২৮ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার, ৭:৩৩

পথে পথে তল্লাশি বাধা ও হয়রানির অভিযোগ

 

২৮ অক্টোবর রাজধানীতে রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রাজধানীর প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসিয়ে জোর তল্লাশি চালায় পুলিশ। বিভিন্ন পয়েন্টে অস্থায়ী চেক পোস্ট বসিয়ে চলাচলকারীদের দেহ তল্লাশি চালায় পুলিশ-র‌্যাব। র‌্যাবের দাবি, নাশকতা রোধে রাজধানীতে দেড় হাজার র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পল্টন এলাকার রাস্তার দুই পাশে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। সড়কে টহল দিচ্ছে বিশেষ টিম। 

আজ শনিবার সমাবেশের দিন ড্রোন উড়াবে পুলিশ। এ কর্মসূচি ঘিরে রাষ্ট্র ও নাগরিকদের নিরাপত্তার ব্যত্যয় ঘটলে কড়া জবাব দেয়া হবে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, রাজনৈতিক দল তাদের সমাবেশ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিষয় আমরা দেখবো। সেই সঙ্গে কেউ যাতে জনগণের সম্পত্তি বিনষ্ট না করতে পারে, সেটাও দেখবো। রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে ঘিরে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে প্রবেশ পথগুলোতে তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতালের সামনে চেকপোস্ট ও তল্লাশি কার্যক্রম শুরু করা হয়। আমিনবাজারে পরিচালিত পুলিশের চেকপোস্টে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে ঢাকাগামী বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের মোবাইল, সাথে থাকা ব্যাগপত্র তল্লাশি করছে পুলিশ। এছাড়া বাসযাত্রীদের কর্মস্থলের আইডি কার্ড চেক করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে, ঢাকাগামী দূরপাল্লার বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস, গণপরিবহন, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলের প্রতি পুলিশের বিশেষ নজর লক্ষ করা গেছে। আগেরদিন বৃহস্পতিবারও রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে তল্লাশি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়াও সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার প্রবেশমুখ নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড, সাভারের আমিনবাজার, কেরানীগঞ্জ, ডেমরা, কাঁচপুর, টঙ্গীর আব্দুল্লাহপুর, বাবুবাজার ব্রিজসহ বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করছে পুলিশ, র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন শাখা। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরের ভেতরেও বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে বিরোধী দলের নেতারা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তল্লাশির নামে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসতে বাধা দিচ্ছে। গতকাল ঢাকার অন্যতম প্রবেশমুখ নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর, সাইনবোর্ড ও তারাবো এলাকাসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে রাজধানীর প্রধান প্রবেশপথে কয়েকটি চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ ও র‌্যাব। সকাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতালের সামনে চেকপোস্ট ও তল্লাশি কার্যক্রম শুরু করা হয়। 

এদিকে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকায় প্রবেশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখ কেরাণীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ও পোস্তগোলায় গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করছে র‌্যাব ও পুলিশ। হাসনাবাদ এলাকায় গাড়ি তল্লাশির পাশাপাশি চেক করা হচ্ছে মোবাইল। এ ছাড়া বাসযাত্রীদের কর্মস্থলের আইডি কার্ড চেক করা হচ্ছে। সকালে ঢাকার প্রবেশপথ গাবতলী সেতুর মুখে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়েছে দারুসসালাম থানা পুলিশ। উত্তরার আবদুল্লাহপুরেও সকাল থেকে ঢাকার বাইরে থেকে আসা যানবাহন ও সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হচ্ছে। বিএনপি অভিযোগ করেছে, বৃহস্পতিবার রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের দল ও অঙ্গসংগঠনের শতাধিক জনের বেশি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মো. ফারুক হোসেন বলেন, যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে, শুধু তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

