি নিহত ও আহতদের যে ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে সেখানেও তপন সাহেব এবং স্থানীয় অজিত মেম্বারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ইতোমধ্যে, ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. আসাদুজ্জামান তপন এবং মেম্বার অজিত বিশ্বাসকে ধরিয়ে দিলে উপযুক্ত পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা করেছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন।

২৬ এপ্রিল মধুখালীর পঞ্চপল্লীর ঘটনাপরবর্তী সামগ্রিক বিষয় নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার এ ঘোষণা দেন। এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, ‘চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন একজন হেভিচ্যুয়াল অফেন্ডার অর্থাৎ স্বভাবগত অপরাধী। কোথায় কখন কীভাবে লুকিয়ে থাকতে হয় সেটি তিনি ভালো জানেন। তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোন রেখে গেছেন। এর আগে মাগুরায় তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। সেখানে অভিযান পরিচালনার বিষয়টি জানতে পেরে তিনি পালিয়ে যান। চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক আরো বলেন, “চেয়ারম্যানের দ্বৈত ভূমিকার কারণে তাকে প্রথমদিকে সেভাবে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়নি। তবে যখন ভিডিও ফুটেজে তার সম্পৃক্ততা দেখা যায় তারপর থেকেই তিনি আত্মগোপনে চলে যান।” চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে সবার সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, “চেয়ারম্যান তপন এবং দুই মেম্বারকে গ্রেপ্তারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য এয়ারপোর্ট-বন্দর এবং বর্ডারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।”

মর্মান্তিক বাস্তবতা হলো, আদৌ মন্দিরে বা মূর্তিতে আগুন লাগানো হয়েছিল কিনা তারও কোনো প্রমাণ মেলেনি। অথচ অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করেই শুধুমাত্র মুসলিম পরিচয় বহন করার কারণে দুজন নিরীহ শ্রমিককে গণপিটুনির মাধ্যমে হত্যা করে ফেলা হলো। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা এ ঘটনার কোনো প্রতিবাদ করেননি এবং এ ঘটনার জন্য কোনো দুঃখও প্রকাশ করেননি। অথচ যদি কখনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনো সদস্য সামান্য নির্যাতনের শিকারও হন, তাহলে তাদের সরব হতে বিন্দুমাত্র সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, এরকম কোনো ঘটনা ঘটলেই তার জন্য দেশের ইসলামপন্থি দলগুলোকে অভিযুক্ত করারও এখন নিয়মিত ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। অথচ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যতগুলো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তার জন্য প্রাথমিকভাবে ইসলামপন্থিদের দায়ী করলেও পরবর্তীতে দেখা গেছে, এগুলোর সবই ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অধিকাংশ ঘটনাবলীর সাথেই সরকারি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ফরিদপুরের এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ব্যাপক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। ঈদুল ফিতরের মাত্র কয়েকদিন পর এ ধরনের একটি ঘটনা এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নীরবতায় ধর্মপ্রাণ মানুষ বিস্মিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “যদি ঘটনার ভিকটিম সংখ্যালঘু কেউ হতো, তাহলেও অপরাধীর শাস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু যেহেতু মর্মান্তিক এ ঘটনার ভিকটিম নিরীহ মুসলিম এবং অভিযোগের তীর উঠেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের দিকে, তাই ধরেই নেওয়া যায়- এ ঘটনার কোনো সুরাহা হবে না। প্রাথমিক উত্তেজনা কেটে যাওয়ার পর অভিযুক্ত সবাই বেরিয়ে আসবে এবং তাদের কারোই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না।”

আরেকজন লিখেছেন, “সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে কত ধরনের ডকুমেন্টারি বা তথ্য চিত্র নির্মাণের কাজ হয়; বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু এবার কিছুই হচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, আমরা বাহ্যত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে অবস্থান করলেও কার্যত মুসলিমরাই এখানে সংখ্যালঘু।” অন্য একজন লিখেছেন, “ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও পরবর্তী প্রক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে কলকাতা কিংবা গুজরাটের কোনো ঘটনা। বাংলাদেশে দুইজন মুসলিমকে এভাবে নৃসংশভাবে হত্যা নিঃসন্দেহে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ওপর আঘাত বলা যায়। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে আর কেউ এমন সাম্প্রদায়িক হত্যাকা-ের অপচেষ্টায় লিপ্ত না হয়।”

মন্তব্য যাই উঠে আসুক না কেন, বস্তুত এ ঘটনাটি আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। আমাদেরকে আরো একবার যেন চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম পরিচয়ে পরিচিত এ দেশটিতে বাস্তবিকই মুসলিমরা কতটা অসহায়, কতটা নিরাপত্তাহীন। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত একটি এলাকায় যদি মুসলিম পরিচয়ের কোনো নি¤œ আয়ের মানুষ কাজ করতে যায় তাহলে যে কোনো সময় তাদেরকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের শিকার হয়ে নির্মম পরিণতির শিকার হতে পারে। আর এরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে, প্রশাসনও কতটা অসহায় হয়ে যায় কিংবা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেও তাদেরকে কতটা বেগ পেতে হয়; ফরিদপুরের ঘটনাটি আরো একবার তা প্রমাণ করেছে।

মধুখালীর এ ঘটনাটিকে সাধারণ কোনো ঘটনা মনে করার কোনো কারণ নেই। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের সব অঞ্চলের মুসলিমরাই এখন এক ধরনের নিরাপত্তাঝুঁকিতে পড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় কিংবা সনাতনী উপাসনালয় আছে এমন এলাকার মুসলিমদেরকে চাইলেই যে কোনো সময় সংখ্যালঘু নির্যাতন কিংবা মন্দিরে হামলা বা অগ্নিসংযোগের সাজানো অভিযোগে হেনস্তা করা এমনকি নির্যাতন করে মেরেও ফেলা অসম্ভব কিছু নয়। অনেক গণমাধ্যমই মধুখালীর এই সংবাদগুলো এড়িয়ে গিয়েছে। যে কয়েকটি পত্রিকা এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করেছে, তাদের কারো কারো শিরোনাম ছিল, “ফরিদপুর কি বাংলাদেশের আসাম হতে যাচ্ছে?’ এ অবস্থায় জনসচেতনতা যেমন জরুরি তেমনি সরকার ও প্রশাসনের সতর্কতামূলক পদক্ষেপও নেয়া প্রয়োজন যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের জীবনের নিরাপত্তা কোনো গুজব বা অপপ্রচারের ফাঁদে পড়ে এভাবে আর বিঘ্নিত না হয়।

https://www.dailysangram.info/post/554749