২৯ অক্টোবর ২০২৩, রবিবার, ৭:৪৭

ঢাকার বাইরেও তল্লাশি গ্রেফতার

 

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার বাইরেও বাসাবাড়ি ও গাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজশাহীতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ১১ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বগুড়া পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের ১৯ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে কমপক্ষে ৬০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সাভারের আমিন বাজার এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে একটি গাড়ি থেকে ৪৩ জনসহ শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে বিএনপির তিন নেতাকর্মী ও টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থেকে চারজন বিএনপি নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ১১ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। রাজশাহী নগরী, জেলার বাগমারা ও দুর্গাপুর উপজেলা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ ছাড়া বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের আটক করতে বিভিন্ন এলাকায় তাদের বাসা-বাড়িতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন। স্থানীয় বিএনপি নেতা ও আটক ব্যক্তিদের স্বজনরা জানান, শনিবার ঢাকায় বিএনপি ও জামায়াতের মহাসমাবেশে যোগ দিতে বাধা দেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে। যদিও আটকদের বিরুদ্ধে নতুন কোনো অভিযোগ বা গ্রেফতারি পরোয়ানা নেই। সূত্র মতে, রাজশাহী জেলা কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত জামান খান ওরফে রনিকে নগরীর শাহ মখদুম থানা পুলিশ ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর সবুর ওরফে বুলেটকে দুর্গাপুর থানা পুলিশ বুধবার রাতে আটক করেছে। এ ছাড়া বাগমারা থানা পুলিশ বিএনপি ও জামায়াতের ৯ জনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে। তারা হলেন- বিএনপির গোলাম মুর্তজা, জামায়াতের আবদুর রশিদ, নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, আবু বক্কর সিদ্দিক ও হেলাল উদ্দিন। তবে বাকি তিনজনের নাম প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি। আটককৃতরা উপজেলার বাসুপাড়া, মাড়িয়া, গোয়ালকান্দি ও হামিরুকুৎসা এলাকার বাসিন্দা। শাহ মখদুম থানার ওসি ইসমাইল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, মাস কয়েক আগে শাহাদাত জামানের বিরুদ্ধে থানায় একটি বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়। সেই মামলায় তিনি পলাতক ছিলেন। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়া পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের ১৯ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে। এর মধ্যে বিএনপির ১৬ জন ও জামায়াতের তিনজন রয়েছেন। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় শনিবারের মহাসমাবেশে যোগ দিতে শুক্রবার রাতে বগুড়া রলস্টেশনে গেলে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৬ নতাকর্মী আটক করে ডিবি পুলিশ। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে রলস্টেশনের প্লাটফর্ম থকে তাদের আটক করে জলা পুলিশের গায়েন্দা শাখা (ডিবি)। এদের মধ্যে বিএনপির ৯ জন, যুবদলের ৫ জন, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন করে রয়েছেন বলে জানা গছে। আটকের বিষয় নিশ্চিত করেছেন বগুড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম। এ দিকে শাজাহানপুর থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে সুজাবাদ এলাকা থেকে এক জামায়াত কর্মী ও দুই ছাত্রশিবির নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। তারা ২০২২ সালের একটি নাশকতা মামলার আসামি বলে জানিয়েছে পুলিশ। নরসিংদী রেলস্টেশনে সংঘর্ষ, গুলি : গ্রেফতার ৬০ নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচিতে অংশ নিতে নরসিংদী রেলস্টেশন থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ৬০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢাকাগামী তিতাস কমিউটার ও আন্তঃনগর এগারসিন্দুর ট্রেনে তল্লাশি চালিয়ে এবং স্টেশন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। অন্য দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে রেললাইনের পাথর নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আটকদের মধ্যে বিএনপির আব্দুর রহমান খোকন, ওলামা দলের নূরুজ্জামান, কৃষকদলের রুহুল আমিন, জিয়া মঞ্চের কামাল হোসেন, যুবদলের আব্দুর রাজ্জাক রয়েছেন। এ ব্যাপারে নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি জানান, বিএনপির শতাধিক কর্মী ট্রেনে উঠতে না পেরে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে ৩৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৩০ জনকে আটক করে। গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে বিএনপির তিন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার রাতে গফরগাঁও থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযান চালিয়ে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন- বিএনপিকর্মী রমজান আলী, জালাল মিয়া, ছাত্রদলের ফাহাদ আল আসফারী। পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আগের নাশকতার মামলায় তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানান গফরগাঁও থানার ওসি ফারুক আহম্মেদ। সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে সাভারের আমিন বাজার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও বিরুলিয়া ব্রিজসহ বিভিন্ন স্থানে তৃতীয় দিনের মতো তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় আমিনবাজার থেকে শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। শুক্রবার রাতে আশুলিয়া বাজার এলাকার তল্লাশিচৌকিতে একটি বাস থেকে জামায়াতে ইসলামীর ৪৩ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। তবে পুলিশের দাবি, যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে শুধু তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে বায়তুল মোকাররমে আওয়ামী লীগ সমাবেশমুখী কোনো পরিবহন আটক কিংবা তল্লাশি করেনি পুলিশ। এদিকে স্থানীয় ১/২টি গাড়ি ছাড়া ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দূরপাল্লার কোনো পরিবহন মহাসড়কে দেখা যায়নি। সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অন্য কোনো যানবাহনও কম ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। জামায়াত ইসলামী ঢাকা উত্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বগুড়া থেকে ঢাকার সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য আসা ৪৩ নেতাকর্মীকে বাস থেকে আটক করা হতে পারে। সোনাতলা (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে যাওয়ার পথে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ছয় নেতাকর্মীকে বগুড়া রেলস্টেশন থেকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শুক্রবার রাতে রেলগেট প্লাটফর্ম থেকে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন ডা: এম এ হান্নান বাটালু, রাকিবুল হাসান রাকিব, সবুজ মিয়া, আব্দুর রহমান ডিপজল, আব্দুল হামিদ তোতা ও মাসুদ মিয়া। ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য ঢাকা যাওয়ার পথে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের চারজন বিএনপি নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার ভোরে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেল স্টেশন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তবে পুলিশের দাবি- গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আগে নাশকতার মামলা ছিল। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- খন্দকার লুৎফর রহমান গিয়াস, মফিজুর রহমান খান মফিজ, শফি উদ্দিন ও ফরহাদুল ইসলাম জান খাঁ। টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, ঢাকায় মহাসমাবেশে যাওয়ার সময় ঘারিন্দা এলাকা থেকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছয়জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে জামায়াতের দলীয় সূত্র আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। গতকাল শনিবার ভোরে টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম জানান, আটকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে। সেই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের কোর্টে চালান করে দেয়া হচ্ছে। তালা (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরা তালায় সরুলিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি হাফেজ শাহ আলমকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। সোমবার বেলা ১টার দিকে উপজেলার পাটকেলঘাটা খাদ্যগুদাম রোড থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ডিবি পুলিশ জানায়, শাহ আলমের বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/787494