৩ নভেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ২:৫৬

নিবন্ধন ও লাইসেন্সহীন চলছে বেশির ভাগ হস্ত ও কারুশিল্প

-নিবন্ধন ছাড়াই ৯৪.৭ শতাংশ

 

কর্মকাণ্ডের ধরন অনুযায়ী দেশের হস্ত ও কারুশিল্প প্রতিষ্ঠানের ৯৪.৭ শতাংশের কোনো নিবন্ধন নেই। শুধু ২.৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত। অবশিষ্ট ২.৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের কোনো নিবন্ধন আছে কি না, তা জানা নেই বলে পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপে প্রকাশ করা হয়েছে। আর হস্ত ও কারুশিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় শুধু ৪.১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের যেকোনো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স করা রয়েছে। যেখানে ৯৫.৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালানোর জন্য ট্রেড লাইসেন্স নেই। সামগ্রিকভাবে, হস্ত ও কারুশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোয় মোট কর্মসংস্থান ব্যয় ছিল ৯৯৬.৬ কোটি টাকা। ২৯.৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ব্যবসা সম্প্রসারণ বা পরিচালনায় ঋণ নিয়েছিল বলে ব্যুরো গত বুধবার এই জরিপ প্রতিবেদন-২০২২ প্রকাশ করেছে।

বিবিএস জরিপের তথ্য বলছে, হস্ত ও কারুশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকাসংবলিত তথ্যভাণ্ডার অনুসারে, দেশে মোট এই খাতের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৭৩ হাজার ৫৪২টি। যার মধ্যে ৭১ হাজার ৭৫৯টি (৯৭.৬ শতাংশ) ছিল খানাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এবং এক হাজার ৭৮৩টি (২.৪ শতাংশ) ছিল আলাদা প্রতিষ্ঠান। মোট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩২ হাজার ২২৪টি বাঁশ ও বেত শিল্পপ্রতিষ্ঠান; যা মোট প্রতিষ্ঠানের ৪৩.৮ শতাংশ। মৃৎপাত্র ও টেপা পুতুল শিল্প ১৪ হাজার ৯৫টি (১৯.২ শতাংশ), নকশী কাঁথা শিল্প ছয় হাজার ৫১৭টি (৮.৯ শতাংশ) এবং কুরুশকাটা পণ্য পাঁচ হাজার ৬৯৯টি (৭.৮ শতাংশ)। মোট প্রতিষ্ঠানের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি (৬৮.৬ শতাংশ) জুড়ে রয়েছে বাঁশ ও বেত শিল্প এবং মৃৎপাত্র ও টেপা পুতুল শিল্প প্রতিষ্ঠান। হস্ত ও কারুশিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ৪১ হাজার ৬৯০ জন বা ৫১.২ শতাংশ নারী এবং বাকি ৩১ হাজার ৮৫২ জন বা ৪৮.৮ শতাংশ পুরুষ।

জরিপের তথ্য থেকে জানা গেছে, দেশে এক লাখ ৪৮ হাজার ৬৫৬ জন কর্মী নিয়োজিত রয়েছে হস্ত ও কারুশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোয়। তাদের মধ্যে এক লাখ ৪২ হাজার ৪৪৬ জন বা ১৫.৮ শতাংশ থানাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে। আর ছয় হাজার ২১০ জন বা ৪.২ শতাংশ আলাদা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত। প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বা ৮২ হাজার ৯৩৭ বা ৫৫.৮ শতাংশ মহিলা এবং বাকি ৬৫ হাজার ৬৯৪ বা ৪৪.২ শতাংশ পুরুষ। নিয়োজিত কর্মীদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬৬.৫ শতাংশ জানিয়েছেন যে, হস্ত ও কারুশিল্প তাদের প্রধান পেশা। বাকি ৩৩.৫ শতাংশ তাদের গৌণ পেশা। নিয়োজিতদের অর্ধেকেরও বেশি (৫৫.১ শতাংশ) হিন্দু। তবে ৩৯.৭ শতাংশ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। মোট কর্মে নিয়োজিত জনবলের মাত্র ৪.৫ শতাংশ এথনিক জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্গত। খানাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে গড়ে ১.৯৮ জন কর্মী নিয়োজিত ছিল যেখানে আলাদা প্রতিষ্ঠানে এটি ছিল ৩.৪৮ জন। কর্মে নিয়োজিত জনবলের গড় বয়স ছিল ৩৯.১ বছর। পুরুষদের জন্য এটি ছিল ৪৩.৩ বছর, যেখানে মহিলাদের জন্য এটি ছিল ৩৫.৮ বছর। খানাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত জনবলের গড় বয়স ছিল ৩৯.৩ বছর। যেখানে আলাদা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এটি ছিল ৩৪.৫ বছর।