যাচাই করা হচ্ছে পরিচয়পত্র:  সাভার ও আশুলিয়া থানার বিভিন্ন এলাকায় রাতে অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের ৯ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাভারে রাজধানীর প্রবেশপথ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে পুলিশ। যানবাহন তল্লাশির পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদে যাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত করে যেতে দেওয়া হচ্ছে গন্তব্যে। প্রয়োজনে যাচাই করা হচ্ছে পরিচয়পত্রও। সকাল থেকে আমিনবাজার, বিরুলিয়া মিরপুর সড়ক, ধামরাইয়ের ইসলামপুর ও আশুলিয়া ব্রিজে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বৃহস্পতিবার রাতে সাভার ও আশুলিয়া থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাশিদ বলেন, শনিবার রাজধানীতে দুটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশ রয়েছে, তাই কেউ যেন ঢাকায় প্রবেশ করে কোন নাশকতা কিংবা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে সেই লক্ষ্যেই আমাদের এই চেকপোস্ট কার্যক্রম চলছে। এটি আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। সাভার থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করেছেন, শনিবারের বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। তিনি বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে রাতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে তাই গ্রেপ্তার আতংকে নেতা-কর্মীরা বাড়িতে ছিলেন না। এর মধ্যেও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়েছেন। ঢাকা জেলার (উত্তর) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লা-হিল কাফি বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ যেন ঢাকায় প্রবেশ করে কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতেই পুলিশের এই চেকপোস্ট কার্যক্রম চলছে। তবে চেকপোস্টে কোনো ধরনের হয়রানি বা সন্দেহভাজন কাউকে আটক-গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। 

র‌্যাব মোতায়েন: গতকাল র‌্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক সিনিয়র এএসপি আ ন ম ইমরান খান জানান, সমাবেশকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা ও যে কোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে রাজধানীতে র‌্যাবের দেড় হাজারের অধিক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, র‌্যাব সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট পরিচালনা, টহল কার্যক্রম, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি পরিচালনা করছেন। র‌্যাব-১ রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, রামপুরা, পূর্বাচল ৩০০ ফিট ও আমতলীতে চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে। র‌্যাব-২ রাজধানীর বসিলা, আগারগাঁও ও শিশুমেলার সামনে চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাজধানীর কমলাপুর, সচিবালয় ও নটরডেম কলেজের সামনে চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে র‌্যাব-৩। এছাড়া র‌্যাব-৪ রাজধানীর কচুক্ষেত, টেকনিক্যাল, মিরপুর কাজীপাড়া, সাভার ও মানিকগঞ্জে চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ডেমরা, পোস্তগোলা ও সায়েদাবাদে চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে র‌্যাব-১০।

সিসি ক্যামেরা: সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনে রাস্তার দুই পাশে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকেই এই ক্যামেরা বসানো হয়। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এই কার্যক্রম শুরু করেছে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বলছেন, পুরো সড়কে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ৬০টি ক্যামেরা বসানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। তবে এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য মেলেনি। এখন পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি না পেলেও নয়াপল্টনে জড়ো হতে শুরু করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বেলা ১১টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা। এদিকে মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে নয়াপল্টনে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় সুরক্ষা পোশাক পরে পুলিশের বেশকিছু সদস্যকেও দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এদিকে পুলিশী গ্রেপ্তার, হয়রানি ও তল্লাশি এড়াতে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা অনুসরণ করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। ঢাকায় মহাসমাবেশের উদ্দেশে যাওয়া নেতাকর্মীদের দলবদ্ধভাবে না যাওয়া, হোটেল-মেসে না থাকা, স্মার্ট ফোন ব্যবহার না করাসহ নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মহাসমাবেশ ঘিরে গত দুদিনে বেশকিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এমনটাই অভিযোগ জানানো হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। তারা আশঙ্কা করছেন, যাত্রাপথে তাদের বাধা ও হয়রানি করা হতে পারে। এ জন্য কৌশলে ঢাকায় ঢুকছে দলটির নেতাকর্মীরা।

