২৬ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার, ২:৩৭

ভুট্টার উৎপাদন বাড়লেও কমছে না আমদানি

দেশে বাড়ছে ভুট্টা আবাদের পরিধি। চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভুট্টার দাম বাড়ছে প্রতি বছর। লাভবান হওয়ায় কৃষক এখন ভুট্টা আবাদের দিকে ঝুঁকেছে। তবে, আবাদ এবং উৎপাদন বাড়লেও বিদেশ থেকে ভুট্টা আমদানি সেভাবে কমছে না। পশুখাদ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে ভুট্টার বহুবিধ ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়লেও আমদানি কমানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, স্থানীয়ভাবে যে ভুট্টা উৎপাদন হয় তার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় পোলট্রি ফিডে, বাকি ১২ শতাংশ পশুর খাদ্যে যায়। ফিড শিল্পের বাইরে মিষ্টান্ন, হোটেল এবং রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন খাতে ভুট্টার বাকি অংশ ব্যবহৃত হয়। শামসুল আরেফিন খালেদের মতে, বাংলাদেশে উৎপাদিত ভুট্টা উন্নত মানের। ভুট্টার সাইলেজ ঘাসের পরিবর্তে পশুর খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সাইলেজ শস্য খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। এ ছাড়া ১০-১৫ শতাংশ ভুট্টা মাছের খাদ্যশিল্পের জন্য ব্যবহৃত হয়। তিনি বলেন, গত পনের বছরে দেশীয় ভুট্টার উৎপাদন পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেলেও চাহিদা আরো দ্রুত বেড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, শীত ও গ্রীষ্ম উভয় মৌসুমে পাঁচ লাখ হেক্টর জমিতে চাষ করা ভুট্টার উৎপাদন গত অর্থবছরে রেকর্ড ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টনে পৌঁছেছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়লেও তা চাহিদার বিপরীতে অপর্যাপ্ত। ব্যবসায়ীরা চাহিদা মেটাতে বছরে প্রচুর পরিমাণে ভুট্টা আমদানি করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) চলতি মৌসুমের জন্য পাঁচ লাখ ৪৩ হাজার হেক্টর থেকে রেকর্ড ৫৮ লাখ ১০০ টন ভুট্টা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ডিএই-এর সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক ড. তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, চলমান রবি (শীত) মৌসুমে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করার, আবাদ হয়েছে তার চেয়ে বেশি; চার লাখ ৪৩ হাজার হেক্টর। তিনি বলেন, এবার আবহাওয়া এতটাই উপযোগী যে, উৎপাদন ৫৮ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। ফসল কাটা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে (প্রায় ৫ শতাংশ সম্পূর্ণ) এবং জুন পর্যন্ত চলবে।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ডিজি) মহাপরিচালক ড. গোলাম ফারুক ফিড শিল্পের ক্রমবর্ধমান চাহিদার মধ্যে ভুট্টার উচ্চ দামের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি ৩৪ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ভুট্টা চাষ লাভজনক। গত পাঁচ বছরে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্য অঞ্চলে আলু, শাকসবজি এবং এমনকি ধানের মতো ফসল থেকে ভুট্টা চাষে মনোনিবেশ করেছেন কৃষকরা।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশে বর্তমানে ৬০-৬৫ লাখ টন ভুট্টার চাহিদা। এটা মেটাতে বেসরকারিভাবে আমদানি করতে হচ্ছে। ডিএই-এর প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টাইন উইংয়ের তথ্যানুসারে, বেসরকারি আমদানিকারকরা গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ সাড়ে ২৪ লাখ টন পর্যন্ত আমদানি করেছেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৩২ টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ৮০৫ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৯ টন এবং গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ লাখ ৬৩ হাজার ৪৩১ টন ভুট্টা আমদানি হয়েছে। চলমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি পর্যন্ত) চার লাখ ১০ হাজার ২৪৭ টন আমদানি হয়েছে। আমদানিকারক ও কোয়ারেন্টাইন সংশ্লিøষ্টরা বলছেন, বছরের বাকি সময়ে তা আরো কয়েক গুণ বাড়বে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি বলেন, ১৯৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশে পোলট্রি শিল্পের প্রসার হওয়ার পর থেকে কৃষক ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকেছে। বিশেষ করে, উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে দারিদ্র্যদূরীকরণে ভুট্টা চাষ একটি গুরুত্বপূণ ভূমিকা রাখছে।

বগুড়ার শেরপুরের কৃষক গোলাম সারোয়ার বলেন, এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করে ৪০-৪২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। যা ধানসহ অন্য কোনো ফসলে এই মুহূর্তে হয় না। তবে, চাষি ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিড কোম্পানিগুলো কখনো কখনো ভুট্টা ক্রয় কমিয়ে দিলে কৃষকদের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/824210