২৫ মার্চ ২০২৪, সোমবার, ১২:১৬

ধার করে চলতে হচ্ছে অনেক ব্যাংককে

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিদিন যাচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা

টাকার সঙ্কটে ভুগছে অনেক ব্যাংক। তারা প্রতিদিনই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে চলছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকের সাথে একীভূত হওয়ার উদ্যোগের পর ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিদিন কিছু ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করে তাদের দৈনন্দিন ব্যয় মেটাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারও এমন কয়েকটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করেছে ২০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, আস্থার ভিত্তিতে গ্রাহক ব্যাংকে তার কষ্টার্জিত অর্থ জমা রাখেন; যা তারা নিজেদের কাছে রাখতে নিরাপদ মনে করেন না। কিন্তু দুর্বল ও সবল ব্যাংক নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনা আসায় কিছু কিছু গ্রাহকের মধ্যে কিছুটা আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে ওইসব ব্যাংকের আমানতের তুলনায় টাকা উত্তোলনের হার বেড়ে গেছে। আর গ্রাহকদের আস্থা ধরে রাখতেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করার হার বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ১৮ মার্চ টাকার সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করেছে ২০ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা, ১৯ মার্চ ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, ২০ মার্চ ১৫ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা এবং ২১ মার্চ ২০ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অধিকমাত্রায় ধারের ওপর নির্ভরশীল হলে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ প্রতিদিনই যদি ব্যাংকগুলোর টাকার চাহিদা বাড়তে থাকে আর সে অনুযায়ী আমানত সংগ্রহ করতে না পারে তাহলে আমানত সংগ্রহের তুলনায় উত্তোলনের পরিমাণ বেড়ে গেলে তহবিল সঙ্কট বেড়ে যাবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে ধার করছে তা একদিন থেকে সর্বোচ্চ ১৪ দিন মেয়াদে ধার নেয়া হচ্ছে। এতে একদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিচ্ছে অপরদিকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। ধার সমন্বয়ের পর যেটুকু হাতে থাকছে তাই দিয়েই তাদের দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ব্যাংকিং খাত আস্থার জায়গা। এখানে নেতিবাচক কোনো সংবাদ বা কোনো ব্যাংক বেশি খারাপ অবস্থানে চলে গেলে গ্রাহকরা আতঙ্কিত হয়ে যান। এটা কারো জন্যই কাম্য নয়। তিনি বলেন, গ্রাহকের এ আস্থার সঙ্কট থেকে আজো বের হতে পারছে না দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এখনো কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেয়ার ব্যর্থতা পুরো সেক্টরকে ভোগাচ্ছে। এ কারণে কোনো ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়লে দ্রুত ওই ব্যাংকের পরিস্থিতি উন্নতি করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অথবা অতিরিক্ত খারাপ হওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রুত ব্যাংকগুলোর ক্ষতগুলো দূর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে দেশের অর্থনীতির জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে।

অপর এক ব্যাংকার জানিয়েছেন, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিছু গ্রাহক ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু ঋণের অর্থ ফেরত দিচ্ছেন না। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কারণ, আমানতকারীদের অর্থ দিয়েই ঋণ দেয়া হচ্ছে। যথাসময়ে ঋণের অর্থ ফেরত না দিলে আমানতকারীদের অর্থও ফেরত দেয়া কষ্টকর হবে। বর্তমানে বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এমনটাই হচ্ছে। এ কারণেই যারা ব্যাংকের টাকা নিচ্ছেন কিন্তু ফেরত দিচ্ছেন না, অর্থনীতির স্বার্থেই সরকারকে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। এটা দেশের জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে বলে তিনি মনে করছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/824009