খুলনা ব্যুরো : ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে খুলনা মহানগরীতে ২১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বিএনপি’র মিডিয়া সেলের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এ নিয়ে গত দুই রাতে বিএনপির ৬৭ নেতাকর্মী আটক হলেন। বিএনপি’র মিডিয়া সেলের এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, খুলনা সদর থানায় ৬জন, সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় ৩জন, খালিশপুর থানায় ৪জন, দৌলতপুর থানায় ৩জন, লবণচরা থানায় ২জন ও হরিণটানা থানায় ৩জনকে আটক করা হয়েছে। এর আগে ২৫ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর সকাল ১১ টা পর্যন্ত খুলনা মহানগরীর ৭ টি থানায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন-মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালাম জিয়া, খানজাহান আলী থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি মো. ফারুক হোসেন, ১নং ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি মো. হাদিউজ্জামান, আটরা গিলাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও শ্রমিক নেতা সরদার নজরুল ইসলাম; সদর থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের ২৮নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. কবির হোসেন, ২২নং ওয়ার্ডের সদস্য সচিব মো. জহির শেখ, ২৭নং ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইদুল ইসলাম সাঈদ; সোনাডাঙ্গা থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বাবু, ১৭ নং ওয়ার্ড যুবদলের প্রচার সম্পাদক মো. আলমগীর মোল্লা; দৌলতপুর থানা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক আসাদুর রহমান, ৫ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন; লবণচরা থানা ৩১ নং ওয়ার্ড যুবদলের জি এম রফিকুল ইসলাম; খালিশপুর থানার ১৪ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সদস্য শেখ ইসলাম, ১১ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সদস্য শহিদুল আলম বাবুল, খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মো. ফারুক আলীসহ আড়ংঘাটা থানা থেকে আরও ২ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া বটিয়াঘাটা উপজেলার ১নং জলমা ইউনিয়নের বিএনপি’র রাজ্জাক আকন, মো. আজাদ শেখ, মো. মোতাহার শেখ, মো. মুজিবর, ৭নং আমিরপুর ইউনিয়নের মোজাফফর শেখ, ডুমুরিয়া উপজেলার শরাপপুর ইউনিয়নের শাহিন শেখ, রূপসা উপজেলার ৩নং নৈহাটী ইউনিয়নের যুবদলের মো. রাজু শেখ এবং ৪নং টিএসবি ইউনিয়ন যুবদলের মো. আশিকুর রহমান।

এদিকে খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে তার নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। তারা হলেন খানজাহান আলী থানা যুবদল নেতা মোল্লা সোলায়মান হোসেন, আড়ংঘাটা বিএনপি নেতা সাইদুল জাকির ও ১৩ নং ওয়ার্ডের ফারুক ঢালী।

এদিকে উচ্চ আদালত থেকে জামিনের পর মুক্তির সময় বাগেরহাট জেলা কারাগারের ফটক থেকে বিএনপি ও জামায়াতের ২১ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাগেরহাটের জেলা কারাগারের ফটক থেকে আটকের পর দুটি মাইক্রোবাসে করে তাদের নতুন পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি বিএনপির। আটকদের মধ্যে বিএনপির ১২ নেতাকর্মী এবং জামায়াতের ৯ নেতাকর্মী রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আটকদের মধ্যে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সদস্য সরদার ওহিদুল ইসলাম পল্টু, মোংলার সাবেক পৌর কমিশনার আলাউদ্দিনসহ বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। বাগেরহাট জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি শেখ ইউনুস আলী বলেন, উচ্চ আদালত থেকে জামিন এবং অন্য কোনো মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা না থাকায় তাদের বেশ কিছু নেতাকর্মীরা সন্ধ্যায় বাগেরহাট জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান। সেখান থেকে পুলিশ ৯ জনকে ধরে নিয়ে গেছে।

