৩ নভেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ৩:০১

বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানায় বকেয়া ১১ হাজার কোটি টাকা

সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সার কারখানাগুলোর কাছে গত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত পেট্রোবাংলার আওতাধীন রাষ্ট্রীয় ছয়টি গ্যাস বিতরণ কম্পানির পাওনা ১১ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) মিলিয়ে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) বিভিন্ন সার কারখানায় গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানাগুলো গ্যাস বিল পরিশোধ করছে।

কিন্তু তা খুবই ধীরে। চলমান পরিস্থিতিতে বকেয়া বিল পরিশোধ না করা হলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অল্প অল্প করে দিচ্ছে, তবে এই অর্থগুলো দ্রুত পেট্রোবাংলার হাতে আসা দরকার। তাহলে পেট্রোবাংলার আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়ক হবে।

পেট্রোবাংলা বিদ্যুৎ খাতে যে গ্যাস বিলের টাকা পাবে তা মূলত বিপিডিবি ও আইপিপি গুলোর কাছে। কিন্তু আইপিপিগুলোর বিপুল বকেয়া পড়ে রয়েছে বিপিডিবির কাছে। অর্থ বিভাগ টাকা ছাড় না করায় বিপিডিবি আইপিপিগুলোর অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না।

আইপিপিগুলোর হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বকেয়া জমেছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।

বিপুল পরিমাণ এই অর্থ বকেয়ার কারণে অনেক আইপিপির বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে ব্যাংকের ঋণখেলাপিতে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিপপা) সভাপতি ফয়সাল করিম খান বলেন, ‘আমাদের প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা বকেয়া জমেছে বিপিডিবির কাছে। এ কারণে উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না, ব্যাংকগুলোও নতুন করে ঋণ দিচ্ছে না। আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনও ঠিকমতো দিতে পারছে না।

খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। আগে সাধারণত সর্বোচ্চ তিন মাস আটকে থাকত, এখন ছয় মাসেও বিল পাচ্ছি না।’

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর এক ট্রিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি গ্যাস ব্যবহার হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪০ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ খাতে। এ ছাড়া  ১৭ শতাংশ ক্যাপটিভে, ২০ শতাংশ শিল্প-কারখানায়, আবাসিকে ১৩ শতাংশ ও সার কারখানায় ১০ শতাংশ ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা ও জোগানের তারতম্যের কারণে এসব খাতকে গ্যাসসংকটের মধ্যে পড়তে হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ এসব খাতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করে সরবরাহ করা হচ্ছে।

বিপিডিবির পরিকল্পনা পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৪টি। তার মধ্যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৬৫টি। গ্যাসভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াট।

পেট্রোবাংলার শীর্ষ এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) একতরফা গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের কারণে গত দুই থেকে আড়াই বছরে পেট্রোবাংলার কম্পানিগুলোর ৩২ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এই টাকা তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই পেট্রোবাংলার আর্থিক অবস্থা ভালো থাকার কথা না।’

https://www.kalerkantho.com/online/national/2023/11/03/1332736