বিবিএস তথ্য বলছে, হস্ত ও কারুশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোয় গড় কর্মসংস্থান ব্যয় ছিল ১৩৫.৫ হাজার টাকা। খানাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৩২.৩ হাজার টাকা এবং আলাদা প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৬৬.৫ হাজার টাকা; যা খানাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। সামগ্রিকভাবে হস্ত ও কারুশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোয় মোট কর্মসংস্থান ব্যয় ছিল ৯৯৬.৬ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানের কাঁচামালের গড় ব্যয় ছিল ৯৬.২ হাজার টাকা। খানাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ৯০.০ হাজার টাকা এবং আলাদা-প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩৪৬.৭ হাজার টাকা; যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি এবং খানাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ৩.৬ গুণ বেশি। হস্ত ও কারুশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোয় কাঁচামালের মোট ব্যয় ছিল ৭০৭.৩ কোটি টাকা।

জাতীয় পর্যায়ে ২০২২ সালে হস্ত ও কারুশিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্যের মোট বিক্রয় মূল্য বা আয় ছিল দুই হাজার ৪৩০.২ কোটি টাকা। খানাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদ মূল্য ছিল দুই হাজার ২৬১.৫ কোটি টাকা এবং আলাদা প্রতিষ্ঠানের ১৬৮.৮ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিটি হস্ত ও কারুশিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদ মূল্য ছিল ৩৩০.৫ হাজার টাকা। খানাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের গড় উৎপাদ মূল্য ছিল ৩১৫.১ হাজার টাকা এবং আলাদা প্রতিষ্ঠানের ৯৪৬.৬ হাজার টাকা; অর্থাৎ খানাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আলাদা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের গড় উৎপাদ মূল্য তুলনামূলক তিনগুণ বেশি। সার্বিকভাবে, হস্ত ও কারুশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোয় উৎপাদিত পণ্যের মোট উৎপাদ মূল্য প্রতিষ্ঠানের প্রকার ও কর্মকাণ্ডের ধরন দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় বলে বিবিএস জরিপে বেরিয়ে এসেছে।

এই খাতের শিল্পের সমস্যা সম্পর্কে বিবিএস ও সংশ্লিট বলছেন, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যার কারণে হস্ত ও কারুশিল্পগুলো তাদের ভূমিকা কার্যকরভাবে পালন করতে পারছে না। হস্তশিল্পের কর্মকাণ্ডের ধরন অনুসারে, প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা বৃদ্ধির গতি এক রকম নয়। মূলধনের অভাব (৮২.২ শতাংশ) ছিল প্রধান অন্তরায়। এরপরে রয়েছে ক্রেতার অভাব ৪৬.৫ শতাংশ, অর্থনৈতিক মন্দা ৩৭.০ শতাংশ, বিপণন সমস্যা ৩৫.৬ শতাংশ, উপকরণ কাঁচামালের অভাব ২৪.৭ শতাংশ, উচ্চ শ্রম ব্যয়/মজুরি ২৪.৪ শতাংশ, ইউনিট প্রতি লাভ কমে যাওয়া ২০.৫ শতাংশ। এ ছাড়া সময়ের সাথে সাথে উৎপাদন কমে যাওয়া ১৭.২ শতাংশ, পরিবহন সমস্যা ১৬.৮ শতাংশ, বিদ্যুৎ, গ্যাস ইত্যাদির অভাব ১.৪ শতাংশ এবং অন্যান্য সমস্যা ১.৩ শতাংশ।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/788679