পাবনা সংবাদদাতা : পাবনা পৌরসভা জামায়াতের ৪ নং ওয়ার্ডের সেক্রেটারি জামাল হোসেন( ৫০) সহ ৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পাবনা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে  নিজ নিজ  বাড়ি থেকে  জামায়াত নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেফতারকৃতরা  হলো  পাবনা শহরের দক্ষিণ রাঘবপুরের মৃত মজির উদ্দিন এর ছেলে জামাল হোসেন, আরিফপুরের মৃত রমজান আলীর ছেলে মাওলানা নিয়ামত উল্লাহ, দোহার পাড়ার আফসার আলীর ছেলে আলম,  পাবনা পৌর জামাতের সেক্রেটারি অধ্যাপক জাকির হোসেন জানান,  আটক নেতাদের পরিবার সূত্রে জানা যায় রাত্রি ৩ টার দিকে পুলিশের একটি দল তাদের বাড়ী হতে তাদের আটক করে নিয়ে যায়। আটক ব্যক্তিগণকে পাবনা সদর থানার মামলা জি আর ৫০৪/২৩ মামলায় সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে আদালতে চালান দিয়েছেন। অপরদিকে গত বুধবার দিবাগত রাতে সাঁথিয়া উপজেলার রাউদি গ্রামের আবু বকরের ছেলে মাওলানা হুজ্জত উল্লাহ পাবনা সদর থানার কাশীপুরের আমজাদ হোসেনের ছেলে আবুল কালাম আজাদকে গতরাতে পুলিশের অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করেছে। 

জেলা জামায়াতের বিবৃতি : জামাতের কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ও পাবনায় জামায়াত নেতা-কর্মী গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন পাবনা জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল ও সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল ইকবাল হুসাইন। বিবৃতিতে তারা অনতিবিলম্বে জামায়াত নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবি করে বলেন, মামলা-হামলা তল্লাশি করে কোন অবস্থাতেই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার আর টিকে থাকতে পারবে না। জনতা জেগে উঠেছে, সরকারকে এবার বিদায় নিতেই হবে।

শার্শা (যশোর) সংবাদদাতা: যশোরের শার্শায় বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে বিএনপি’র ছয় নেতা-কর্মীকে আটক করেছে শার্শা থানা পুলিশ। আটক নেতা কর্মীদের নামে শার্শা থানায় পূর্বের নাশকতা মামলায় অভিযোগ রয়েছে। আটক আসামীদের শুক্রবার বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। আটককৃতরা হলো শার্শার উলাশী ইউনিয়ন বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ধলদা গ্রামের মৃত রবিউল হোসেনের ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ জমাত আলী (৬০)  শার্শা ইউনিয়ন বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পান্তাপাড়া গ্রামের মৃত কামাল উদ্দিনের ছেলে আক্কেল আলী(৬০), শার্শা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বাগআঁচড়া গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান(৩৮), ডিহি ইউনিয়ন বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত হকের মোড়লের ছেলে আব্দুল মান্নান, (৫৫), খলিষাখালী গ্রামের নূরুল হকের ছেলে বাদশা আহম্মেদ(৪০) ও সাড়া তলার ছাব্দার আলী (৫০)।  

শার্শা থানা সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে শার্শা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পূর্বের নাশকতা করার অভিযোগ থাকায় শার্শা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছয় জন বিএনপি নেতা কর্মিকে আটক করে। বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে শার্শা থানা পুলিশ কর্তৃক আটকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি ও পুলিশের দায়ের করা ষড়যন্ত্রের মামলা প্রত্যাশার দাবি জানিয়েছেন শার্শা উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান জহির। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শার্শা থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম আকিকুল ইসলাম জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে শার্শা থানায় পূর্বের নাশকতার অভিযোগ থাকায় বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে ছয় জন বিএনপি নেতা কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন  আটককৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ, কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণসহ ৭ দফা দাবিতে মৌলভীবাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির মৌলভীবাজার জেলা। এসময় মিছিল পরবর্তী সমাবেশ থেকে বড়লেখা সরকারি কলেজ সভাপতিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গত বৃহস্পতিবার সকালে মিছিলের পর পুলিশ বড়লেখা সরকারি কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বড়লেখা উপজেলার গ্রামতলা গ্রামের আব্দুন নুরের ছেলে। এ বিষয়ে বড়লেখা থানার ওসি মোঃ ইয়ারদৌস হাসান বলেন, বড়লেখায় ছাত্রশিবির মিছিল করে। মিছিলের পর বড়লেখা সরকারি কলেজের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেনকে আটক করা হয়। সে পুরাতন মামলার আসামী। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

https://www.dailysangram.info/post/539249